শেষের পাতা
বিশ্ব ইজতেমা শুরু আজ
এমএ হায়দার সরকার, টঙ্গী থেকে
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন
তাবলীগ জামাতের বাৎসরিক মহাসমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু আজ। শীত কম, আবহাওয়া ভালো থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাস-ট্রাক, ট্রেন ও লঞ্চযোগে দেশ-বিদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ
মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হচ্ছেন। এবার পুরো মাঠকে ৫০ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলাওয়ারি তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা তাদের খিত্তায় বুধবার থেকে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। গতকাল সারাদিনই দলে দলে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সারা দেশর ধর্মপ্রাণ মানুষের স্রোত এখন টঙ্গী অভিমুখে। মানুষের এ স্রোত আখেরি মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছর ৩দিন করে দুই দফায় হলেও এবারই ২দিন করে বিরতিহীনভাবে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ওলামা-মাশায়েখ তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে প্রথমপর্বে আগত মুসল্লিরা রাতের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ই ফেব্রুয়ারি রোববার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্নের পূর্বে যে কোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুই পর্ব ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
এ সমাবেশে আগত মুসল্লিদের জন্য টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর খোলা জমিনের ওপর পাটের চট দিয়ে সুবিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তাবলীগ জামাতের এ মিলন মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও এবারের ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১৫-২০ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৮৫টি দেশের প্রায় ১ হাজার বিদেশি মেহমান ময়দানের তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিদেশি নিবাসের জিম্মাদার ও মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আজ দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ইজতেমা ময়দানে।
ইজতেমাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মো. ওয়াইএম বেলালুর রহমান জানান, এবারের বিশ্বইজতেমায় প্রচলিত নিরাপত্তার ব্যবস্থার বাইরে ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে কোনো নাশকতা রোধে পুলিশের সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। র্যাব, মেট্রোপুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, শিল্পপুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ও সাদা পোশাকে দুই পর্বের ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রায় বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবেন।
তিনি জানান, টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, মুন্নু গেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদীসহ পুরো এলাকাকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি সেক্টরে দুইজন পুলিশ সুপারের মর্যাদায় অফিসারের নেতৃত্ব আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে থাকবে চেক পোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, ইজতেমা এলাকার প্রতিটি প্রবেশ পথ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, খিত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। প্রথমপর্বে খিত্তাওয়ারী মুসল্লিদের অবস্থান: এ বছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- গাজীপুর (খিত্তা নং-১), টঙ্গী-১-৩ (খিত্তা নং-২, ৩, ৪), মিরপুর-১, ২ (খিত্তা নং-৫, ৬), সাভার-১, ২ (খিত্তা নং-৭, ৮), মোহাম্মদপুর (খিত্তা নং-৯), ডেমরা (খিত্তা নং-১০), কেরানীগঞ্জ-১, ২ (খিত্তা নং-১১, ১২), কাকরাইল-১-৭ (খিত্তা নং-১৩-১৯), রাজশাহী (খিত্তা-২০ এর ক), নওগাঁ (খিত্তা-২০এর খ), নাটোর (খিত্তা-২০ এর গ), চাঁপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২০এর ঘ), যাত্রাবাড়ী-১, ২ (খিত্তা-২১, ২২), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৩), ধামরাই (খিত্তা-২৪ এর ক), দোহার (খিত্তা-২৪এর খ), নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৪ এর গ), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-২৫), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৬), রংপুর (খিত্তা-২৭ এর ক), নীলফামারী (খিত্তা-২৭ এর খ), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-২৭ এর গ), গাইবান্ধা (খিত্তা-২৭ এর ঘ), লালমনিরহাট (খিত্তা-২৭ এর ঙ), বগুড়া (খিত্তা-২৮ এর ক), জয়পুরহাট (খিত্তা-২৮ এর খ), মুন্সিগঞ্জ ( খিত্তা-২৯), যশোর (খিত্তা-৩০ এর ক), নড়াইল (খিত্তা-৩০ এর খ), মাগুরা (খিত্তা-৩০ এর গ), ঝিনাইদহ ( খিত্তা-৩০ এর ঘ), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৩২), বরিশাল (খিত্তা-৩৩ এর ক), পিরোজপুর (খিত্তা-৩৩ এর খ), ঝালকাঠি (খিত্তা-৩৩ এর গ), ভোলা (খিত্তা-৩৪), নরসিংদী (খিত্তা-৩৫), খুলনা (খিত্তা-৩৫ এর ক), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৩৫ এর খ), বাগেরহাট (খিত্তা-৩৫ এর গ), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৩৬ এর ক), মেহেরপুর (খিত্তা-৩৬ এর খ), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৩৬ এর গ), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৩৭), শেরপুর (খিত্তা-৩৮ এর ক), জামালপুর (খিত্তা-৩৮ এর খ), নেত্রকোনা (খিত্তা-৩৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৪০), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৪১ এর ক), ফরিদপুর (খিত্তা-৪১এর খ), রাজবাড়ী (খিত্তা-৪১এর গ), শরীয়তপুর (খিত্তা-৪২এর ক), মাদারীপুর (খিত্তা-৪২ এর খ), সিলেট (খিত্তা-৪৩ এর ক), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৪৩এর খ), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৪৩এর গ), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৪৩ এর ঘ), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৪৪ এর ক), কক্সবাজার (খিত্তা-৪৪এর খ), বান্দরবান (খিত্তা-৪৪এর গ), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৪৪ এর ঘ), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৪৪ এর ঙ), ফেনী (খিত্তা-৪৫ এর ক), নোয়াখালী (খিত্তা-৪৫ এর খ), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৪৫ এর গ), কুমিল্লা (খিত্তা-৪৬ এর ক), চাঁদপুর (খিত্তা-৪৬ এর খ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৪৬এর গ), পটুয়াখালী (খিত্তা-৪৭), বরগুনা (খিত্তা-৪৮), পাবনা (খিত্তা-৪৯) এবং ৫০এর ক, খ, গ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাও ও পঞ্চগড়ের মুসল্লিরা অবস্থান করবেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন: গতকাল দুপুরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ টঙ্গী ইজতেমা ময়দান পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি ময়দানের উত্তর পাশে আক্তার গ্রুপের মাঠে স্থাপিত ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ইসলামিক মিশন ও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) লি. উদ্বোধন করেন। হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান কাজী গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, ধর্ম সচিব মো. আনিচুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম. বেলালুর রহমান, ডা. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নূরুল ইসলাম নূরু, ৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম প্রমুখ।
উদ্বোধনকালে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার খাতিরে বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নাম অতি পরিচিত। তাই ইজতেমা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কায় ছিলাম টঙ্গীতে এবার ইজতেমা হবে কি হবে না তা নিয়ে। আল্লাহ্ তা’য়ালার অশেষ মেহেরবানিতে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে টঙ্গীতে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা করছি। আমি ইজতেমার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি ময়দানে সমবেত হয়েছেন।
চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকে ইজতেমার জন্য অস্থায়ীভাবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বক্ষব্যাধি/ অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্র্ন ইউনিট, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
ইজতেমা কমিটির বক্তব্য: বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি মেজবাহ উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। দেশের ৬৪টি জেলার লাখ লাখ মুসল্লি প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। ইনশাআল্লাহ।
মুসল্লি ইজতেমা ময়দানে এসে সমবেত হচ্ছেন। এবার পুরো মাঠকে ৫০ খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। জেলাওয়ারি তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা তাদের খিত্তায় বুধবার থেকে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। গতকাল সারাদিনই দলে দলে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। সারা দেশর ধর্মপ্রাণ মানুষের স্রোত এখন টঙ্গী অভিমুখে। মানুষের এ স্রোত আখেরি মোনাজাতের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। প্রতিবছর ৩দিন করে দুই দফায় হলেও এবারই ২দিন করে বিরতিহীনভাবে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম পর্বে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ওলামা-মাশায়েখ তাবলীগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরুব্বি ও কাকরাইল জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জোবায়ের আহমেদের অনুসারী মুসল্লিরা অংশ নিবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি শনিবার দুপুরে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়ে প্রথমপর্বে আগত মুসল্লিরা রাতের মধ্যে ময়দান ত্যাগ করবেন। পরে মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভীপন্থি অনুসারী মুসল্লিরা আগামী ১৭ই ফেব্রুয়ারি রোববার বাদ ফজর থেকে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নিবেন। ১৮ ফেব্রুয়ারি মধ্যাহ্নের পূর্বে যে কোনো এক সময় আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দুই পর্ব ২০১৯ সালের বিশ্ব ইজতেমা।
এ সমাবেশে আগত মুসল্লিদের জন্য টঙ্গীর তুরাগ তীরে ১৬০ একর খোলা জমিনের ওপর পাটের চট দিয়ে সুবিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। তাবলীগ জামাতের এ মিলন মেলায় বাংলাদেশ ছাড়াও এবারের ইজতেমায় বিশ্বের শতাধিক দেশের প্রায় ১৫-২০ হাজার বিদেশি মেহমান আখেরি মোনাজাতে অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৮৫টি দেশের প্রায় ১ হাজার বিদেশি মেহমান ময়দানের তাদের জন্য নির্ধারিত নিবাসে অবস্থান নিয়েছেন বলে বিদেশি নিবাসের জিম্মাদার ও মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানিয়েছেন। লাখো মুসল্লির অংশগ্রহণে আজ দেশের বৃহত্তম জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ ইজতেমা ময়দানে।
ইজতেমাকে ঘিরে নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা। বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমাস্থলের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের পুলিশ কমিশনার মো. ওয়াইএম বেলালুর রহমান জানান, এবারের বিশ্বইজতেমায় প্রচলিত নিরাপত্তার ব্যবস্থার বাইরে ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যে কোনো নাশকতা রোধে পুলিশের সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। র্যাব, মেট্রোপুলিশ, জেলা পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, শিল্পপুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, ও সাদা পোশাকে দুই পর্বের ইজতেমা মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রায় বিপুল পরিমাণ নিরাপত্তা কর্মী কাজ করবেন।
তিনি জানান, টঙ্গী ব্রিজ থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা, মুন্নু গেট থেকে কামারপাড়া পর্যন্ত এবং তুরাগ নদীসহ পুরো এলাকাকে ৫টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি সেক্টরে দুইজন পুলিশ সুপারের মর্যাদায় অফিসারের নেতৃত্ব আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর সদস্যরা কাজ করবেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে থাকবে চেক পোস্ট, ওয়াচ টাওয়ার, ইজতেমা এলাকার প্রতিটি প্রবেশ পথ সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, খিত্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে পোশাকে ও সাদা পোশাকে নিরাপত্তা কর্মীরা নিয়োজিত থাকবেন। প্রথমপর্বে খিত্তাওয়ারী মুসল্লিদের অবস্থান: এ বছর প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো- গাজীপুর (খিত্তা নং-১), টঙ্গী-১-৩ (খিত্তা নং-২, ৩, ৪), মিরপুর-১, ২ (খিত্তা নং-৫, ৬), সাভার-১, ২ (খিত্তা নং-৭, ৮), মোহাম্মদপুর (খিত্তা নং-৯), ডেমরা (খিত্তা নং-১০), কেরানীগঞ্জ-১, ২ (খিত্তা নং-১১, ১২), কাকরাইল-১-৭ (খিত্তা নং-১৩-১৯), রাজশাহী (খিত্তা-২০ এর ক), নওগাঁ (খিত্তা-২০এর খ), নাটোর (খিত্তা-২০ এর গ), চাঁপাই নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২০এর ঘ), যাত্রাবাড়ী-১, ২ (খিত্তা-২১, ২২), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৩), ধামরাই (খিত্তা-২৪ এর ক), দোহার (খিত্তা-২৪এর খ), নবাবগঞ্জ (খিত্তা-২৪ এর গ), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-২৫), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৬), রংপুর (খিত্তা-২৭ এর ক), নীলফামারী (খিত্তা-২৭ এর খ), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-২৭ এর গ), গাইবান্ধা (খিত্তা-২৭ এর ঘ), লালমনিরহাট (খিত্তা-২৭ এর ঙ), বগুড়া (খিত্তা-২৮ এর ক), জয়পুরহাট (খিত্তা-২৮ এর খ), মুন্সিগঞ্জ ( খিত্তা-২৯), যশোর (খিত্তা-৩০ এর ক), নড়াইল (খিত্তা-৩০ এর খ), মাগুরা (খিত্তা-৩০ এর গ), ঝিনাইদহ ( খিত্তা-৩০ এর ঘ), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৩২), বরিশাল (খিত্তা-৩৩ এর ক), পিরোজপুর (খিত্তা-৩৩ এর খ), ঝালকাঠি (খিত্তা-৩৩ এর গ), ভোলা (খিত্তা-৩৪), নরসিংদী (খিত্তা-৩৫), খুলনা (খিত্তা-৩৫ এর ক), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৩৫ এর খ), বাগেরহাট (খিত্তা-৩৫ এর গ), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৩৬ এর ক), মেহেরপুর (খিত্তা-৩৬ এর খ), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৩৬ এর গ), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৩৭), শেরপুর (খিত্তা-৩৮ এর ক), জামালপুর (খিত্তা-৩৮ এর খ), নেত্রকোনা (খিত্তা-৩৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৪০), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৪১ এর ক), ফরিদপুর (খিত্তা-৪১এর খ), রাজবাড়ী (খিত্তা-৪১এর গ), শরীয়তপুর (খিত্তা-৪২এর ক), মাদারীপুর (খিত্তা-৪২ এর খ), সিলেট (খিত্তা-৪৩ এর ক), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৪৩এর খ), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৪৩এর গ), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৪৩ এর ঘ), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৪৪ এর ক), কক্সবাজার (খিত্তা-৪৪এর খ), বান্দরবান (খিত্তা-৪৪এর গ), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৪৪ এর ঘ), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৪৪ এর ঙ), ফেনী (খিত্তা-৪৫ এর ক), নোয়াখালী (খিত্তা-৪৫ এর খ), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৪৫ এর গ), কুমিল্লা (খিত্তা-৪৬ এর ক), চাঁদপুর (খিত্তা-৪৬ এর খ), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৪৬এর গ), পটুয়াখালী (খিত্তা-৪৭), বরগুনা (খিত্তা-৪৮), পাবনা (খিত্তা-৪৯) এবং ৫০এর ক, খ, গ নং খিত্তায় দিনাজপুর, ঠাকুরগাও ও পঞ্চগড়ের মুসল্লিরা অবস্থান করবেন।
ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন: গতকাল দুপুরে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্ব এডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ টঙ্গী ইজতেমা ময়দান পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি ময়দানের উত্তর পাশে আক্তার গ্রুপের মাঠে স্থাপিত ইসলামী ফাউন্ডেশনের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ইসলামিক মিশন ও হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ (ওয়াক্ফ) লি. উদ্বোধন করেন। হামদর্দ বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ-এর চেয়ারম্যান কাজী গোলাম রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, ধর্ম সচিব মো. আনিচুর রহমান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি সামীম মোহাম্মদ আফজাল, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ওয়াই এম. বেলালুর রহমান, ডা. হাকীম ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া প্রমুখ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. নূরুল ইসলাম নূরু, ৫৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাশেম প্রমুখ।
উদ্বোধনকালে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী আলহাজ এডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ বলেন, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার খাতিরে বহির্বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের নাম অতি পরিচিত। তাই ইজতেমা সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে। তিনি বলেন, আমরা আশঙ্কায় ছিলাম টঙ্গীতে এবার ইজতেমা হবে কি হবে না তা নিয়ে। আল্লাহ্ তা’য়ালার অশেষ মেহেরবানিতে সকল বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে টঙ্গীতে ৫৪তম বিশ্ব ইজতেমা করছি। আমি ইজতেমার সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করছি।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল বলেছেন, বিশ্ব ইজতেমার সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লি ময়দানে সমবেত হয়েছেন।
চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে প্রথম পর্বে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেয়া হয়েছে। গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালকে ইজতেমার জন্য অস্থায়ীভাবে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। সেইসঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, বক্ষব্যাধি/ অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ ইউনিট, ট্রমা (অর্থোপেডিক) ইউনিট, বার্র্ন ইউনিট, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম এবং ১৪টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন।
ইজতেমা কমিটির বক্তব্য: বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বি মেজবাহ উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। দেশের ৬৪টি জেলার লাখ লাখ মুসল্লি প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন। ইনশাআল্লাহ।