প্রথম পাতা

বিজয়ী এমপিদের সংসদে না আসা রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত

সংসদ রিপোর্টার

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয়ী এমপিদের সংসদে না আসাকে ’রাজনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও অল্প সিট পেয়েছেন বলে অভিমানে পার্লামেন্টে আসছেন না, আমার মনে হয়, এটা রাজনৈতিক একটা ভুল সিদ্ধান্ত তারা নিয়েছেন। কারণ ভোটের মালিক জনগণ, জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে এবং সেভাবেই জনগণ ভোট দিয়েছে। কাজেই আমার আহ্বান থাকবে, যারাই নির্বাচিত সংসদ সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন। এটাই আমি আশা করি।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত ৩০ মিনিটের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছি সকলে সম্মিলিতভাবে দেশটাকে গড়ে তুলবো। তাই আমি নির্বাচনের আগে সকল দলকে ডেকেছিলাম, সুন্দর পরিবেশে বৈঠক করেছি এবং সকলকে আমি আমন্ত্রণ করেছিলাম যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তিনি বলেন, গত ১০ বছরে দেশে যে উন্নয়ন হয়েছে, সেই উন্নয়নের সুফল দেশের জনগণ পেয়েছে। আর সুফল পেয়েছে বলেই জনগণ বহুপূর্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েই রেখেছিল যে, তারা আমাদের নৌকা মার্কায় ভোট দেবে এবং জনগণ সেই ভোট দিয়েছে।

তিনি বলেন, সংসদে এলে তাদের যদি কোনো কথা থাকে, তাহলে তারা কিন্তু বলার একটা সুযোগ পাবে। আর এই সুযোগটা শুধু পার্লামেন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। যেহেতু মিডিয়াতে সম্পূর্ণভাবে অধিবেশন সরাসরি দেখানো হয় এবং সংসদ টিভিও আছে, তার মাধ্যমে সারা দেশের মানুষ তাদের কথা জানতে পারবে। এই সুযোগটা তাঁরা কেন হারাচ্ছেন আমি জানি না। আমার আহ্বান এটাই থাকবে, যারাই নির্বাচিত সদস্য তারা সবাই পার্লামেন্টে আসবেন, বসবেন এবং যার যা কথা সেটা বলবেন এটাই আমি আশা করি।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজীর প্রশ্নোত্তরে সংসদ নেতা বলেন, গত ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান এবং ওআইসি’র নেতৃবৃন্দসহ প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান আমাকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৯৭ জন বিশ্ব নেতা জনগণকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এসব বার্তা পেয়ে দেশবাসীর সঙ্গে আমিও গর্বিত ও আনন্দিত। এসব অভিনন্দন বার্তায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির জন্য আমাদের সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যবিমোচন এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে বিগত দশ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের জনবান্ধব নীতি ও কর্মসূচির বাস্তবায়ন, জনগণের কঠোর পরিশ্রম এবং সহযোগিতার ফলে। আমি জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশকে একটি আত্ম-মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশ আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে বাংলাদেশকে আজ বিশ্ব সম্প্রদায় সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে। তাছাড়া আমি মনে করি সকল চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন দেশের অব্যাহত উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাবো। বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করব।

স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে আগামী দিনেও সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও বিকশিত হবে। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের এ অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ, সুখী ও শান্তিময় দেশ। সরকারি দলের সংসদ সদস্য মামুনুর রশীদ কিরণের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে রাজনীতি করে দেশের সুনাম ক্ষুণ্ন্ন করতে চেয়েছে। তবে আমাদের ঐকান্তিক চেষ্টার ফলে বারবার তা ব্যর্থ হয়েছে। কুচক্রী মহল যাতে কোনোভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ক্ষেত্র তৈরি না করতে পারে, সে ব্যাপারে আমরা সজাগ রয়েছি।

তিনি বলেন, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। যারা সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সুনাম ক্ষুণ্ন করবে তাদের প্রত্যেককে শনাক্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের বিদ্যমান সাম্প্রদায়িক বন্ধন ও সম্প্রীতির বিনষ্টের চেষ্টা করা হলে আমরা তা কঠোরভাবে দমন করবো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থা তথা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে অসাম্প্রদায়িক জাতি-রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

সারাদেশে ইমামগণকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেনতার সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে জুমার খুৎবায় নিয়মিত সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী বক্তব্য প্রদান করছে। কেউ যাতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টা চালাতে না পারে সেজন্য সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। বিষয়টি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটর করছেন। ফখরুল ইমামের সম্পুরক প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে অবসর সময়ে আবার গ্রামে থাকার ইচ্ছে প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে গ্রামটা হচ্ছে আমাদের প্রাণ। কেননা আমি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছি, গ্রামেই বড় হয়েছি, ওই কাদা মাটি মেখেই বড় হয়েছি। খালে ঝাঁপ দিয়ে, গাছে উঠে নানাভাবে খেলাধুলা করেই গ্রামে বড় হয়েছি, হয়তো একটা পর্যায়ে ঢাকায় চলে এসেছি। কিন্তু গ্রামের টান কখনো মুছে যাইনি, মুছে যায় না। এখনো মনটা পড়ে থাকে আমার ওই প্রিয় গ্রামে।

সংসদ নেতা বলেন, গ্রামের মানুষকে আমরা যেমন নাগরিক সুবিধা দিতে চাইছি। কারণ একটু ভালো হলেই গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা, এটা আমার কোনোদিনই পছন্দ ছিল না। সবসময় আমার একটা আকাঙ্ক্ষা, যখনই আমি অবসর নেব তখন গ্রামের বাড়িতে যেয়েই থাকব। সেখানে সবুজ শ্যামল সুন্দর পরিবেশ সবসময় আমাকে টানে। কাজেই এটাই আমার একটা ইচ্ছা। আমি মনে করি, গ্রামের নির্মল বাতাস, সুন্দর পরিবেশ- এটা মানুষকে স্বাভাবিকভাবেই অনেক সুস্থ রাখে। মন ভালো থাকে, প্রশান্তি জোটে। শহরের ইট-কাঠের এই বদ্ধ একটা আবহাওয়া এবং পরিবেশ থেকে গ্রামের উন্মুক্ত পরিবশেটা সবসময় আমার আকাঙ্ক্ষা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status