শেষের পাতা

উপজেলা নির্বাচন

সিলেটে মাঠ ছাড়ছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীরা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:৫৬ পূর্বাহ্ন

উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিলেট আওয়ামী লীগের তৃণমূলে তুমুল বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। তফসিল ঘোষিত ১২ উপজেলার নির্বাচনে এক বা একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহী হওয়ার আভাস দিয়েছেন। তারা দলের মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। জেলার সিনিয়র নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির নির্বাচনে না আসায় দলের মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থী হলেও দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। বরং যে প্রার্থীই জিতবে সে হবে আওয়ামী লীগেরই। এ কারণে আপাতত বিদ্রোহের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন না তারা। তবে ভোট প্রচারণায় তারা নৌকার পক্ষে একাট্টা হয়ে মাঠে নামবেন।

সিলেটের ১২টি উপজেলায় ইতিমধ্যে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে তারা মনোনয়ন নিয়েও এসেছেন। আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারি শেষ দিন তারা সবাই মনোনয়ন দাখিল করবেন। কিন্তু হাতে সময় পাওয়ায় বঞ্চিতরাও মাঠ ছাড়ছেন না। তারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। সিলেট সদরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আশফাক আহমদ। তার সঙ্গে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক ও জেলা শ্রমিক লীগ সভাপতি এজাজ আহমদ। শেষ মুহূর্তে সুজাত আলী রফিক পিছিয়ে গেলেও এখনো অনঢ় অবস্থানে আছেন জেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি এজাজ আহমদ। তিনি  বোঝাপড়ায় ব্যস্ত রয়েছেন। প্রকৌশলী এজাজ আহমদ নির্বাচনে প্রার্থী হলে সুজাত আলী রফিক বলয়ের সমর্থন পাবেন।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম। তার চেয়ে ওই উপজেলায় শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা হাজী শামীম আহমদ। কিন্তু আওয়ামী লীগ গতবারের পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমকেই মনোনয়ন দিয়েছে। তবে নিজের ফেসবুক স্ট্যাটাসে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন হাজী শামীম আহমদ। বর্তমানে এ উপজেলায় চেয়ারম্যান শামীমের পিতা আব্দুল বাছির। পিতার সাজানো মাঠে শামীম প্রার্থী হতে বিগত ৫ বছর ধরে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি তার অবস্থানও শক্তিশালী করে ফেলেছেন। শামীম আহমদ জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। এতে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে একটি অংশের। তারা গত কয়েক দিন ধরে নানাভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জের মানুষ জানে আমি তাদের কতটুকু হৃদয়ে আছি।

গোয়াইনঘাটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া হেলাল। এ উপজেলায় প্রার্থিতা চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। কিন্তু ফারুক আহমদ ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হতে পারেন। জৈন্তাপুরে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী লিয়াকত আলীকে ছাড় দিতে নারাজ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি কামাল আহমদ। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি বিভিন্ন স্থানে বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছেন। কামাল আহমদ জানিয়েছেন, তিনি পরপর কয়েক বারের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হওয়ার কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। এলাকার মানুষ তাকে প্রার্থী চায়। এ কারণে তিনি এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি চালাচ্ছেন। গতবারও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অল্প ভোটে পরাজিত হন।

কানাইঘাটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কৃষকলীগে নেতা আব্দুল মুমিন চৌধুরী। কিন্তু এ উপজেলায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের উপপ্রচার সম্পাদক মোস্তাক আহমদ পলাশের অবস্থান ভালো। তিনি বিগত ৫ বছর ধরে এই উপজেলায় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাফিজ আহমদ মজুমদারকে ছাড় দেওয়ায় মনোনয়ন প্রাপ্তিতে অনেকখানি সুবিধা জনক অবস্থানে পৌঁছে যান মুমিন চৌধুরী। মোস্তাক আহমদ পলাশও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে আতাউর রহমান খানকে। তিনি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান। কিন্তু তার সঙ্গে বিদ্রোহী হতে যাচ্ছেন আবুল কাশেম পল্লব, জাকির হোসেন, শামীম আহমদ, ময়েজ শেঠ। আবুল কাশেম পল্লব গতবার বিদ্রোহী ছিলেন। চারজনের মধ্যে দুজন বিদ্রোহী হচ্ছেনই এ উপজেলায়।

সিলেটের গোলাপগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী। তিনিও এবার ছাড় পাচ্ছেন না। তার সঙ্গে বিদ্রোহী হতে যাচ্ছেন সাবেক চেয়ারম্যান কবির আহমদ। বাঘাসহ রিভার বেল্ট এলাকায় কবির আহমদের ভোট ব্যাংক রয়েছে। ফেঞ্চুগঞ্জে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতা সাংবাদিক শাহ মুজিবুর রহমান জকন। তবে এ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিশ্বনাথে উপজেলার প্রার্থী হয়েছেন এসএম নুনু মিয়া, বালাগঞ্জে মোস্তাকুর রহমান মফুর ও দক্ষিণ সুরমায় আবু জাহিদ। তাদের সঙ্গে এখন পর্যন্ত কোনো বিদ্রোহী প্রার্থীর নাম শোনা যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status