দেশ বিদেশ

দুধ, দই, গো-খাদ্যে ভেজাল

খতিয়ে দেখতে কমিটি করার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

দুগ্ধজাত পণ্যসহ খাদ্যে ভেজাল গুরুতর অপরাধ ও দুর্নীতি। স্বার্থান্বেষীরা এ ধরনের অপরাধ ও দুর্নীতিতে জড়িত। সময় এসেছে এদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার। কারণ এ ধরনের ভেজালে মানুষের কিডনি, লিভার নষ্ট হচ্ছে, ক্যানসার হচ্ছে। আদালত বলেছেন, ‘মানুষ শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে কেউ ভাবছে না। স্বাস্থ্যই যদি ঠিক না থাকে, তাহলে এত টাকা-পয়সা দিয়ে হবেটা কী?’ জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দুটি বাংলা দৈনিক ও একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আসলে সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। পাশাপাশি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনাসহ এসব রুল জারি করেন।

অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনায় ভেজাল দুধ, দই ও গো-খাদ্য তৈরিতে জড়িত ব্যক্তি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে চিহ্নিত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে বলেছেন হাইকোর্ট। কমিটি গঠনের পর তিন মাসের মধ্যে এ কমিটিকে হলফনামা আকারে প্রতিবেদন দিতে হবে আদালতে। ভেজাল দুধ, দই ও গো-খাদ্যে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অনুজীব, সীসা ও কীটনাশক রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি করতে বলা হয়েছে।  ছয়মাস পরপর এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে বিবাদীদের।
আদালতের জারি করা রুলে দুধ, দই ও গো-খাদ্যে ভেজাল রোধে এবং যথাযথ আইনগত পদক্ষেপ নিতে বিবাদী নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা খাদ্য সমন্বয় কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) চেয়ারম্যানের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং দোকানে, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও খোলা বাজারে পাওয়া ভেজাল দুধ, দই ও গো-খাদ্য উৎপাদন, বহন, প্যাকেটজাত, বাজারজাত ও সংরক্ষণ অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এসব ভোজাল দুধ, দই ও গো-খাদ্য বাজার থেকে কেন অপসারণের নির্দেশ দেয়া হবে না এবং দোষী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কেন বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে হবে। একইসঙ্গে রুল বিচারাধীন থাকাকালে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের (এনএফএসএল) প্রধান প্রফেসর শাহনীলা ফেরদৌসীকে তার প্রকাশিত প্রতিবেদন এ আদেশের অনুলিপি হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনসাধারণের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা স্বার্থে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে এ ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগামী ৩রা মার্চ এ বিষয়টি পরবর্তী আদেশের জন্য থাকবে। এ আদেশের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, খাদ্য সচিব, কৃষি সচিব, পশু সম্পদ সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে প্রেরণ করতে বলেছেন আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। আদেশের পর মামুন মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুধ, দই ও গো-খাদ্যে ভেজাল মেশানো এবং তা বাজারজাত করাকে আদালত সিরিয়াস করাপশন বলেছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধান, তদন্ত করে ভেজালে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগার (এনএফএসএল) জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গো খাদ্য, দুধ, দই ও বাজারে থাকা প্যাকেটের পাস্তুরিত দুধ সংগ্রহ করে জরিপ করে। জরিপের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভীর দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করে। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভীর দুধ ও গো-খাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঢাকার বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দোকান ও আশপাশের উপজেলার দোকান থেকে দই সংগ্রহ করে এনএফএসএল। বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয় বাজারে প্রচলিত প্রায় সব ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ। গো-খাদ্যের ৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে কীটনাশক (২ নমুনায়), ক্রোমিয়াম (১৬টি নমুনায়), টেট্রাসাইক্লিন (২২টি নমুনায়), এনরোফ্লোক্সাসিন (২৬টি নমুনায়), সিপ্রোসিন (৩০টি নমুনায়) এবং আফলাটক্সিন (৪টি নমুনায়) গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়ার কথা জানিয়েছে জরিপকারী প্রতিষ্ঠানটি। গাভীর দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সীসা এবং ৯৬ শতাংশ দুধে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়াও পাওয়া গেছে। প্যাকেটের দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে টেট্রাসাইক্লিন পাওয়ার কথাও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি নমুনায় সীসা মিলেছে। একই সঙ্গে ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করে একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি সীসা পাওয়ার কথা জানিয়েছে এনএফএসএল। ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status