এক্সক্লুসিভ

চিঠি ফেরাতে তাদের চেষ্টা (ভিডিও)

মারুফ কিবরিয়া

১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন

মায়ের কাছ থেকে ছেলে দূরে। জীবিকার তাগিদে স্ত্রীর থেকেও স্বামী পড়ে থাকতেন বিদেশে। মা অপেক্ষায় থাকতেন ডাক পিওনের। ছেলের চিঠি আসবে বলে। একই অপেক্ষার প্রহর গুনতেন একসময় সেই বিদেশে থাকা স্বামী-স্ত্রীও। বাড়ির পাশ দিয়ে ডাক পিওন হেঁটে যেতেই জানতে চাইতেন তার স্বামীর কোনো চিঠি আছে কিনা। প্রিয়জনের চিঠির অপেক্ষা এখন আর কেউ করেন না। এসএমএস, ম্যাসেঞ্জার, ইমো ভাইবার আর হোয়াটস অ্যাপের যুগে মুহূর্তেই মিলছে প্রিয়জনের খোঁজখবর। যোগাযোগ মাধ্যমের এই সহজতম সময়ে চিঠির প্রচলন একেবারেই হারিয়ে যাওয়ার পথে। দেশের ডাকঘরগুলো এখন চিঠিশূন্যই বলা চলে। সরকারি দাপ্তরিক পত্র আদান-প্রদানের ক্ষেত্রেই টুকটাক চিঠি ব্যবহৃত হয়।

তবে এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই যোগাযোগ মাধ্যম চিঠিকে ফেরাতে বিশেষ আয়োজন নিয়ে হাজির হয়েছে মার্ক এইট কমিউনিকেশন্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ‘চিঠি ফিরে আসুক’ এমন স্লোগানে প্রতিষ্ঠানটি করছে ক্যাম্পেইনও। গত ১০ই ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এই ক্যাম্পেইন। আয়োজকরা জানান, ভাষা দিবসকে সামনে রেখেই মূলত তাদের এই আয়োজন। হারিয়ে যাওয়া চিঠির ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে আগামী ১৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চালিয়ে যাবেন তারা। এই ক্যাম্পেইনে মানুষের চিঠি লেখার অভ্যাসকে জাগ্রত করাই তাদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন মার্ক এইটের কর্মকর্তারা।  
 

ঢাকার আজিমপুর, হাতিরঝিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মগেটসহ অন্তত ৩০টির বেশি স্থানে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন চলছে। বেশ কয়েকটি বুথ ঘুরে দেখা গেছে, আয়োজকরা চিঠি লেখার অভ্যাস তৈরিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করছেন। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবার ফিরিয়ে আনতেও বলছেন সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে। শুধু তাই নয়, ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে তারা কেউ আগ্রহ প্রকাশ করলে তাৎক্ষণিকভাবে চিঠি লিখে দেয়ার ব্যবস্থাও তারা করছেন। আর সেটা ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রাপকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়ার দায়িত্বটিও আয়োজককারী প্রতিষ্ঠান পালন করছেন।

চিঠি নিয়ে এমন আয়োজন দেখে অনেককে বেশ আগ্রহ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। অনেককে চিঠি লিখতে গিয়ে বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে উঠতেও দেখা গেছে। রাজধানীর আজিমপুরের বুথে গিয়ে দেখা যায়, সকাল নয়টা থেকে ক্যাম্পেইনে কাজ করছেন দুই তরুণ। সেখানে ছোট একটি টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে কিছু লেখার ‘প্যাড’, কলম ও বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেই চিরচেনা হলুদ খাম। সামনে বড় করে পোস্টার সাঁটানো। তাতে লেখা রয়েছে ‘ফিরে আসুক চিঠি’। পথচারী যারাই যাচ্ছেন তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণকারীরা।  এক্ষেত্রে এড়িয়ে যেতেও কাউকে তেমন দেখা যায়নি। আগ্রহের সঙ্গে কাছে এসে চিঠির ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জানছেন। যাদের তাৎক্ষণিকভাবে ঠিকানা মনে পড়েছে তারা সঙ্গে সঙ্গেই প্রিয়জনকে কিছু একটা লিখে চিঠি পাঠান। এমন আয়োজনকে কেউ কেউ অভূতপূর্ব বলেও প্রশংসা করেছেন।

আজিমপুরের নাজনীন আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, নিউমার্কেট যাচ্ছিলাম এই পথ ধরেই। যাওয়ার পথেই দেখলাম ‘ফিরে আসুক চিঠি’। কৌতূহলবশত এগিয়ে গিয়ে দেখতে পাই, এরা হারিয়ে যাওয়া চিঠি নিয়ে কাজ করছেন। এটা দারুণ একটা উদ্যোগ।  আমরা তো ম্যাসেঞ্জার আর ইমুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। চিঠি শেষ কবে লিখেছি ভুলেই  গেছি। মা চট্টগ্রাম থাকার কারণে আগে প্রায়ই চিঠি লিখতাম। কিন্তু দিন দিন যোগাযোগের মাধ্যম সহজ হয়ে যাওয়ায় আর চিঠি লেখা হয়ে উঠেনি। আমার কাছে এই আয়োজনটি বেশ ভালো লেগেছে। আমাদের উচিত নিয়মিত চিঠি লেখা। প্রিয়জনকে চিঠি দেয়া। শাহিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি জানি না চিঠি কীভাবে লিখতে হয়। কারণ আমি সেই সময়টি পাইনি। বড় হয়ে দেখেছি এসএমএস, এখন তো ম্যাসেঞ্জারেই প্রতি মুহূর্তে ‘আপডেট’ পাওয়া যাচ্ছে। তবে চিঠি সম্পর্কে জানি। আমাদের প্রজন্মের উচিত এই ঐতিহ্যকে ধারণ করে এগিয়ে চলা। কাছের মানুষদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ইমোতে করলেও মাসে অন্তত একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রচলনটা ধরে রাখতে হবে। এই ক্যাম্পেইনটা আমাদের আবার মনে করিয়ে দিলো ঐতিহ্য কখনো নষ্ট বা হারিয়ে যায় না। চাইলেই অনেক কিছু করা সম্ভব হয়। হাতিরঝিলে ক্যাম্পেইন দেখতে আসা ইশরাত জাহান নামের এক তরুণী বলেন, কখনো চিঠি লিখিনি।

আত্মীয়স্বজনদের কারো বাসার ঠিকানা সম্পূর্ণভাবে জানি না। তবে এই ক্যাম্পেইন দেখে চিঠি লিখতে খুব ইচ্ছা করছিল। অবশ্য পরে নিজের বাসার ঠিকানায় একটি চিঠি লিখে পাঠিয়ে দিয়েছি। অন্যরকম এক ভালোলাগা কাজ করছে। যা সারাদিন মোবাইলের ম্যাসেঞ্জারে লিখেও কাজ করে না।

এ প্রসঙ্গে আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান মার্কএইট কমিউনিকেশনসের সিওও নাজমুল হকের সঙ্গে কথা হলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, চিঠি লেখার হারানো ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের এই উদ্যোগ। ফেব্রুয়ারি মাস যেহেতু ভাষার মাস তাই আমরা এখনই এই ক্যাম্পেইন করছি। গত বছর খুব ছোট্ট পরিসরে করেছিলাম। সেই ধারাবাহিকতায় এবার এটাকে বড় করে করার একটা পরিকল্পনা করেছি। আমাদের সঙ্গে এই কাজটিতে সঙ্গী হয়েছে গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। তারাই মূলত এই আয়োজনের মূল পৃষ্ঠপোষক। ১৯শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পেইনটা চলবে। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে সবাই আবার চিঠি লেখার পুরনো অভ্যাসটি গড়ে তুলবেন। প্রিয়জনকে চিঠি লিখবেন।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status