প্রথম পাতা

সরজমিন মুগদা হাসপাতাল

রোগীদের অভিযোগ দালালদের দৌরাত্ম্য

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

৩১ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

রাজধানীর ৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের সেবা নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। বেশির ভাগ সময়ই পাওয়া যায় না ডাক্তার, নার্স এমনকি হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। আধুনিক যন্ত্রপাতি ও সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা পাচ্ছেন না এখানে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে শুরু করে চিকিৎসকদের কাছ থেকে দুর্ব্যবহার পাওয়ার কষ্টের কথা বলছেন রোগীরা। আছে দালালের দৌরাত্ম্যও।

সকালে থেকে হাসপাতালের এক কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘুরে সেবা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সরজমিন দেখা যায়, বহির্বিভাগ ও পরীক্ষা নিরীক্ষার টিকিট কাউন্টার বেলা ১টা না বাজতেই বন্ধ হয়ে গেছে। যদিও বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালের কাউন্টারগুলো খোলা রাখার কথা। হাসপাতালের পরিবেশও অপরিচ্ছন্ন। প্রতিদিন নিয়মিত পরিষ্কার না করার অভিযোগ রোগীদের। অভিযোগ রয়েছে- রোগী দেখার চেয়ে ব্যক্তিগত কাজে বেশি ব্যস্ত থাকেন তারা। হাসপাতালের কাউন্টারগুলো সুবিশাল ও পরিপাটি থাকলেও সংশ্লিষ্ট স্টাফদের সময়মতো দেখা মিলে না। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা বলেন, আসার পর থেকে শুনি ডাক্তার নাস্তা খেতে নিচে নামছে। ওটি রুমে গেছে।

বেলা ১টা বাজতে ২ মিনিট বাকি। কাউন্টারের সামনে জটলা। রোগীরা হৈ চৈ করছেন। প্যাথলজি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আসেন নীলুফার ইয়াসমিন। বয়স ৫০। তিনি বলেন, ১১টার পরই এই কাউন্টার বন্ধ হয়ে যায়। তিনি হাসপাতালের স্লিপ দেখিয়ে বলেন, ঠিকমতো পরীক্ষা করতে পারি না। এখানে শুধু হয়রানি আর হয়রানি। রোগীরা সেবা পান না। এখানকার স্টাফরা শুধু সরকারি বেতন খায় আর রোগী এলে দুর্ব্যবহার করে। কাজের কাজ কিছুই করে না। তার পাশেই একই বয়সের আরেক রোগী শামসুন্নাহার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, চারদিন ধরে তিনি রিপোর্টের জন্য ঘুরছেন। কিন্তু রিপোর্ট পাচ্ছেন না। ফলে ওষুধও নিতে পারছেন না। পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট নিতে এলেই কাউন্টারের লোককে খুঁজে পাওয়া যায় না। মাণ্ডা থেকে আসা এই রোগী হার্ট ও ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। ঘুরতে ঘুরতে তিনি আরো রোগী হয়ে গেছেন বলে অভিযোগ করেন। শামসুন্নাহার অভিযোগ করে বলেন, এখানকার স্টাফদের ব্যবহার খুব খারাপ। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় করানো হয় আল্ট্রাসনোগ্রাম।

এখানে ১২টা ১৫ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, কাউন্টারে সাদা কাগজে হাতে লিখা রিসিট কাটা বন্ধ। অর্থাৎ ওইদিন আর কেউ পরীক্ষা করাতে পারবে না। এ সময় রোগীরা কাউন্টারের সামনে হৈ চৈ করলে কাউন্টার থেকে বলা হয় জরুরি ছাড়া আর হবে না। কাউন্টারের সামনে দাঁড়ানো ইকরাম হোসেন বলেন, এখানে হয়রানি ছাড়া কিছুই হয় না। তিনি জানান, আগের দিন এসেও আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে পারেননি তিনি। হাসপাতালটির ৩৪২ নম্বর কক্ষে আল্ট্রাসনোগ্রাম করানো হয়। ১২টা ২০ মিনিট। রুমের ভেতর থেকে একজন নারী কর্মকর্তা এসে দরজার কাছে অপেক্ষারত রোগীদের বললেন, ১২টার পর আর পরীক্ষা নিরীক্ষা হবে না। তখন উপস্থিত প্রায় পাঁচ-সাতজন রোগী নানা প্রতিক্রিয়া দেখান। মিডিয়ার উপস্থিতি টের পেয়ে ওই নারী উপস্থিত রোগীদের একজনকে দূরে ডেকে নেন এবং পরে আসতে বলেন।

হাসপাতালটির ৫ম তলায় ১২টা ৩৪ মিনিটে গিয়ে দেখা যায়, ডিউটি ডাক্তার (কার্ডিওলজির) রুম ফাঁকা। আশেপাশের নার্সদের জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, চিকিৎসকদের বিষয় তারা কিছু বলতে পারবেন না। ৮ম তলায় ৮১২ নম্বর কক্ষে বসেন চিকিৎসক মাহমুদ হাসান খান। সাড়ে ১২টার দিকে তার রুমে গিয়ে দেখা যায়, রুমের দরজা খোলা কিন্তু ডাক্তার নেই। রোগীরা ডাক্তারকে খুঁজছেন। বহির্বিভাগে ৩১২ নম্বর কক্ষে ১২টা ১৩ মিনিটে গিয়ে রোগীরা চিকিৎসকের দেখা পাননি। আশেপাশের আনসারদের ডাক্তারের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তারা এড়িয়ে যান। ৩১৯ নম্বর কক্ষে ১২টা ১০ মিনিটে গিয়ে ইউরোলজির ডাক্তার দেখাতে পারেননি রোগীরা। দুপুর ১টার দিকে গিয়েও ওই রুম খোলা থাকলেও চিকিৎসকের দেখা মিলেনি। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চালু হওয়া এই হাসপাতালের অধিকাংশ টয়লেটই নোংরা। ৫ম তলায় টয়লেটের দরজায় লেখা, এটা নষ্ট। মহিলার ব্যবহার করছে পুরুষদের টয়লেট। রোগীরা অভিযোগ করেন, নতুন হাসপাতাল। অথচ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব। এর থেকে দুর্গন্ধ ছাড়ায়। মনে হচ্ছে দেখার কেউ নেই।

হাসপাতালটিতে আছে দালালের দৌরাত্ম্য। ৫ম তলায় কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে কথা হয় দালাল জাহিদের সঙ্গে। তিনি নিজেই বর্ণনা দেন তার কর্মকাণ্ডের। তিনি বলেন, তাকে টাকা দেন কয়েকজন নার্স। হাসপাতাল থেকে নয়। এখানে ভর্তি রোগী অন্য জায়গায় নিয়ে গেলে টাকা পাওয়া যায়। এতে নার্সরাও টাকা পান। গত ২৯শে জানুয়ারি বিভিন্ন অনিয়মের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আরটিভির দুই সংবাদকর্মী হাসপাতালটির কর্মচারীদের হাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status