বাংলারজমিন

সরজমিন সরাইল হাসপাতাল

এম্বুলেন্স গ্যারেজে বন্দি সিজার হচ্ছে না ৫ বছর

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৩ পূর্বাহ্ন

সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতালের এম্বুলেন্স দীর্ঘ ৮ বছর ছিল বিকল। অত্যাধুনিক নতুন এম্বুলেন্স পেয়েছে ১ বছর আগে। চালকও আছেন। মাসিক বেতনও নিচ্ছেন নিয়মিত। কিন্তু শারীরিক ও মানসিক সমস্যার জন্য গাড়ি চালাতে অক্ষম চালক। তাই গ্যারেজবন্দি হয়ে আছে এম্বুলেন্সটি। আর চিকিৎসক সংকটের কারণে গত ৫ বছর ধরে গর্ভবতী মহিলাদের সিজার হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় বিকল হওয়ার পথে সিজারের অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতি। সিজার কার্যক্রম না হওয়ার পেছনে কাজ করছে স্থানীয় একাধিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদের সঙ্গে হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারীর রয়েছে গোপন আঁতাত।  
হাসপাতাল সূত্র জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটি চালকের খামখেয়ালি ও দায়িত্বে ফাঁকির কারণে বারবার বিকল হচ্ছিল হাসপাতালের পুরাতন এম্বুলেন্সটি। এক সময় এম্বুলেন্সের মূল্য ছাড়িয়ে গেল মেরামত বিলের পরিমাণ। অবশেষে বিকল ওই এম্বুলেন্সটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। কর্তৃপক্ষ নতুন এম্বুলেন্সের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখতে থাকেন। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভায়ও আলোচনায় আসে এম্বুলেন্স সমস্যার কথা। ঘুরে ফিরে মাস শেষে বেতন উত্তোলন করছেন চালক। এভাবেই কেটে গেছে কয়েক বছর। ২০১৮ সালের ২রা জানুয়ারি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের সরকারি নতুন এম্বুলেন্স পায় হাসপাতাল। তৎকালীন এমপি গাড়িটি উদ্বোধন করেছেন আরেকজন চালককে দিয়ে। এতে কর্তৃপক্ষ ও রোগীদের মনে আশার সঞ্চার হয়। কিন্তু মন খারাপ হয়ে যায় চালক মোক্তারের। মানসিক সমস্যার কারণে ইচ্ছেমতো আসেন তিনি। গুরুতর অসুস্থ রোগী ঢাকায় বা জেলা সদরে প্রেরণ করতে চালক পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও মানসিক সমস্যার কারণে এম্বুলেন্সটি চালানোর দায়িত্ব নেন না। বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হয়। গত ১ বছরে নতুন এম্বুলেন্সটি চলেছে মাত্র ১৪-১৫ দিন। চিকিৎসার জন্য ৪ মাস অনুপস্থিত থেকে গত ১৫ই জানুয়ারি যোগদান করেছেন চালক মোক্তার। আর গত ৫ মাস ধরে চালক মোক্তার হোসেনের বেতন বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ৫০ শয্যা এ হাসপাতালে অত্যাধুনিক মেশিন ও যন্ত্রপাতিতে সজ্জিত গর্ভবতী মহিলাদের অপারেশন (সিজার) থিয়েটারটি দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ। এখানে সিজার বন্ধ রাখার জন্য শুরু থেকেই আটসাট বেঁধে কাজ করছেন ক্লিনিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এ হাসপাতালে গাইনি ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক দুজন একসঙ্গে থাকতে পারেন না। একজন থাকলে রহস্যজনক কারণে আরেকজন থাকেন না। আর একসঙ্গে দুজন চিকিৎসক না থাকার কারণেই গত ৫ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে সিজার অপারেশন। তবে হাসপাতাল সংলগ্ন প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে দৈনিক ৩-৪টি সিজার অপারেশন হচ্ছে নিয়মিত।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম চালক থেকেও এম্বুলেন্সটি গ্যারেজবন্দি ও ৫ বছর ধরে সিজার বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, মাদক সেবনের কারণে চালক মানসিক রোগী। ৪ মাস চিকিৎসা শেষে সে যোগদান করেছে। আর চিকিৎসক সংকটের কারণে সবকিছু থাকার পরও সিজার অপারেশন হচ্ছে না। চেষ্টা করছি। কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করেছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status