এক্সক্লুসিভ

কারাবন্দি স্বামীকে দেখতে এসে লাশ হলেন স্ত্রী

শিশু জুঁইয়ের দেখার কেউ নেই

এস আলম তুহিন, মাগুরা থেকে

২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

বাবা জেলে। মা নিহত। এক বছরের ছোট্ট মেয়ে জুঁই তার মাকে না পেয়ে শুধু কাঁদছে। বুঝতে পারছে না তার মা আর এ দুনিয়াতে নেই। তাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছে না। কোনো কিছুই সে খাচ্ছে না। মায়ের মমতা-স্নেহ ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত এ শিশুটির দায়িত্ব নেবে কে। কে তার দুঃখ ঘোচাবে?

মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের মাগুরা সার্কিট হাউজ এলাকায় ইজিবাইকের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লেগে মেয়েটির মা রেশমা খাতুনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। মাগুরা শহরের পিটিআই পাড়ার বাসিন্দা রেশমা খাতুন মঙ্গলবার বিকালে তার স্বামী মাদকসহ একাধিক মামলার আসামি রাব্বি হোসেনকে মাগুরা জেলখানায় দেখতে ইজিবাইকে করে  যাচ্ছিলেন। ইজিবাইকটি মাগুরা সার্কিট হাউজের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় রেশমার গলার ওড়না চাকার সঙ্গে জড়িয়ে নিচে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রেশমা খাতুনের এ মর্মান্তিক মৃত্যুতে তার পরিবার ও এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বর্তমানে শিশুটির দাদি চম্পা খাতুন জানান, আমার পরিবার খুবই দরিদ্র। দরিদ্রের কারণে আমার ছেলে রাব্বীকে পড়াশুনা করাতে পারি না। ফলে সে ছোট বেলা থেকে সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেছে। তার ভালোর জন্য আমি  অনেক চেষ্টা করে গেছি  কিন্তু সে ভালো হয়নি। শহরের অনেক ভালো ভালো দোকানে তাকে রেখেছি কাজ করার জন্য। কিন্তু সে তাও করেনি। পরে অনেকের পরামর্শে তাকে শালিখা উপজেলার আড়পাড়া শলই গ্রামে বিয়ে দিই। বিয়ের কিছুদিন পরই তার ঘর আলোকিত করে জন্ম নেয় ছোট্ট একটি কন্যা শিশু। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে সে। কিন্তু আমার ছেলে রাব্বী জড়িয়ে পড়ে সমাজের নানা অসঙ্গতিতে। মাদকসহ নানা মামলার আসামি হয়ে সে এখন জেলে।
অনেক আক্ষেপ করে তিনি বলেন, শিশু মেয়েটির দায়িত্ব এখন আমার। আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। আমার স্বামী আমার পরিবার দেখাশুনা করে না। সে অন্যত্র বিয়ে করে বাইরে বসবাস করছে। আর আমি অনেক কষ্ট করে সংসার চালাই। আমার ছোট্ট ৯ বছরের একটি ছেলে সন্তান আছে। তার নাম রাসেল। তাকে নিয়ে আমি যেমন স্বপ্ন দেখি ঠিক তেমনি এ মা-মরা মেয়েটিকে আমি তার মায়ের স্নেহ দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা  চালিয়ে যাচ্ছি।
 
অসুস্থ বাবাকে দেখতে এসে লাশ হলো শারমিন
স্টাফ রিপোর্টার, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, অসুস্থ বাবাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করে উন্নতি না হওয়ায় দুপুরের দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে মেডিকেলে জায়গা না হওয়ায় হার্টের রোগী নজরুল ইসলামের (৪৫) শ্যালিকা শাবানা (৪০) ও মেয়ে শারমিন (১১) রাত ৯টার সময় রংপুর সাতমাথা থেকে কুড়িগ্রামের উদ্দেশে সিএনজিতে যাত্রা করে। পথিমধ্যে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ি নামক এলাকায় কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকাগামি হিমেল পরিবহন সিএনজিটিকে ধাক্কা দিলে সেটি রাস্তা থেকে জমিতে ছিটকে পরে। সেখানেই মারা যায় শাবানা ও শারমিন। এ ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় সিএনজি। স্থানীয়রা শাবানাকে লালমনিরহাটে এবং শারমিনকে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে পাঠায়। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় কুড়িগ্রামে ২জন এবং লালমনিরহাটে ৩ জনসহ মোট ৫ জন মারা যায়। আহত হয় ৭ জন। মৃতদের সকলের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্তে এবং তারা সিএনজির যাত্রী। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে শারমিন ছাড়াও নাগেশ্বরী উপজেলার মন্দিরের খামার এলাকার আছমত আলীর পূত্র বাবু (১২) এর লাশ সংরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়াও লালমনিরহাটে মারা গেছে শারমিনের খালা শাবানা (৪০), ভুরুঙ্গামারীর আক্কাছ আলী ও নাগেশ্বরীর মাহাবুবুল হক। এখনো স্বজনরা মরদেহ নিয়ে যায়নি।
শারমিনের দাদু কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঠালবাড়ী শিবরাম এলাকার হাসমত আলী মাস্টার বলেন, আমার ছেলে নজরুল ইসলাম বুকে ব্যথা পেলে তাকে প্রথমে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রংপুরে রেফার্ড করে ডাক্তাররা। তার সঙ্গে স্ত্রী, সন্তান ও শ্যালিকাও যায়। রাতে রংপুর মেডিকেলে জায়গা না হওয়ায় তারা সিএনজি করে কুড়িগ্রামে ফিরতে গিয়ে দুর্ঘটনায় মারা যায়। এখনো অসুস্থ বাবা ও মা জানে না তাদের সন্তান এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজার রহমান জানান, মরদেহ পুলিশের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। স্বজনরা এলে বুঝিয়ে দেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status