প্রথম পাতা

সিপিডির সংলাপে তথ্য

বছরে আট লাখ নতুন বেকার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হলেও কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে প্রতি বছর আট লাখ বেকার বাড়ছে। গুলশানে লেকশোর হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘প্রবৃদ্ধি ও অগ্রাধিকার’ বিষয়ক সংলাপে এ তথ্য জানানো হয়।
সিপিডি চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহানের সভাপতিত্বে সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুল মান্নান ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান  চৌধুরী নওফেল বক্তব্য দেন। এছাড়া সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, সিপিডির বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, গত ১০ বছরে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক উন্নয়ন হলেও কর্মসংস্থান প্রবৃদ্ধি মূল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূল প্রবন্ধে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, প্রতিবছর ২১ লাখ নারী-পুরুষ চাকরির বাজারে ঢুকছে। তাদের মধ্যে ১৩ লাখ চাকরি পাচ্ছে, আর ৮ লাখ চাকরি পাচ্ছে না। এটা আমাদের দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। তিনি বলেন, ন্যায়সঙ্গত মানসম্পন্ন শিক্ষা, সবার জন্য স্বাস্থ্য সেবা এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এখনও আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে আমাদের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও সেই প্রবৃদ্ধি আমাদের যুব সমাজের জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না।

বক্তারা বলেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নজর দেয়া দরকার। প্রান্তিক পর্যায়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা চরমভাবে ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও তা ব্যবহারে স্বচ্ছতা নেই। শিক্ষা ব্যবস্থা’র আধুনিকীকরণ না হলে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে কোচিং বাণিজ্য বন্ধ করার দিকটি সামনে আনা হয়।

পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, এখনও আমাদের মূল সমস্যা দারিদ্র্য। এই দারিদ্র্য আমাদের নেকড়ের মতো তাড়া করছে। দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হওয়ার পর মান নিয়ে কাজ করবো। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমতা ও জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণের লক্ষ্য নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।

এমএ মান্নান বলেন, দেশের মানুষের কাছে অর্থ গেলে, সবাই বিদ্যুৎ পেলে তারাই শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ মৌলিক অধিকারের মান বাড়াতে পারবে। বর্তমানে দেশে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্ত জনগণের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। গ্রামে গিয়ে দেখুন কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের চিকিৎসা খরচ বাড়া নিয়ে তিনি বলেন, আয় বাড়লে ব্যয় বাড়বে। তাই দেশে আয় বৃদ্ধির কারণে ব্যয় বাড়ছে। শিক্ষার মান ধীরে ধীরে বাড়বে বলে মনে করেন এম এ মান্নান। মানসম্পন্ন শিক্ষার কথা বললেই ইংরেজি শিক্ষার কথা বলা হয় মন্তব্য করে এই ধারণার সমালোচনা করেন তিনি। চীন, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডসহ অনেক দেশেই ইংরেজি শিক্ষা দেয়া হয় না। তারা ইংরেজিও বলে না। তারা কি উন্নয়ন করছে না?, প্রশ্ন করেন মন্ত্রী। বাংলা ভাষায়ও মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এম এ মান্নান বলেন, অনেকে দেখি গ্রামের কথা বলতে গিয়ে অজপাড়াগাঁ বলেন। দয়া করে অজ বলবেন না। অ মানে অসভ্য। আমাদের এখন কোনো অজপাড়াগাঁ নেই। আপনারা গাঁয়ে গিয়ে দেখে আসুন। মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। গ্রামের চিকিৎসা সেবার মান বেড়েছে। বাচ্চারা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যাচ্ছে। এসব তো অস্বীকার করা যাবে না।
সেমিনারে শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, আমাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে গেল গেল একটা রব উঠেছে। কিন্তু এই রবের মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে যে বিনিয়োগ করেছে, তা অতীতের কোনো সরকারই করেনি। তিনি দাবি করেন, সুষম উন্নয়নের ক্ষেত্রে সারা বিশ্ব আমাদের প্রশংসা করছে। নারীর ক্ষমতায়ন ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে সুষম উন্নয়নে আমরা কাজ করছি। নিজেদের দুর্বলতা থেকে উত্তরণের পথ খোঁজার পাশাপাশি সফলতাগুলোও সামনে আনা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, আমাদের পাঠ্যপুস্তকে এখনো সামপ্রদায়িক ও বর্ণবাদের মতো বিষয় আছে। আমরা বারবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসামপ্রদায়িকতার কথা বলছি। কিন্তু এর কতটা পাঠ্যবইয়ে উঠে আসছে? নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীকে পড়তে হয় তার গায়ের রং কালো হলে কোন জামা পরতে হবে। এটি বর্ণবাদের শিক্ষাই কি দিচ্ছে না। এসব বিষয়ে বিভিন্ন জায়গায় কথা বলার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সুরাহা হয়নি বলে জানান তিনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল বলেন, আমরা সামপ্রদায়িকতার সঙ্গে কখনোই আপস করবো না। সিলেবাসে এমন কিছু থাকলে অবশ্যই তা সংশোধন করা হবে।

সেমিনারে বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশে এখন সুশাসনের প্রথম প্রতিবন্ধক হচ্ছে অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস। আইন মানুষকে রক্ষা করে। কিন্তু এখন আইন হয়ে গিয়েছে নির্যাতনের অস্ত্র। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, গত নির্বাচনে তিনি নমিনেশন চেয়েছিলেন। তাকে নমিনেশন দেয়া হয়নি বলে তিনি ক্ষুব্ধ। এখন বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হওয়া ‘গায়েবি’ মামলা জামিনযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও তিনি অ্যাপিলেট ডিভিশনে নিয়ে যাচ্ছেন। বিচারকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রী শুধু ডাক্তারদের বিষয়ে বললেও তিনি জেলা জজদের বিষয়ে কিছু বলেননি। জেলা জজরা বৃহস্পতিবার জেলা ছাড়েন, আর সোমবার আবার জেলায় পৌঁছান।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রেহমান সোবহান বলেন, উন্নয়নের পরিমাপক হচ্ছে মানসম্পন্ন শিক্ষা। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যেও তাই আছে। প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন এগুলো পূরণের জন্য কমিটেড থাকতে হবে। আগের তুলনায় এখন দেশের স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা খারাপ বলে মনে করেন তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status