এক্সক্লুসিভ

অগ্নিদুর্গতদের ঠাঁই তাঁবুতে মিলছে না বস্ত্র, জুটছে না খাবার

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রাম মহানগরীর চাক্তাই ভেড়ামার্কেটের বস্তিতে আগুনে সর্বহারা হয়েছে ২১৫ পরিবার ও ৯টি দোকান। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৫ কোটি টাকারও বেশি অর্থ-সম্পদ। আগুনে পুড়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে দুই পরিবারের ৭ জনসহ ৮ জনের।

অগ্নিকাণ্ডের একদিন পর এ তথ্য দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। অন্যদিকে বস্তিতে ঘটেছে চরম মানবিক বিপর্যয়। বস্তির সর্বহারা এসব পরিবারের মানুষ তাঁবু খাটিয়ে কোনোমতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছে। মিলছে না বস্ত্র। জুটছে না খাবার।

মঙ্গলবার সকালে সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় বস্তিজুড়ে খণ্ড খণ্ড তাঁবু। কেউ কেউ ঠাঁই নিয়েছে রাস্তায়। মানুষ দেখলেই পেছনে ছুটছে বস্তির শিশু-কিশোর ও নারী-পুরুষ।

এ সময় কথা হয় আলিউর রহমান (৫৭) নামে একজনের সঙ্গে। যিনি সারাদিনের উপার্জনের অর্থে পরিবার চালানো আর মাসশেষে বাসার ভাড়া পরিশোধে হিমশিম খেতেন অগ্নিকাণ্ডে সবকিছু হারানোর আগে।

তিনি বলেন, রোববার  ভোররাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে ঘরের সব জিনিসপত্র। কোনো রকমে জীবন বাঁচিয়েছি পরনের এক কাপড় নিয়ে। কিছুই বের করতে পারি নি। শেষ আশ্রয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে রাত কাটাচ্ছি খোলা আকাশের নিচে। আগুনে পরিবারের সদস্যদের আঁকড়ে ধরতে কাজে যেতে পারি নি। সিটি করপোরেশন তিনদিন খাবারের ব্যবস্থা করলেও রাতের খাবার জোটেনি। মিলেনি কোনো বস্ত্র। শীতের রাতে পরিবার পরিজন নিয়ে তাঁবু খাটিয়ে অনেক কষ্টে রাতযাপন করছি।

বস্তির একমাত্র হিন্দু ধর্মাবলম্বী অঞ্জু দাস বলেন, রোববার ও সোমবার অনেকে এসেছেন আমাদের সাহায্য করার জন্য। লুঙ্গি ও শাড়ি পেলেও আমার শিশুটির জন্য কোনো কাপড় পাইনি। ওর বাবা রিকশা চালাতে গেছে, তাই মেয়র নাকি টাকা দিয়েছে সেটাও পাননি। রাতে ঠাণ্ডার মধ্যে আমার বাচ্চাটা ঘুমাতে পারেনি। সঞ্চয় যা ছিল সব আগুনেই গেছে। তাই সাধ্যও নাই ছেলের জন্য জামা কিনবো। তার অভিযোগ, বিতরণের কাপড়-চোপড়, খাবার সামগ্রী কেউ পাচ্ছে, কেউ পাচ্ছে না।

ফরিদ কলোনির মালিক ফরিদ সওদাগর বলেন, এখানে মেয়র ও শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল সাহেব এসেছেন। কোনো তালিকা ছাড়া সবাইকে সাহায্য করেছেন। যার কারণে অনেকে তা পেয়েছেন, অনেকে পাননি। সোমবার দুপুরে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের খাবারের ব্যবস্থা আমি করেছি। আমার কলোনির যারা ছিল, তাদের বলেছি বাসা আবার ঠিক করে দেবো, তবে সময় লাগবে। রাস্তায় শুয়ে বিলাপ করছিলেন নাসির কলোনির বাসিন্দা আকলিমা (৩৮)। আকলিমা বলেন, দেড় হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় বস্তির একটি ঘরে থাকতাম। আগুনের রাতে কীভাবে বের হয়ে এসেছি নিজেও জানি না। ওই ঘরেই পুড়ে গেছে আমার সব সম্বল। এখন পরনের এক কাপড় ছাড়া থাকার জায়গাটাও আর নেই।

এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক পরিবার তাঁবু টাঙ্গিয়ে বসবাস করছে। অনেকে পার্শ্ববর্তী কলোনির বিভিন্ন কক্ষে আশ্রয় নিয়েছে। সহায়-সম্বল হারিয়ে নির্বাক হয়ে কোনো রকমে সন্তানাদি নিয়ে রাত কাটালেও চিন্তার ভাঁজ তাদের কপালে। কী হবে সামনের দিনগুলোতে!

রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নগরীর চাক্তাইয়ের রাজাখালী খাল সংলগ্ন ভেড়ামার্কেটের ৫টি বস্তি আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাই। এ সময় চোরের ভয়ে ঘরের ভেতরে তালা লাগিয়ে ঘুমাতে গিয়ে চাবি না পেয়ে বা তালা ভাঙতে না পেরে দুই পরিবারের ৭ জনসহ ৮ জন জীবন্ত পুড়ে মারা যায়।

তবে মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে বলেন, অগ্নিকাণ্ডে ৫টি বস্তির ২১৫ পরিবারের ৮৪৬ সদস্য ও ৯টি দোকানের মালিক সর্বহারা হয়েছে। এতে প্রায় ২৫ কোটি টাকারও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণহানি হয়েছে শিশুসহ ৮ জনের। এরমধ্যে এক পরিবারের ৪ জন, আরেক পরিবারের ৩ জন এবং অপর একটি পরিবারের একজনের প্রাণহানি ঘটে। যা খুবই মর্মান্তিক।

প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, আগুনের উৎস নিরূপণ করা এখনো সম্ভব হয়নি। উৎসের অনুসন্ধানে কাজ করছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি। কমিটির প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর সবকিছু জানতে পারবেন বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন বলেন, আগুনে নিহতদের দাফনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেকের পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন তিনদিনের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষা উপমন্ত্রী নতুন কাপড়-চোপড় বিতরণ করেছেন। বেসরকারিভাবেও বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে সঠিক সময়ে অনুপস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কেউ কেউ খাবার ও বস্ত্র পায়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।    

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সমপাদক সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দীন বলেন, যে কারণে এই দুর্ঘটনা, তা তদন্তসাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে পুনর্বাসন করতে হবে।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status