বাংলারজমিন

বিলগুলো অতিথি পাখিতে মুখরিত

মো. নজরুল ইসলাম, মধুপুর (টাঙ্গাইল) থেকে

২৪ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:০২ পূর্বাহ্ন

শীত এলেই জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা অতিথি পাখিতে। আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি অতিথি পাখি। এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে। পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। তবে ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে কিছু কিছু পাখি প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতি বছর এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে। প্রকৃতির অপার লীলায় প্রতি বছর টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ঘাটাইলে অতিথি হয়ে আসে ভিনদেশি পাখিরা।
মধুপুর কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল গ্রামের বড়বিল এবং ঘাটাইল শহরের অদূরেই ধলাপাড়ার চাপড়া বিলে আসতে শুরু করেছে অতিথি পাখি। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে চাপড়া বিল। দর্শনার্থীরাও ভিড় করছেন পাখি দেখতে। দিনের ক্লান্তি শেষে কাজের ফাঁকে অনেকেই ঘুরতে আসছে ঘাটাইলের চাপড়া বিলে। বৈরী পরিবেশ থেকে টিকে থাকার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছে এখানে, এই বিলে। মধুপুর ও ঘাটাইলের বেশ কিছু জায়গায় অতিথি পাখির আগমনে কলকল শব্দে ভরে উঠে জলাশয়গুলো। ঘাটাইলের চাপড়া বিল এবং নেদার বিল নামক দুটি বড় জলাশয়ে প্রতি বছর কয়েকশ’ অতিথি পাখি আসতে দেখা যায়। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঝাঁক বেঁধে একসঙ্গে আকাশে উড়ার দৃশ্য বিমোহিত করে দর্শনার্থীদের। তবে গতবারের তুলনায় এবার অতিথি পাখির আগমন কম। কারণ হিসেবে দর্শনার্থীরা জানান, এ বিলে মানুষের আনাগোনা অনেক বেশি। তার ওপর এখানে ভাড়ায়চালিত  শ্যালো মেশিন চলার কারণে পাখিরা ভয়ে আসতে চায় না। সরেজমিনে চাপড়াবিল এবং নেদারবিলে গিয়ে চোখে পড়ে এমনই দৃশ্য। প্রায় বেশিরভাগ জায়গায় ধান চাষের জন্য জমি  তৈরি করছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাখিগুলো বসার জন্য তেমন কোনো সুযোগ না পাওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে বেড়াচ্ছে।
চাপরা বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাজিদুল হাসান সিহাব এবং সুজন মানবজমিনকে বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর এখানে বেশ কয়েকবার ঘুরতে আসি। বিশেষ করে শীতের সময়টা অনেক ভালো লাগে। অতিথি পাখিরা আসে, তাদের কিচিরমিচির শব্দ একটা সুরের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় একটু কম পাখি দেখা যাচ্ছে।’ জহিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন মানবজমিনকে  জানান, ‘আমাদের এখানে গত কয়েক বছর ধরে অনেক অতিথি পাখি আসছে। আমরা পাখিগুলোকে কোনো রকম বিরক্ত করি না। এগুলো বিলে থাকলে দেখতেও ভালো লাগে।’ এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া মানবজমিনকে বলেন, ‘আসলে অতিথি পাখিরা শীতের সময় অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসে। প্রতি বছর তারা ঘাটাইলের বিভিন্ন ছোট বড় জলাশয়ে বিশেষ করে ধলাপাড়ার নেদার বিল এবং চাপড়া বিলে এসে অস্থায়ী বসতি গড়ে। এটা আমরা দেখেছি। তবে শ্যালো মেশিনের শব্দে খুব একটা প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না। তিনি আরো বলেন, তবে বেশি শব্দ হলে পাখিরা ভয়ে নাও আসতে পারে। অতিথি পাখিরা যেখানে তাদের খাবারের সুবিধা বেশি পাবে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল পাবে সেখানেই যাবে। আমাদের উচিত পাখিগুলোকে কোনো প্রকার অত্যাচার না করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status