শেষের পাতা

‘বঙ্গবন্ধুর ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে’

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি অন্তর্ভুক্ত না করায় ইতিহাস বিকৃতি হয়েছে বলে মতামত দিয়েছে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটি। কমিটি একটি প্রতিবেদনে বলেছে বইয়ে জাতির পিতার ছবি অন্তর্ভুক্ত করা অত্যাবশ্যক ছিল। কিন্তু ছবি খুঁজে পাওয়া যায়নি এ যুক্তিতে তা বইতে না দেয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ও অনভিপ্রেত।

সোমবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে আজ মঙ্গলবার আদেশের দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার।

অর্থমন্ত্রণালয়ের অর্থবিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন চার সদস্যের কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন কমিটির তিন সদস্য অর্থমন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এবিএম রুহুল আজাদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মু. মোহসিন চৌধুরী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (আইন) স্মৃতি কর্মকার।

কমিটির কর্মপরিধি ছিল ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস’ বইয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি না ছাপিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস বিকৃত হয়েছি কি না এবং তদানীন্তন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি ছাপিয়ে ইতিহাস বিকৃত হয়েছে কি না তা অনুসন্ধান করা। কমিটি চার কার্যদিবস বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে বইটি প্রকাশনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি, সম্পাদনা কমিটি, গবেষণা ও পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন কমিটির সাক্ষাৎকার গ্রহণ, প্রশ্নমালার মাধ্যমে লিখিত বক্তব্য গ্রহণ এবং নথিপত্র যাছাই-বাছাই করেন।

কমিটিকে গভর্নর ফজলে কবির জানান, বইয়ের পাণ্ডুলিপি ২০১৬ সালের ১৬ই নভেম্বর অনুমোদন দেন। এরমধ্যে ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির অর্থ ফেরতের লক্ষ্যে তিনি ২৬ ও ২৭শে নভেম্বর ফিলিপাইনের ম্যানিলায় যান। ফলে তার পক্ষে বইটির পুঙ্খানুপুঙ্খ দেখা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তবে, ২০১৮ সালের ২৫শে মার্চ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে জাতির পিতার ছবি না থাকার বিষয়টি তার গোচরে আসলে তিনি তাৎক্ষণিক বই বিতরণ বন্ধ করেন। পরে ডেপুটি গভর্নরকে আহ্বায়ক করে রিভিউ কমিটি করে এটি পুনঃমুদ্রণের ব্যবস্থা নেন।

বইয়ের সম্পাদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (অব.) কমিটিকে লিখিত বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আলোকচিত্র সংগ্রহ করতে পারিনি। ব্যাংকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টবিহীন ছবি ব্যবহার করা যেত। কিন্তু বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কারো মনে আসেনি। সেটি সংশ্লিষ্ট সবার ভুল। অইয়ুব খান ও মোনায়েম খানের ছবি সংযোজন না করা শ্রেয় ছিল।

সবশেষে কমিটি তাদের মতামতে জানায় বইয়ের সম্পাদনা কমিটির কাজে অসঙ্গতি ছিল।

আইনজীবী এবিএম আলতাফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি উঠে এসেছে। শুনানিতে আদালত বলেছেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটি আমরাও দেখেছি। এ বিষয়ে আগামীকাল আদেশ ঘোষণা করা হবে।’

এর আগে গত ২রা অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকের বইয়ে ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে রিট করা হলে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তদন্ত করে অর্থ সচিবকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে বইটিতে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মোনায়েম খানের ছবি অন্তর্ভুক্ত করা হলেও জাতির পিতার ছবি অন্তর্ভুক্ত না করে ইতিহাস বিকৃতি করা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, নির্বাহী ব্যবস্থাপক এবং প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের ড. আবুল কালাম আজাদকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status