বিশ্বজমিন

প্রকাশ্যেই ইউরোপকে ভর্ৎসনা করলেন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

বেশ প্রকাশ্যেই চিরাচরিত মিত্র ইউরোপের সমালোচনা করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। শনিবার ইরান ও ভেনেজুয়েলা ইস্যুতে ইউরোপীয় শক্তিধর দেশগুলোকে একহাত নেন তিনি। এছাড়া বৈশ্বিক সহযোগিতা প্রচেষ্টায় রাশিয়াকে অন্তর্ভূক্ত করতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের আহ্বানও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, জার্মানিতে অনুষ্ঠিত মর্যাদাপূর্ণ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিয়ে কড়া ভাষায় বক্তব্য রাখেন পেন্স। গতানুগতিক মিত্র ইউরোপের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক অবস্থান নিলেও, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলকে ‘অসাধারণ’ বলে প্রশংসা করেন তিনি। তিনি জ্যেষ্ঠ ইউরোপিয়ান ও এশিয়ান কর্মকর্তাদের প্রতি বলেন, ইরান পারমাণবিক চুক্তি পরিত্যাগে যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করা উচিৎ ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের। এছাড়া ভেনেজুয়েলার আইনসভার প্রধান হুয়ান গাইদোকে প্রেসিডেন্ট হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
পেন্স অনেকটা স্ব-প্রশংসার সুরে বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন শক্তিশালী। বিশ্বমঞ্চে ফের নেতৃত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।’ তিনি আফগানিস্তান থেকে উত্তর কোরিয়া পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির ‘সাফল্যের’ও বর্ণনা দেন।
খবরে বলা হয়, ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন ইউরোপিয়ান নেতারা। তারা বলছেন, তার বক্তব্য বিরক্তিকর ও সংহতিনাশক। এক্ষেত্রে তারা ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার প্রসঙ্গ উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন।
কিন্তু পেন্স থাকছেন তার প্রেসিডেন্টের পক্ষেই। পোল্যান্ডে এক সাম্প্রতিক সফরে গিয়ে পেন্স বৃটেন, জার্মানি ও ফ্রান্সের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ইরান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা নিষ্ক্রিয় করার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। এই চুক্তি থেকে ইউরোপের প্রস্থান করার দাবিও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি হিটলারের ইহুদী-নিধনযজ্ঞ বা হলোকাস্টের প্রসঙ্গও তোলেন। তার ভাষ্য, ‘ইরানি নেতারা প্রকাশ্যেই আরেকটি হলোকাস্টের কথা বলে আসছে। এই লক্ষ্য পূরণে তারা উপায় খুঁজছে।’ জার্মানি সফরে হিটলারের নাৎসি বন্দীশিবির ঘুরে দেখেন পেন্স। নিজের বক্তব্যে তিনি জোট হিসেবে ইউরোপিয় ইউনিয়নেরও সমালোচনা করেন।
তার এই বক্তব্যের সঙ্গে স্বাগতিক দেশের চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেলের অবস্থানের পার্থক্য ছিল ব্যাপক। মার্কেল রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছেন। মিউনিখে অবস্থানরত বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দকে বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করারও আহ্বান জানান তিনি।
পেন্সের পূর্বে বক্তব্য দিতে এসে মার্কেল প্রশ্ন তোলেন, ইরান পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ও সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার আদৌ তেহরানকে মোকাবিলার সর্বোত্তম পন্থা কিনা। তিনি রাশিয়া থেকে জার্মানিতে নির্মিতব্য নতুন প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের পক্ষে অবস্থান নেন। কিন্তু পেন্স ফের এর সমালোচনা করেন।
রাশিয়ান জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে রাশিয়ার হাতে জার্মানি জিম্মি বলে পূর্বে অভিযোগ করেছিলেন ট্রাম্প। তবে মার্কেলের যুক্তি, এমনকি শীতল যুদ্ধের সময়ও জার্মানি প্রচুর রাশিয়ান গ্যাস আমদানি করেছিল। আমি জানি না এখন সময় তার চেয়ে খারাপ হলো কীভাবে!
সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তর পর্বে মার্কেল বলেন, রাজনৈতিকভাবে রাশিয়াকে বর্জন করা হবে ভুল। তবে পেন্স বলছেন, ২০১৪ সালে ইউক্রেনের অংশবিশেষ দখলে নেওয়ায় রাশিয়াকে জবাবদিহির আওতায় আনছে ওয়াশিংটন। অপরদিকে মার্কেলের যুক্তি, ভৌগোলিক কারণে, রাশিয়ার সঙ্গে সব ধরণের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করার মধ্যে কোনো স্বার্থ নেই ইউরোপের।
জার্মানির সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের শীতল সম্পর্কের আরেকটি বিষয়বস্তু হচ্ছে জার্মানির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল বাণিজ্যিক ঘাটতি। ইউরোপের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি জার্মানি থেকে গাড়ি আমদানির ওপর শুল্ক বসানোরও হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। এ প্রসঙ্গে মার্কেল বলেন, জার্মানিতে নির্মিত গাড়ি নিয়ে আমরা গর্বিত। তবে অনেক গাড়িই যুক্তরাষ্ট্রে নির্মিত হয় ও পরে চীনে রপ্তানি করা হয়। যদি সেটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ‘নিরাপত্তা হুমকি’ হয়ে থাকে, তাহলে আমরা স্তম্ভিত।
পেন্স পরে জানান, মার্কেলের সঙ্গে বৈঠকে রাশিয়ার সঙ্গে নির্মিতব্য পাইপলাইন সহ সব ইস্যুতেই কথা হয়েছে। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমরা পূর্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পশ্চিমকে শক্তিশালী করতে পারবো না।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status