এক্সক্লুসিভ

যুক্তরাষ্ট্রে সফল বাংলাদেশি মিশা কাজ করতে চান দেশেও

নূর মোহাম্মদ

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:১৯ পূর্বাহ্ন

আফশীন মোজাম্মেল মিশা। ঢাকার স্কুল কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ নেয়ার পর উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। বিশ্বখ্যাত পারডিউ ইউনিভার্সিটি থেকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্সে কৃতিত্বপূর্ণ ফলে প্রস্তাব আসে ফুল ফেলোশিপে পিএইচডি করার। অন্যদিকে আসে চাকরির প্রস্তাব। যোগ দেন পয়েন্ট মেডিকেলে। এরপর যোগ দেন ভিস্তা ইন করপোরেশনে। বর্তমানে কোম্পানি পাল্টে ডেনসো ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির সিনিয়র প্রসেস ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে সফল মিশা কাজ করতে চান নিজেদের দেশের মানুষের জন্য। বিশেষ করে মা-বাবা আলাদা থাকেন এমন পরিবারের সন্তান যারা পরিবারের যত্ন পাচ্ছে না তাদের জন্য কাজ করার স্বপ্ন দেখছেন বাংলাদেশি এই তরুণী। নিজের সাফল্য ও ভবিষ্যৎ স্বপ্ন নিয়ে মিশা একান্তে কথা বলেছেন মানবজমিন-এর সঙ্গে। গুলশানে নিজের বাসায় বাবা-মায়ের পাশে বসেই মিশা বলছিলেন তার সাফল্যের কথা।
প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক ও সমাজসেবী নাসরিন মোজাম্মেল রুহির কন্যা মিশা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যারিয়ারের কথা বলতে গিয়ে বলেন, সেখানে তার সংগ্রামটা খুব সহজ ছিল না। তবে নির্দিষ্ট প্লাটফরমের মধ্যে থেকে পড়াশোনা করায় আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ইউনিভার্সিটিতে একসঙ্গে পড়েছি এবং পড়িয়েছি। পারডিউ ইউনিভার্সিটি প্রতি বছর সেরা তিনজনকে বিশেষ অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে। সেখানে একাডেমিক, এক্সট্রা কারিকুলাম, নেটওয়ার্কিং ইত্যাদি বিষয়গুলো মূল্যায়ন করা হয়। এরপর ইউনিভার্সিটি আমাকে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ করে। এরপর তিনমাস ইন্সট্রাক্টর হিসেবে পড়িয়েছি। এগুলো দেখেই তারা অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে। ডেনসো আমার পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট হয়ে বেশ কয়েকটি

 প্রোগ্রামের দায়িত্ব দেয়। এর মধ্যে কোম্পানির জুরি বোর্ডের আপিল কমিটির সদস্য, কোয়ালিটি সার্কেল সেফটি অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী, মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের বিল্ডিং লিড, অ্যাকটিভ মেম্বার উইম্যান নেটওয়ার্কিং, ডেনসো স্পিরিট ভাইস চেয়ার ২০১৮ এবং চেয়ার ২০১৯। এ ছাড়া জাম্পার পাইপ-এর ওপর ডেনসো কোর প্রকাশনায় আমার লেখা প্রকাশ করা।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ব্রোকেন ফ্যামিলির শিশুদের নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, অনেক শিশু আছে যারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়া, বিচ্ছেদসহ নানা কারণে শিশুরা এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় থাকে। ‘বিগ ব্রাদার্স বিগ সিস্টার’ নামে একটি ভলান্টিয়ার প্র্রতিষ্ঠানে আমি কাজ করি। করপোরেট স্যোশাল রেসপন্সিবিলিটির (সিএসআর) অংশ হিসেবে কোম্পানির এ কাজে আমাকে পছন্দ করেছে। আমি এ সংগঠনের একজন সদস্য। এ ছাড়াও ‘উইমেন্স নেটওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ নামে আরেকটি প্রোগ্রামের অ্যাকটিং মেম্বার হিসেবে কাজ করছি আমি। ‘বিগ ব্রাদার্স বিগ সিস্টার’ মূলত ব্রোকেন ফ্যামিলির শিশুসহ বিষণ্ন, হতাশাগ্রস্ত শিশুদের নিয়ে কাজ করে। এ কাজ করতে গিয়ে প্রচুর বাচ্চাদের সঙ্গে মিশেছি, তাদের সঙ্গে সময় ব্যয় করছি, দারুণ দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। ফ্যামিলির বিচ্ছিন্নতার কারণে অনেক বাচ্চা পড়াশোনায় অনিয়মিত হয়ে পড়ে। আমি তাদের গাইড করি। বড় হয়ে কী হতে চায়, কোনো বাচ্চার মধ্যে কী ধরনের প্রতিভা আছে সেগুলো খুঁজে বের করি। তাদের সেই জায়গাগুলো উন্নতির জন্য কাউন্সিলিং করি। এসব বাচ্চাদের সঙ্গে স্কুলে অনেক শিক্ষক খারাপ ব্যবহার করে। তখন তারা আরো বেশি এককেন্দ্রিক হয়ে যায়। যা কারও সঙ্গে শেয়ার করতে চায় না তারা। আমার কাছে ঠিকই শেয়ার করে। এক কথায় বন্ধুর মতো তাদের পাশে এসব শিশুদের মানসিক দিক উন্নতির চেষ্টা করি। নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের কারণে তাদের পড়াশোনার মনযোগ আসে, ঝগড়া, মানসিক বিষণ্নতা এবং হতাশা কমে আসে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠান গড়তে চাই। যেখানে শিশুদের বন্ধুর মতো করে কাউন্সিলিং করা হবে।

স্বপ্নে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাবা মা’র শখ ছিল আমি ইঞ্জিনিয়ার হবো। আমার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার দিকে খুব ঝোঁক ছিল না। ভিকারুননিসা থেকে এইচএসসি পড়ার পর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ-তে ভর্তি হই। বিবিএ শেষ করে গ্রামীণ ফোনের টেকনিক্যাল ডিভিশনের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে ২ বছর কাজ করে ফুল স্কলারশিপে চলে যাই যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মাস্টার্স করেছি। যে প্রডাক্টস তৈরিতে ১৫ মিনিট লাগে সেটি কীভাবে ১২ বা ১০ মিনিটে করা যায় সেটা নিয়ে আমি গত দুই বছর কাজ করেছি। গাড়ির জাম্পার পাইপ নিয়ে কোম্পানির একটি প্রজেক্ট নিয়ে দুই বছর গবেষণা করি এবং সফল হই। এতে কোম্পানির প্রতি বছর সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হয়েছে। তিনি বলেন, এ সেক্টর নিয়েও বাংলাদেশে কাজ করতে চাই।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status