ষোলো আনা

নাফিসাই আদিবের ভরসা

পিয়াস সরকার

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন

২০০১ সালে প্রথম দেখা। তখন আদিব হাসান ও নাফিসা আক্তার দু’জনই পড়তেন ঢাকা মেডিকেল কলেজে। কাজ করতেন সন্ধানীতে। সেখানেই বন্ধুত্ব সেখানেই শুরু এক মিষ্টি ভালোবাসার গল্পের। আদিব বলেন, আমি লেখাপড়ায় খুব একটা ভালো ছিলাম না। বলতে গেলে নাফিসার কারণেই আমার লেখাপাড়া ভালোভাবে চলতে থাকে।

তবে নাফিসা বলেন, আমাদের ভালোবাসারয় কখনো ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলার প্রয়োজন পড়েনি। তবে আমরা ছিলাম দু’জন দু’জনার।   

আদিব ও নাফিসা এমবিবিএস সম্পন্ন করেন ২০০৬ সালে। আর আকদ সম্পন্ন ২০০৯ সালে। এই ভালোবাসা শুভ পরিণয় পায় ২০১০ সালে।

আদিব জানান, বিয়ের বছরে তারা মেডিসিনে এফসিপিএসের ট্রেনিং করছিলেন। সবকিছু ঠিকমতোই চলছিল। তবে মাস চারেক পর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ডাক্তাররা পরীক্ষা করে জানান, সিএনএস টিউবারকিউলোসিস হয়েছে। পরিস্থিতি দ্রুত অবনতি হচ্ছিল। মেমরি লস হওয়া শুরু হয়। এমনকি স্বজনদেরকে চিনতে পারেন না তিনি। তখন দেখা দেয় প্যারালাইসিসের লক্ষণ। সিঙ্গাপুর ও ভারতে চিকিৎসার পর ২ বছর পর দেশে ফেরেন তারা। আর নাফিজের সার্বক্ষণিক যুদ্ধের সঙ্গী ছিলেন তার সহধর্মিণী।

২০১২ সালের মাঝামাঝি দেশে ফেরেন তারা। ফিরে আবার শুরু করেন অধ্যয়ন। এমআরসিপি পার্ট ওয়ান আর টু পাস করেন দু’জনই। কিন্তু ২০১২ সালের শেষের দিকে ফের স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে তার। পরে জানতে পারেন সিরিনগোম্যায়ালিয়া নামে স্পাইনাল কর্ডের রেয়ার একটা ডিজিজে আক্রান্ত।

আদিব বলেন, আমার বর্তমান যে শারীরিক অবস্থা, তাতে পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন চিকিৎসা একটাই সাবধানে থাকা-নিরাপদে থাকা।

তিনি আরো বলেন, আমি যে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি তাতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা স্ত্রীর ও বাবা মায়ের। মাঝখানে প্রায় দুই বছর আমি বিছানায় ছিলাম। এ সময় নাফিসার যত্ন আর সঙ্গই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল। অনেক ভেবে ওকে আমি বলেছিলাম যে আমাকে ছেড়ে চলে যেতে। কারণ আমি মাঝখানে কয়েকবার মৃত্যুর সম্মুখীন হই। কিন্তু নাফিসা আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার কখনোই মনে হয়নি যুদ্ধটা আমার একার।

এত যুদ্ধের পরও তারা পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছেন। আদিব বলেন, আমার যত্ন নিতে গিয়ে নাফিসা ওর পড়াশোনা থেকে প্রায় চার বছর দূরে সরে আছে। আমি ওকে আবার পড়াশোনায় ফিরতে উৎসাহিত করি। ২০১৭ সালে আমি আর নাফিসা কাছাকাছি সময়ে এমআরসিপি পাস করি। এখন চেম্বারও করতে পারছি, নিয়মিত রোগী দেখি।

আদিব বলেন, নাফিসা কখনোই বিশ্বাস হারায়নি। সে আমার বেঁচে থাকার প্রেরণা। ভালোবাসা যে সব প্রতিকূলতাকে জয় করতে পারে, আমার স্ত্রীই তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

নাফিসা বলেন, আমি আদিবকে ছেড়ে চলে গেলে তা হতো অন্যায়। তাকে আমি মন দিয়েছি। তার বিপদে তার পাশে থাকবো না তাতো হয় না। আমার বিশ্বাস ছিল ও সুস্থ হবেই। আমি আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। আল্লাহ আমাকে আমার বন্ধু, আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status