বাংলারজমিন

বিপিএম পদক পেলেন সিলেটের ডিআইজি কামরুল

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ৯:৩২ পূর্বাহ্ন

পুলিশি কার্যক্রমের বাইরেও ব্যতিক্রমী ও উদ্ভাবনী কার্যক্রমের জন্য এবার বাংলাদেশ পুলিশের বিপিএম (সেবা) পদক পেয়েছেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান। পুলিশের কার্যক্রমের বাইরে তিনি তার কর্ম এলাকার মানুষদের মধ্যে অনেকগুলো দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করিয়েছেন। আয়করদাতাদের ‘কর কার্ড’ দেয়ার জন্য তার প্রস্তাবটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গ্রহণ ও কার্যকর করে। এছাড়াও তিনি শহরের বিট পুলিশের আদলে ইউনিয়নভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থায় নতুনত্ব দেখান। একইসঙ্গে তিনি থানা ও পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের রেজিস্টার রক্ষণাবেক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এবারের পুলিশ সপ্তাহে বিপিএম (সেবা) পদক দেওয়া হয় ডিআইজি কামরুল আহসানকে। পদক দেওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, কামরুল আহসান সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে সিলেট বিভাগের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গুরুত্বপূর্ণ এসব ভূমিকার মধ্যে রয়েছে, ইউনিয়নভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশিং ব্যবস্থাকে তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। প্রথমে তিনি সিলেট রেঞ্জের পৌর এলাকাগুলোতে পিআরবি প্রবিধান ৩৫৬ অনুযায়ী বিট পুলিশিং গঠন করার উদ্যোগ নেন। এরপর প্রত্যেক বিটের জন্য একজন এসআই ও এএসআই নিয়োজিত করেন। এর ধারাবাহিকতায় প্রতিটি ইউনিয়নকে শহরের মতো একটি বিট হিসেবে গণ্য করে এসআই ও এএসআইদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করা হয়। প্রত্যেক ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে পুলিশের জন্য একটি কক্ষ বরাদ্দ নেয়া হয়। অফিসিয়ালি তাদের একটি মোবাইল নম্বরও বরাদ্দ করা হয়। ডিআইজি কামরুল আহসান বিট কর্মকর্তাদের জন্য পুলিশের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ১৩টি দায়িত্ব চিহ্নিত করে সেটা পালনের নির্দেশ দেন। তার এ কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে আইজিপি ইউনিয়নে নিয়োজিত পুলিশ কর্মকর্তাদের ইউনিয়ন পুলিশ অফিসার হিসেবে গণ্য করার জন্য আদেশ দেন।
এ কার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হলে প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসকারী মানুষের জন্য পুলিশের সেবা পাওয়া সহজ হবে। ইতিমধ্যে মাঠ পর্যায়ে এর সুফল পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন তারা। ডিআইজির এ উদ্যোগকে একটি ‘ইনোভেশন’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
পুলিশের কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন ডিআইজি কামরুল আহসান। সিলেট রেঞ্জের বিভিন্ন জেলা বিশেষ করে হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ থেকে উদ্ভূত দাঙ্গায় প্রাণহানির ঘটনা অহরহ ঘটছিল। তিনি এই দাঙ্গা ও প্রাণহানি রোধে দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তির বিশেষ উদ্যোগ নেন। প্রথমে প্রতি জেলায় ইউনিয়নভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি বিরোধের তালিকা তৈরি করেন। পরে বিরোধগুলো পুলিশ কর্মকর্তা, ইউএনও কিংবা প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সহযোগিতায় নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেন। প্রতি মাসের অগ্রগতি নিজ কার্যালয় থেকে মনিটর করেন ডিআইজি। এ উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৮২টি দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন তিনি। তার এসব পদক্ষেপ ইতিবাচক ও জনবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। ২০১৭ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি কেবিনেট সচিবের উপস্থিতিতে সুনামগঞ্জে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় ইনোভেশন সার্কেল-২০১৭ অনুষ্ঠানে এ উদ্যোগটি পুলিশি কার্যক্রমে একটি ইনোভেশন কার্যক্রম হিসেবে গণ্য করা হয়।
আরেকটি সম্পূর্ণ নতুন ধারণা দেন ডিআইজি কামরুল আহসান। দেশের আয়করদাতাদের সম্মান জানানোর জন্য তাদের ‘কর কার্ড বা পরিচয় পত্র’ দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। এ প্রস্তাব পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তা গ্রহণ করে কার্যকর করে। ২০১৭ সালের ১ থেকে ৭ই নভেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত কর মেলায় এ কার্ড বিতরণ করা হয়। ওই বছরের ১৩ই নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে কর কার্ড তুলে দেন।  কামরুল আহসানের ধারণা প্রসূত এ প্রস্তাব এবং এর বাস্তবায়ন দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এটিও একটি ইনোভেশন হিসেবে বিবেচনায় নেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার কৃতি সন্তান সিলেট রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক) মো. কামরুল আহসান (বিপিএম)। কামরুল আহসান ১৯৬৬ সালে পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর ত্রিধারা বিধৌত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার উত্তর ইমামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং ঢাকার সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করেন। মৌলিক ও বাস্তব প্রশিক্ষণ শেষে খাগড়াছড়ি জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হওয়ার পর যথাক্রমে তিনি চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেল এএসপি, এএসপি ডিএসবি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, ফেনী জেলার অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গৌরবময় ও বর্ণিল পেশা জীবনে তিনি শরিয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপার, পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং) এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০১৬ সালে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির শুরুতে রাজশাহীর সারদাতে অবস্থিত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে মৌলিক প্রশিক্ষণের পাঠ্যক্রমে (একাডেমিক) শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করায় ‘আইজিপি শিল্ড’ অর্জন করেন।
বাংলাদেশ পুলিশে অসাধারণ ও দৃষ্টান্তমূলক চাকরির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি দু’বার আইজি ব্যাজ অর্জন করেন। মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, আমেরিকা ও ইতালিতে বিবিধ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে তিনি বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বের অংশ হিসেবে থাইল্যান্ড, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, মিশর, গায়ানা, গাম্বিয়া, বাহরাইন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের ‘পুলিশ এডভাইজার’ হিসেবে সিয়েরা-লিওন ও সুদানে দায়িত্ব পালন করেন। সুদান মিশনের কনটিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরবের পাশাপাশি তিনি মিশনসমূহে দৃষ্টান্তমূলক চাকরির স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক’ লাভ করেন। পুলিশ এবং কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন প্রকাশনায় তার লেখা উল্লেখযোগ্য পাঠক স্বীকৃতি পেয়েছে। ব্যক্তি জীবনে তিনি মুনমুন ফারজানার সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্কে আবদ্ধ। তার তিন পুত্রসন্তান রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status