বাংলারজমিন

ফের মানব পাচার, টার্গেট রোহিঙ্গা

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার থেকে

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৪৬ পূর্বাহ্ন

ফের শুরু হয়েছে সাগরপথে মানব পাচার। গত দু’দিনে উখিয়া এবং টেকনাফের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় ৭০ জন রোহিঙ্গাকে বিজিবি ও পুলিশ উদ্ধার করেছেন। এসব ঘটনায় মানব পাচারকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৩৮ জন নারী, যাদের বয়স ১৫ থেকে ২০ এর মধ্যে। তাদের গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা জাহাজে তুলে দেয়ার কথা ছিল বলে জানা যায়। সাগরপথে মানব পাচারকারী চক্র পাচারের জন্য উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যামেপর রোহিঙ্গাদের বেছে নিয়েছে। যা বিজিবি ও পুলিশের অভিযানে পাচারের সময় উদ্ধার করা রোহিঙ্গাদের পরিসংখ্যান বলে দেয়।

বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় ২০১৫ সালে শত শত বাংলাদেশি গ্রেপ্তার হন। আবার মানব পাচারকারী চক্রের খপ্পড়ে পড়ে মালয়েশিয়াগামী অনেকেই ক্ষুধা আর তৃষ্ণার জ্বালায় সাগরপথেই মারা যান। সেই সময় মিয়ানমার, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে সাগরপথে পাচারের শিকার হয়ে বন্দিদশা এবং যাত্রাপথে প্রাণ হারানো শত শত মানুষের থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার উপকূলে অসংখ্য গণকবরের সন্ধান পাওয়ায় বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এমতাবস্থায় অবৈধভাবে মানব পাচার রোধে পাচারের অন্যতম রুট বাংলাদেশের কক্সবাজার সীমান্তে প্রশাসনের কঠোর নজরদারি বাড়ানো হয়।

যার ফলে প্রায় তিন বছরে সাগরপথে মানব পাচার শূন্যের কোঠায় নেমে এলেও আবারো প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা তৎপর হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মুসলিম রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নির্বিচারে গণহত্যা ও নির্যাতন চালানোর কারণে ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তাছাড়া আগে থেকেই বাংলাদেশে ৪ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করেছিল। সব মিলিয়ে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি। যারা কর্মহীন ও অভাব-অনটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে, আর সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারে এসব রোহিঙ্গাদের টার্গেট করছে পাচারকারী চক্রগুলো। আবার  এসব রোহিঙ্গাদেরই একটি অংশ মানব পাচারের সঙ্গে জড়িত বলে জানা যায়।

এরই মধ্যে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে বেশ ক’জন রোহিঙ্গা দালালও। জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও রোহিঙ্গাদের প্রলোভনে ফেলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রগুলো। পাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়ে  অনেকে আবার প্রতারণার শিকার হয়ে শেষ সম্বলটুকুও হারাচ্ছেন বলে জানা যায়। পাচারকারী চক্রের সদস্যরা মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সাগরপথে দুই-তিন দিন ঘুরিয়ে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর কথা বলে টেকনাফ সমুদ্রতীরে নামিয়ে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৭ এর টেকনাফ ক্যামেপর ইনচার্জ লে. মির্জা শাহেদ মাহতাব। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোতে র‌্যাবের ব্যাপক নজরদারি রয়েছে। স্থানীয় দালালদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা মানব পাচারকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে। এদিকে গত রোববার টেকনাফের উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া পাচারের সময় ২২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) জওয়ানেরা।

উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১১ জন শিশু, ১০ জন নারী ও ১ জন পুরুষ রয়েছে। তারা সবাই মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যামেপ আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা। বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, গত রোববার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর লম্বরী সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকা দিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি দল প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবির টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মো. তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২২ জন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status