বাংলারজমিন

দখল-দূষণে মরণাপন্ন চিলাই নদী

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

গাজীপুর মহানগরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া এককালের অপরূপ সৌন্দর্য্যের প্রশস্ত ও খরস্রোতা চিলাই নদী এখন পরিণত হয়েছে মরা খালে। দখল আর দূষণে মরণাপন্ন এই নদী। ময়লা-আবর্জনা, ইমারত নির্মাণের কঠিন বর্জ্য ফেলার পাশাপাশি স্থাপনা নির্মাণ করে, যে যেমন পেরেছে দখলে নিয়েছে নদীটি। শিল্প বর্জ্যে বিষাক্ত হয়ে গেছে নদীর পানি। বিশেষ করে শহরে গিয়ে এই নদীর হয়েছে মরণদশা। সবখানে দেখা যাচ্ছে দখলের চিহ্ন। এটাকে বাঁচাতে চিলাই বাঁচাও আন্দোলন, নদী বাঁচাও আন্দোলন, পরিবেশ বাঁচাওসহ নানা সংগঠন বছর বছর ধরে অনেক আন্দোলন করেছে। দখল ও দূষণ থেকে রক্ষা করতে কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ  নেই। অবশ্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ বলছেন, নদী উদ্ধার ও নির্মল পরিবেশ সৃষ্টি করতে তাদের রয়েছে নানা উদ্যোগ। সরজমিন দেখা যায়, বিআইডিসি রোডের পাশে চিলাই নদী দখল করে নির্মিত স্থাপনার সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে নতুন করে ফেলা হচ্ছে ইট-সুড়কি। নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ দেয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে এর স্বাভাবিক প্রবাহ। ড্রেন এবং পাইপের মাধ্যমে কালচে রঙের বিষাক্ত শিল্পবর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে বিষাক্ত, ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে নদীর পানি। ঢাকার পাশের গাজীপুর জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো অপরূপা বিশাল আয়তনের বেলাই বিল আর বিলের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চিলাই নদীতে সারা বছরই পানি থাকতো এই তো ১০-১৫ বছর আগেও। এখনো কোথাও কোথাও একটু থাকলেও বর্ষায় তা বেড়ে যায়। নদী বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোগে ও পরিবেশ আন্দোলনের উদ্যোগে নদীতে প্রতিবাদী অবস্থান, মানববন্ধন কর্মসূচিসহ নানা ধরনের আন্দোলন হয়েছে বছরের পর বছর ধরে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মনির হোসেন বলেন, নগরের দেশীপাড়া  থেকে শ্মশানঘাট পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে নদীর তীরের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি দখল-দূষণের মাধ্যমে নদীটির টুঁটি  চেপে ধরেছে। নদী দখল করে গড়ে তুলেছে কল-কারখানা, বাড়িঘর। এমনকি ফসলি জমিতে পরিণত করেছে নদী। যার ফলে চিরতরে হারিয়ে যেতে বসেছে শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে বয়ে যাওয়া চিলাই নদী। মানুষ বাঁচাতে, সুস্থ রাখতেই এই নদী বাঁচানো এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। এর জন্য দ্রুত নদীটির সীমানা নির্ধারণ, পুনঃখনন ও উচ্ছেদ অভিযান চালানো প্রয়োজন। চিলাই বাঁচাও আন্দোলনের নেতা অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনের নেতৃত্বে নদীটি রক্ষার দাবিতে, বাঁচানোর দাবিতে একাধিকবার আন্দোলন হয়েছে। তিনি জানান, একসময়ের প্রশস্ত ও প্রমত্তা চিলাই দখলদারদের, দূষণকারীদের কবলে পড়ে এখন পরিণত হয়েছে সরু, মরা খালে। নদী ভরাট করে কোথাও বাড়িঘর, কল-কারখানা এবং কোথাও কৃষিজমি বানিয়েছে প্রভাবশালীরা। নগরীর দেশীপাড়া, ভুরুলিয়া, কালা শিকদারের ঘাট ও ভাওয়াল রাজ শ্মশান এলাকায় দখল হয়েছে সবচেয়ে বেশি। অতীতে, ছোট বেলায় আমরাই দেখেছি, চিলাই নদীর টলটলে পরিষ্কার পানি। নদীতে প্রচুর দেশি মাছ পাওয়া যেত। জেলেরা নদীতে মাছ ধরতো। বর্ষায় নদীতে পানি থাকলেও শুকনো মৌসুমে পানির দেখা মেলে না। পরিবেশ আন্দোলন নেতা অধ্যাপক আনোয়ার সাদাত বলেন, এক সময় স্থানীয় অনেক লোকজন এই নদী থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন নদীতে মাছ তো দূরের কথা, ব্যাঙ বা পোকাও নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status