প্রথম পাতা
বিদায় সোনালী কাবিন-এর কবি
স্টাফ রিপোর্টার
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
সব মায়া পেছনে ফেলে চলে গেলেন সোনালী কাবিনের কবি আল মাহমুদ। নিজের পিতৃভূমিতে আজ চিরনিদ্রায় শায়িত
হবেন তিনি। গতকাল বাংলা একাডেমি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রিয় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ভক্ত অনুরাগীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামে। শহীদ মিনারে লাশ নেয়ার ইচ্ছা পরিবারের থাকলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল সমাধি কিংবা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের অনুমতি চেয়েও তা না পাওয়ায় পিতৃভূমি মৌড়াইলে দাফন করা হবে বলে কবিপুত্র শরীফ মাহমুদ জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আল মাহমুদের শ্রদ্ধানুষ্ঠান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে করার দাবি তুলেছিল বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, তা না হলে বোঝা যাবে, ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি ‘মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার কোনো মূল্য নেই সরকারের কাছে’।
দীর্ঘকাল সাংবাদিকতায় যুক্ত আল মাহমুদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠের সম্পাদক হয়েছিলেন। ওই সময় গ্রেপ্তার হয়ে আল মাহমুদকে কারাগারে যেতে হলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আবার তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে সহপরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। শহীদ মিনারে অনুমতি না মেলায় বেলা পৌনে ১২টায় বাংলা একাডেমিতে নেয়া হয় আল মাহমুদের মরদেহ; সেখানে নজরুল মঞ্চে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যানুরাগী ও ভক্তরা। সেখানে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি। জীবদ্দশায় একুশে পদকের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন আল মাহমুদ। আল মাহমুদের রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “জনগণ যখন একজন কবিকে বিবেচনায় নেন, একজন কবিকে কবি হিসেবে মানেন, তখন ধরে নিতে হয়, রাষ্ট্রও তাকে মেনে নিয়েছে। (কিন্তু) রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলে। শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাঁওজাল, হাসান মাহমুদ, কবি জাকির আবু জাফর, কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ, কবি সালেহীন শিপ্রা, কবি পিয়াস মজিদ, কবি সোহাগ সিদ্দিকী, কবি আবিদ আজম, শিশুসাহিত্যিক মামুন সারওয়ার প্রমুখ।
আল মাহমুদের সৃষ্টি নিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “আমরা যখন বাঙালিয়ানার কথা বলি, তার সঙ্গে যে মঙ্গলময়তা তার কথা যদি বলি, তখন কবি আল মাহমুদকে স্মরণ করতে হবে। পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতার বাঁকবদলেও আল মাহমুদের অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “মানবসভ্যতা বা বাংলা জনগোষ্ঠী নিয়ে কবি আল মাহমুদ যা রচনা করে গেছেন, তা মানবজাতির জন্য মূল্যবান আমরা বিবেচনা করি।” বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবির কফিন নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি জাকির আবু জাফর, চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বিএনপি নেতা আহম্মদ আজম খানসহ অনেকে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, “কবি আল মাহমুদ যে স্বপ্নের সমাজের কথা বলেছেন, তার অনুপস্থিতিতেও সে সমাজ বিদ্যমান থাকুক, আরো উজ্জ্বল হোক, এভাবেই তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, “তার অবয়ব বাংলা সাহিত্য অনন্তকাল অনুভব করবে।”
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে হয় কবির জানাজা। এর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে মৌড়াইলের উদ্দেশে রওনা হয় কবির কফিন।
১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই গ্রামটিতে মীর আবদুর রব ও রওশন আরার ঘরে জন্ম আল মাহমুদের। পৈতৃক নাম ছিল মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, কিন্তু কবি হিসেবে আল মাহমুদ নামেই পরিচিত হওয়ার পর ঢাকা পড়ে যায় তার পুরো নামটি।
কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ জানিয়েছেন, রোববার মৌড়াইল গ্রামে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবাকে সমাহিত করা হবে।
কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে বিএনপির শোক
বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে মরহুমের শোকাহত পরিবারবর্গের মতো আমিও সমব্যথী। দেশের একজন প্রতিভাবান কবি ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজনপ্রিয়। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে অগ্রগণ্য। কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তার ছিল অভূতপূর্ব বিচরণ। তিনি ছিলেন এই সময়ের প্রধান শক্তিশালী কবি। তিনি কাব্যগ্রন্থ রচনার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় নিবিড় পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অত্যাচারিত হয়েছেন তবু স্বৈরশাহীর রক্তচক্ষুকে গ্রাহ্য করেন নি। তার কাব্যের মধ্যে ছিল মানবপ্রেম, সৃষ্টিকর্তার প্রতি একনিষ্ঠ আত্মনিবেদন এবং জাতির ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতি নিবিড় সংশ্লিষ্টতা। দেশ ও দশের প্রতি অঙ্গীকারের তাগিদে তিনি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য দেশের মানুষের মনে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পিতা-মাতার পাশেই সমাহিত আল মাহমুদ
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক গোরস্তানে পিতা-মাতার পাশেই সমাহিত হবেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। আজ বাদ জোহর জেলা শহরের নিয়াজ মুহম্মদ হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তার নামাজে জানাজা। পরে দক্ষিণ মোড়াইল কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এখানেই তার। তার মৃত্যুর খবরে এখানকার বাড়িতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজনরা। তাকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায় অনেককে। আল মাহমুদ বাড়ির সবার কাছে পরিচিত ছিলেন পিয়ারু মিয়া নামে। পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।
তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
কবির ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন জানান- আল মাহমুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতেন। অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর তিনি একেবারেই আসেননি। বাড়িতে এলে ভক্ত ও ঘনিষ্ঠরা ভিড় জমাতেন। তাদের সঙ্গে গল্প করেই সময় কাটিয়ে দিতেন। দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন।
আল মাহমুদের ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আরো আগে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়। রব্বান আরো জানান, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। আল- মাহমুদের স্মৃতিচারণ করে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মুহাম্মদ মুসা বলেন, একসঙ্গে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি ৫২ সালে। তার হাত ধরেই আমি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেই। আমাদের মোড়াইল এলাকায় খেলাধুলার বেশ প্রচলন ছিলো। বিশেষ করে ফুটবল। তার মামা মহারাজ মিয়া ছিলেন ভারত বিখ্যাত ফুটবলার। কিন্তু মাহমুদ খেলাধুলা করতেন না। বই পড়ার দিকেই মনোযোগ ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘উপমহাদেশ’। ‘কাবিলের বোন’ বই লেখার পর তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি দেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আসলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন।
হবেন তিনি। গতকাল বাংলা একাডেমি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রিয় কবিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ভক্ত অনুরাগীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে তার লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মৌড়াইল গ্রামে। শহীদ মিনারে লাশ নেয়ার ইচ্ছা পরিবারের থাকলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি বলে জানানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরুল সমাধি কিংবা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফনের অনুমতি চেয়েও তা না পাওয়ায় পিতৃভূমি মৌড়াইলে দাফন করা হবে বলে কবিপুত্র শরীফ মাহমুদ জানিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আল মাহমুদের শ্রদ্ধানুষ্ঠান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে করার দাবি তুলেছিল বিএনপি। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছিলেন, তা না হলে বোঝা যাবে, ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি ‘মুক্তিযোদ্ধা হলেও তার কোনো মূল্য নেই সরকারের কাছে’।
দীর্ঘকাল সাংবাদিকতায় যুক্ত আল মাহমুদ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর জাসদের মুখপত্র গণকণ্ঠের সম্পাদক হয়েছিলেন। ওই সময় গ্রেপ্তার হয়ে আল মাহমুদকে কারাগারে যেতে হলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই আবার তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে সহপরিচালক পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। শহীদ মিনারে অনুমতি না মেলায় বেলা পৌনে ১২টায় বাংলা একাডেমিতে নেয়া হয় আল মাহমুদের মরদেহ; সেখানে নজরুল মঞ্চে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানান কবি, সাহিত্যিক, সাহিত্যানুরাগী ও ভক্তরা। সেখানে মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর নেতৃত্বে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি। জীবদ্দশায় একুশে পদকের পাশাপাশি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও পেয়েছিলেন আল মাহমুদ। আল মাহমুদের রাষ্ট্রীয় সম্মান না পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জাতীয় কবিতা পরিষদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “জনগণ যখন একজন কবিকে বিবেচনায় নেন, একজন কবিকে কবি হিসেবে মানেন, তখন ধরে নিতে হয়, রাষ্ট্রও তাকে মেনে নিয়েছে। (কিন্তু) রাষ্ট্রযন্ত্র নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চলে। শ্রদ্ধা নিবেদনে অংশ নেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক আনজীর লিটন, আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, কবি আবদুল হাই শিকদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শংকর সাঁওজাল, হাসান মাহমুদ, কবি জাকির আবু জাফর, কবি আলতাফ শাহনেওয়াজ, কবি সালেহীন শিপ্রা, কবি পিয়াস মজিদ, কবি সোহাগ সিদ্দিকী, কবি আবিদ আজম, শিশুসাহিত্যিক মামুন সারওয়ার প্রমুখ।
আল মাহমুদের সৃষ্টি নিয়ে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, “আমরা যখন বাঙালিয়ানার কথা বলি, তার সঙ্গে যে মঙ্গলময়তা তার কথা যদি বলি, তখন কবি আল মাহমুদকে স্মরণ করতে হবে। পঞ্চাশের দশকে বাংলা কবিতার বাঁকবদলেও আল মাহমুদের অবদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, “মানবসভ্যতা বা বাংলা জনগোষ্ঠী নিয়ে কবি আল মাহমুদ যা রচনা করে গেছেন, তা মানবজাতির জন্য মূল্যবান আমরা বিবেচনা করি।” বাংলা একাডেমিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কবির কফিন নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি জাকির আবু জাফর, চলচ্চিত্রকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার, বিএনপি নেতা আহম্মদ আজম খানসহ অনেকে। অধ্যাপক এমাজউদ্দীন বলেন, “কবি আল মাহমুদ যে স্বপ্নের সমাজের কথা বলেছেন, তার অনুপস্থিতিতেও সে সমাজ বিদ্যমান থাকুক, আরো উজ্জ্বল হোক, এভাবেই তার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, “তার অবয়ব বাংলা সাহিত্য অনন্তকাল অনুভব করবে।”
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে হয় কবির জানাজা। এর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকাররমে। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা শেষে মৌড়াইলের উদ্দেশে রওনা হয় কবির কফিন।
১৯৩৬ সালের ১১ই জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই গ্রামটিতে মীর আবদুর রব ও রওশন আরার ঘরে জন্ম আল মাহমুদের। পৈতৃক নাম ছিল মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ, কিন্তু কবি হিসেবে আল মাহমুদ নামেই পরিচিত হওয়ার পর ঢাকা পড়ে যায় তার পুরো নামটি।
কবির বড় ছেলে শরীফ মাহমুদ জানিয়েছেন, রোববার মৌড়াইল গ্রামে তৃতীয় দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার বাবাকে সমাহিত করা হবে।
কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে বিএনপির শোক
বাংলাভাষার অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বিএনপি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি আল মাহমুদের মৃত্যুতে মরহুমের শোকাহত পরিবারবর্গের মতো আমিও সমব্যথী। দেশের একজন প্রতিভাবান কবি ও সাংবাদিক হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজনপ্রিয়। তিনি সমকালীন বাংলা ভাষার লেখকদের মধ্যে অগ্রগণ্য। কবিতা, ছোট গল্প, উপন্যাসসহ সাহিত্যের নানা অঙ্গনে তার ছিল অভূতপূর্ব বিচরণ। তিনি ছিলেন এই সময়ের প্রধান শক্তিশালী কবি। তিনি কাব্যগ্রন্থ রচনার পাশাপাশি সাংবাদিকতায় নিবিড় পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করেছেন। দায়িত্ব পালনকালে তিনি অত্যাচারিত হয়েছেন তবু স্বৈরশাহীর রক্তচক্ষুকে গ্রাহ্য করেন নি। তার কাব্যের মধ্যে ছিল মানবপ্রেম, সৃষ্টিকর্তার প্রতি একনিষ্ঠ আত্মনিবেদন এবং জাতির ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতি নিবিড় সংশ্লিষ্টতা। দেশ ও দশের প্রতি অঙ্গীকারের তাগিদে তিনি আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য দেশের মানুষের মনে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
পিতা-মাতার পাশেই সমাহিত আল মাহমুদ
স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পারিবারিক গোরস্তানে পিতা-মাতার পাশেই সমাহিত হবেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদ। আজ বাদ জোহর জেলা শহরের নিয়াজ মুহম্মদ হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হবে তার নামাজে জানাজা। পরে দক্ষিণ মোড়াইল কবরস্থানে দাফন করা হবে তাকে। শৈশব ও কৈশোর কেটেছে এখানেই তার। তার মৃত্যুর খবরে এখানকার বাড়িতে ছুটে আসেন আত্মীয়স্বজনরা। তাকে নিয়ে নানা স্মৃতিচারণ করতে দেখা যায় অনেককে। আল মাহমুদ বাড়ির সবার কাছে পরিচিত ছিলেন পিয়ারু মিয়া নামে। পুরো নাম মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ।
তার পিতার নাম মীর আবদুর রব ও মাতার নাম রওশন আরা মীর। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়।
কবির ভাতিজা মীর রব্বান হোসেন জানান- আল মাহমুদ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে মাঝেমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতেন। অসুস্থতাজনিত কারণে গত কয়েক বছর তিনি একেবারেই আসেননি। বাড়িতে এলে ভক্ত ও ঘনিষ্ঠরা ভিড় জমাতেন। তাদের সঙ্গে গল্প করেই সময় কাটিয়ে দিতেন। দিনের বেশির ভাগ সময় বসে থাকতেন বাড়ির সামনের পুকুর ঘাটে। বড়শি দিয়ে মাছও শিকার করতেন।
আল মাহমুদের ছোট ভাই মীর ফরহাদ হোসেন মারা গেছেন আরো আগে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় কবি আল মাহমুদের পৈতৃক ভিটা আছে কিন্তু নিজের ঘর নেই। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যখন আসতেন, উঠতেন ছোট ভাইয়ের বাসায়। রব্বান আরো জানান, কাকার পৈতৃক ভিটায় আগের দিনের একটি চৌচালা ঘর ছিল। যখন উনি আসতেন ওই ঘরে অবস্থান করতেন। ঘরটি ভেঙে এখন ভবন করা হয়েছে। আল- মাহমুদের স্মৃতিচারণ করে তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী মুহাম্মদ মুসা বলেন, একসঙ্গে আমরা ভাষা আন্দোলন করেছি ৫২ সালে। তার হাত ধরেই আমি কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেই। আমাদের মোড়াইল এলাকায় খেলাধুলার বেশ প্রচলন ছিলো। বিশেষ করে ফুটবল। তার মামা মহারাজ মিয়া ছিলেন ভারত বিখ্যাত ফুটবলার। কিন্তু মাহমুদ খেলাধুলা করতেন না। বই পড়ার দিকেই মনোযোগ ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পররাষ্ট্র দপ্তরে চাকরি করতেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার বিখ্যাত উপন্যাস ‘উপমহাদেশ’। ‘কাবিলের বোন’ বই লেখার পর তাকে জেলে প্রেরণ করা হয়। পরে বঙ্গবন্ধু তাকে জেল থেকে মুক্ত করে শিল্পকলা একাডেমিতে চাকরি দেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে আসলে আমাকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন।