বাংলারজমিন

কিশোরগঞ্জের দুই তরুণীকে রাজধানীতে নিয়ে হত্যা দুই ঘাতকের মৃত্যুদণ্ড

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

ঘটনাটি ২০০৮ সালের ১৬ই জুলাইয়ের। রহস্যজনকভাবে কিশোরগঞ্জ শহর থেকে নিখোঁজ হয় আফরোজা আক্তার সুমি (১৯) ও আফরোজা আক্তার ঊর্মি (১৯) নামের দুই কলেজ পড়ুয়া তরুণী। এরপর থেকেই তাদের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। উধাও হওয়ার ১৭ মাস পর ২০০৯ সালের ১৫ই ডিসেম্বর জানা গিয়েছিল, দুই তরুণীই খুন হয়েছে। মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০০৮ সালের ১৬ জুলাই কিশোরগঞ্জ জেলা পুলিশে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান ওরফে হলুদ ওরফে সুজন (৩৯) এবং চট্টগ্রামের লালখান বাজারের একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানের কর্মচারী শামীম হাওলাদার ওরফে জহির (৪৭)  দুই তরুণী আফরোজা আক্তার ঊর্মি ও আফরোজা আক্তার সুমিকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে কিশোরগঞ্জ থেকে রাজধানীর কাওরান বাজারের ওয়েস্টার্ন গার্ডেন হোটেলে নিয়ে যায়। সেদিন রাতেই তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে রাজধানীর কাওরান বাজারের হোটেল ওয়েস্টার্ন গার্ডেনের ৩০৬ ও ৩০৭ নং কক্ষে ওঠে। রাতেই দুই প্রেম প্রতারক হোটেল কক্ষে ঊর্মি এবং সুমিকে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে বাইরে থেকে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। গভীর রাতে দুই তরুণীর খুন হওয়ার বিষয়টি জানতে পেরে হোটেল কর্তৃপক্ষ ঝামেলা এড়াতে ঊর্মি ও সুমির লাশ দু’টি সব্জির ঝুড়িতে ভরে গুম করার পদক্ষেপ নেয়। পরে একটি ঝুড়ি মগবাজার হাতিরঝিলের পানিতে ফেলে দেয় এবং অপর ঝুড়ি তেজগাঁও রেলস্টেশনের পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। দীর্ঘ ১০ বছর ৭ মাস পর রোববার কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ চাঞ্চল্যকর দুই তরুণী ঊর্মি ও সুমী হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। বেলা পৌনে ৩টার দিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক কিরণ শংকর হালদার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ঘাতক পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান ওরফে হলুদ ওরফে সুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অপহরণের পৃথক ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। আরেক ঘাতক শামীম হাওলাদার ওরফে জহিরকে মৃত্যুদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং অপহরণের পৃথক ধারায় ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এছাড়া মামলার বাকি ছয় আসামি মো. দিলবর হোসেন (৩১), মোস্তফা মীর রানা (৪৪), আবুল হোসেন ওরফে আবুল (৪৭), বাবুল মিয়া (৫৪), জয়নাল আবেদীন (৩৮) এবং কবির হোসেন শান্ত (৩৪) কে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই ছয় আসামির সবাই হোটেল ওয়েস্টার্ন গার্ডেনের মালিক ও কর্মচারী। রায় ঘোষণার সময় আদালতে মো. দিলবর হোসেন, মোস্তফা মীর রানা এবং জয়নাল আবেদীন এই তিন আসামি উপস্থিত ছিল। মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামিসহ পাঁচ আসামি পলাতক রয়েছে। মৃতুদণ্ডে দণ্ডিত দুই আসামির মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল মনিরুজ্জামান ওরফে হলুদ ওরফে সুজন নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলার হাটবারেঙ্গা গ্রামের আব্দুস সোবহানের ছেলে এবং শামীম হাওলাদার ওরফে জহির ঝালকাঠি জেলার নলসিটির কাওখিড়া আমিরাবাদ গ্রামের ফজলে আলী হাওলাদারের ছেলে। এছাড়া দণ্ডিত বাকি ছয় আসামি হোটেল ওয়েস্টার্ন গার্ডেনের মালিক ও কর্মচারীদের মধ্যে মো. দিলবর হোসেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও এর উত্তর খংসারদী গ্রামের সালেহ মোহাম্মদের ছেলে, মোস্তফা মীর রানা সোনারগাঁও এর আমিনপুর গোয়ালদি গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদীন মীরের ছেলে, আবুল হোসেন আবুল নরসিংদী জেলার রায়পুরার মির্জাচরন গ্রামের মৃত সুরুজ মিয়ার ছেলে, বাবুল মিয়া সোনারগাঁও এর বাড়ী সোনারগাঁও মজলিস গ্রামের মৃত আব্দুল আজিজ প্রধানের ছেলে, জয়নাল আবেদীন নগর জোরার গ্রামের মো. মালেক মিয়ার ছেলে এবং কবির হোসেন শান্ত সোনারগাঁও পঞ্চবটি গ্রামের মো. আবুল হাশেমের ছেলে। অন্যদিকে নিহত দুই তরুণীর মধ্যে আফরোজা আক্তার সুমি শহরের গাইটাল পেট্রলপাম্প এলাকার বাসিন্দা সাবেক স্কুলশিক্ষক মো. আবু বাক্কারের মেয়ে এবং আফরোজা আক্তার ঊমি শহরের তারাপাশা এলাকার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো. নূরন্নবীর কন্যা। নিহত দুই তরুণী পরস্পরের বান্ধবী ছিল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status