চলতে ফিরতে
হিমালয় কন্যা তেঁতুলিয়ায় বাড়ছে পর্যটক
সাবিবুর রহমান সাবিব, পঞ্চগড় থেকে
২৬ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন
প্রতি বছর হিমালয় কন্যা তেঁতুলিয়ায় বাড়ছে দেশি-বিদেশি পর্যটক ও পিকনিক পার্টি। তবে এবার সংসদ নির্বাচনের কারণে একটু দেরিতে পর্যটক ও বনভোজনে লোকজন আসতে শুরু করেছে। শুধু শীত মৌসুমে সুযোগ থাকার জন্য ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে পর্যটকরা হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে আসে। রংপুরের ভিন্নজগৎ ও দিনাজপুরের স্বপ্নপুরীর মতো এখানে বড় ধরনের পিকনিক স্পট না থাকার জন্য সব বয়সী মানুষের আনন্দের ঠিকানা তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো সংলগ্ন পিকনিক কর্নার। পিকনিক কর্নারে বর্তমানে থাকছে দিনভর মানুষের কোলাহল। অনেকদিন বসে থাকার পর এখানকার মৌসুমী ব্যবসায়ীরাও সরব হয়ে উঠেছে। খালি চোখে হিমালয়ের নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করার একমাত্র উপযুক্ত স্থান তেঁতুলিয়া। মেঘমুক্ত আকাশে শীতের সকালের সোনা রোদ যখন হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টে ঠিকরে পড়ে, তখন এই অনাবিল দৃশ্য দেখে জুড়িয়ে যায় দু’চোখ। শুধু হিমালয় নয়, বাড়তি পাওয়া হিসেবে ভারতের কাঞ্চনজংঘা পাহাড় দেখা যায় একই সফরে। এ দৃশ্য দেখার জন্য দূরবীন বা বাইনোকুলারের প্রয়োজন নেই। খালি চোখেই এই নয়নাভিরাম অপার দৃশ্য উপভোগ করা যায়। ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর উত্তর পাশে দাঁড়িয়ে এই অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করতে এখানে আসেন অনেকেই। তিন দিক ভারত বেষ্টিত তেঁতুলিয়া উপজেলার নৈসর্গিক দৃশ্য চোখে পড়ার মতো। তেঁতুলিয়া বাজার থেকে মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। মানুষ পারাপার ছাড়াও যেখান দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে পণ্য আনা নেয়া হচ্ছে। দিনভর শ্রমিকরা ব্যস্ত মালামাল লোড-আনলোড করতে। বাংলাবান্ধা থেকে দেখা যাবে পাহাড়ের আঁকাবাঁকা সাপের মতো সড়ক দিয়ে ভারতের দার্জিলিং যাতায়াত করছে অসংখ্য ছোট ছোট গাড়ি। আর রাতে পাহাড়ের গা ঘেঁষে পাহাড়িদের বাড়ির বৈদ্যুতিক বাতির আলো ঠিক যেন আকাশের তারার মতোই দেখা যায়। রওশনপুরে ‘আনন্দধারা’ নামে রয়েছে জেমকন লিমিটেডের সুন্দর সুন্দর কিছু স্থাপনা ও কাজী অ্যন্ড কাজী টি এস্টেট। অনুমতি ছাড়া এ স্থাপনা ও টি এস্টেট দেখা যায় না। বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সমতল ভূমির অনেক চা বাগান। এরই ফাঁকে মানুষের বসতবাড়ি। উঁচু টিলার উপর অবস্থিত ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর গা ঘেষে পশ্চিম দিক দিয়ে চলে গেছে সীমান্ত নদী মহানন্দা। দক্ষিণে কিছুদুর যাওয়ার পরই নদীটি আবারো ভারতের পেটে ঢুকে গেছে। বাংলাবান্ধা থেকে শুরু করে পুরাতন তেঁতুলিয়া পর্যন্ত নদীতে দিনভর পাথর আহরণ করছে পাথর শ্রমিকরা। সকালের সূর্যের তেজ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নজরে আসবে শ্রমিকরা নদী থেকে পাথর তুলছে। নদীর মাঝখানে দু’দেশের সীমানা হলেও মাঝে মধ্যে তারা চলে যাচ্ছে ভারতীয় অংশে। নদীর ওপারেই প্রতিবেশী ভারতের অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করার মতো। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে ভারতের পল্লী এলাকার নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখের সামনে ভাসবে। সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার পাশ দিয়ে তৈরি করা সড়কে বিএসএফের টহল দেখা যায় সব সময়। সিলেটের মতো বড় বড় চা বাগান না থাকলেও এখানে চোখে পড়বে ছোট ছোট অনেক চা বাগান। সারা দিন এসব বাগানে কাজ করছে হাজারও শ্রমিক। কেউবা পাতা তুলছে আবার কেউবা বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত। এছাড়া সেখান থেকে পঞ্চগড়ে ফিরে আসার সময় দেখা যায় ঐতিহাসিক কিছু স্থাপনা। সদর উপজেলার ভিতর গড় এলাকায় প্রাচীন পৃত্থু রাজার রাজধানী ও মহারাজার দীঘি। সেখানে এখন খনন কাজ করছেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এর অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুসনে জাহান। তার তত্ত্বাবধানে চলছে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের কাজ। ভ্রমণকারীদের মধ্যে অনেকে আটোয়ারী উপজেলার কয়েকশ’ বছরের পুরোনো মির্জাপুর শাহী মসজিদ, ইমামবাড়া, বারো আউলিয়া মাজার ও দেবীগঞ্জের বোদেশ্বরী মন্দির ভ্রমণ করেন। অনেকে আবার বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে খুব সহজে ভারতে যান। এই রুটটি দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতের দার্জিলিং, কাশিয়াং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, সিকিমের গ্যাংটক ও নেপাল যাওয়া সহজ ও সুবিধাজনক। শিলিগুড়ির এনজেপি রেলস্টেশন ও বিমানবন্দর দিয়ে ভারতের যে কোনো প্রদেশে খুবই সহজে যাতায়াত করা যায়।