শেষের পাতা

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা তুঙ্গে, সীমান্ত থমথমে

মানবজমিন ডেস্ক

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন তুঙ্গে পৌঁছেছে। আবারো পারমাণবিক শক্তিধর এ দুটি দেশের মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার পালওয়ামায় হামলায় ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর ৪৪ সদস্য নিহত হওয়ার পর এমন অবস্থা বিরাজ করছে। ভারত এর প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এ অবস্থায় নিয়ন্ত্রণ রেখা ও ওয়ার্কিং বাউন্ডারি বরাবর সেনাবাহিনীকে উচ্চ সতর্কতায় রেখেছে পাকিস্তান। পাশাপাশি তারা কূটনৈতিক উপায়েও অগ্রসর হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ওই হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জৈশ-ই-মোহাম্মদী। এ হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের দিকে আঙ্গুল তুলেছে ভারত। এমন অবস্থায় ভারতীয় প্রচারণার প্রতিবাদ জানাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ৫ সদস্য দেশের কাছে গিয়েছে পাকিস্তান। ভারতে বিরাজ করছে তীব্র ক্ষোভ। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তাদের নিয়মিত সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে এ বিষয়ে ব্রেকিং খবর প্রচার করছে।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের পাকিস্তানি সংস্করণ এক্সপ্রেস ট্রিবিউনে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, বৃটেন ও ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ সময়ে তাদেরকে অবনতিশীল পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রিফ করেন সচিব। তেহমিনা  জানজুয়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করছে ভারত তা দৃঢ়তার সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করেন।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরে একটি বিবৃতি দেয়া হয়েছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানকে দায়ী করার বিষয় ওই রাষ্ট্রদূতদের কাছে তুলে ধরেন তেহমিনা জানজুয়া। এ সময় তিনি বলেন, ভারতের প্রতি গঠনমূলক অবস্থান পাকিস্তানের। এক্ষেত্রে প্রমাণ হিসেবে কর্তারপুর সীমান্ত খোলা নিয়ে সংলাপ ও উদ্যোগের বিষয়ে খোলমেলা কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হলে তার বিপরীত ফল আসতে পারে।

পাকিস্তানের কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বৃহস্পতিবার ওই ভয়াবহ হামলার পর সীমান্ত অতিক্রম করে যাতে কোনো ‘মিস অ্যাডভেঞ্চার’ চালাতে না পারে কেউ সে জন্য নিয়ন্ত্রণ রেখা ও ওয়ার্কিং বর্ডারে সেনাবাহিনীকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রেখেছে পাকিস্তান।

বৃহস্পতিবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে প্রধান মহাসড়কে ওই হামলা হয়। তিন দশকের মধ্যে এটাই ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। ওই হামলার পর দ্রুততার সঙ্গে পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। ঘটনার পর পরই আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাতে ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনারকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ভারত। তবে ভারতের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে পাকিস্তান। ইসলামাবাদ বলেছে, কাশ্মীরে বড় কোনো সহিংসতার বিরুদ্ধে সব সময়ই তারা নিন্দা জানিয়ে আসছে। ভারত সরকার মনে করে পালওয়ামা হামলায় জড়িত ইসলামাবাদ। ভারত সরকারের এ ধরনের মানসিকতার কড়া প্রতিবাদ জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয় পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে।

সূত্রগুলো বলেছেন, অবনতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে পাকিস্তানি পররাষ্ট্র সচিব তেহমিনা জানজুয়ার সঙ্গে তার অফিসে সাক্ষাৎ করেছেন পাকিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত। আগেই পালওয়ামা হামলার নিন্দা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। পাশাপাশি অবিলম্বে পাকিস্তানের মাটিতে কর্মকাণ্ড চালানো সব সন্ত্রাসী গ্রুপকে সমর্থন ও নিরাপদ আশ্রয় বন্ধ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে পাকিস্তানের প্রতি।

পাকিস্তানের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেছেন, পরিস্থিতির দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখছে পাকিস্তান। সীমান্তের অন্যপাড় থেকে যদি কোনো রকম প্ররোচনা দেয়া হয় তাহলে কি করা হবে তা নিয়ে সামরিক ও বেসামরিক নেতারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পাকিস্তান সফরের পর আগামী সপ্তাহে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।  

ওদিকে শুক্রবার উচ্চ পর্যায়ের একটি নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় পালওয়ামা হামলার নেপথ্যে যারা তাদেরকে শাস্তি ভোগ করার হুমকি দিয়েছেন তিনি। ভারতের মিডিয়ায় এ নিয়ে বিভিন্ন অপশন নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে গোয়েন্দাভিত্তিক অপারেশনের কথা বলা হয়েছে। সামরিক অভিযান বাদে মোদি প্রশাসন পাকিস্তানকে সারাবিশ্বে নিঃসঙ্গ করে দেয়ার কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের কথা বলেছে। মোস্ট ফেভারড নেশন টু পাকিস্তান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status