প্রথম পাতা

ইভিএমের কারচুপি জেনে ফেলায় খুন হন বিজেপি নেতা!

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

ভারতে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন হ্যাক করা হয়েছিল। প্রযুক্তির  মাধ্যমে বদলে দেয়া হয়েছিল নির্বাচনের ফল। আর ইভিএমের মাধ্যমে ভোট কারচুপির এই তথ্য জানতেন বিজেপি নেতা গোপিনাথ মান্ডে। এ জন্যই ২০১৪ সালে তাকে হত্যা করা হয়। এমন বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা। লন্ডনে এক প্রেস কনফারেন্সে স্কাইপে’র মাধ্যমে তিনি আরো দাবি করেন, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ব্যাপক কারচুপি হয়েছে।

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে বদলে দেয়া হয়েছে ভোটের ফলাফল। ক্ষমতায় বসানো হয়েছে বিজেপিকে। তার এই দাবি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে। নিহত গোপিনাথ মাণ্ডের ভাইপো ধনঞ্জয় মাণ্ডে চাচার মৃত্যুর পুনঃতদন্ত দাবি করেছেন। আর এই তদন্ত ‘র’ বা সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে পরিচালনার দাবি তুলেছেন তিনি। টাইমস নিউজ, নিউজ ১৮সহ ভারতের প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমগুলোর খবরে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জেতার কয়েক সপ্তাহ পরেই নয়াদিল্লিতে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন গোপীনাথ মাণ্ডে। ওই দুর্ঘটনা তদন্ত করে দেখেছে সিবিআই। এটা নিছক দুর্ঘটনাই ছিল বলে তাদের তদন্তে রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু সোমবার সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা লন্ডনে এক প্রেস কনফারেন্সে গোপীনাথ হত্যাকাণ্ড নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য তুলে ধরেন।

আনন্দ বাজারের খবরে বলা হয়েছে, ইউরোপের ইন্ডিয়ান জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। এতে সিনিয়র কংগ্রেস নেতা কপিল সিবালও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সাইবার বিশেষজ্ঞ সৈয়দ সুজা বলেন, গত লোকসভা নির্বাচনে ব্যবহৃত ইভিএম মেশিন হ্যাক হয়েছিল। বিজেপি নেতা গোপীনাথ মাণ্ডে সে কথা জানতে পেরেছিলেন। এই খবর যেন ফাঁস না হয়ে যায়, সেজন্যই তাকে হত্যা করা হয়। গোপীনাথের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বুঝতে পেরে তদন্তকারী কর্মকর্তা তানজিল আহমেদ এফআইআর দাখিল করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরে তিনি আত্মহত্যা করেন। শুধু গোপীনাথ মাণ্ডেই না, হ্যাকিংয়ের বিষয়টি জানতেন আরেক সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ। সে কারণে তাকেও খুন হতে হয়। গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয় তাকে। শুধু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনই নয়, ইভিএমে কারচুপি করা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং গুজরাটের বিধানসভার নির্বাচনেও।

সৈয়দ সুজা ইভিএম হ্যাকিংয়ের প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। বলেন, নিম্ন কম্পাঙ্কের তরঙ্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে কারচুপি করতে বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) সেলকে সাহায্য করেছিল রিলায়েন্স কমিউনিকেশন্স। ইভিএমে কারচুপি করা যায় কি-না তা জানতে চেয়ে তখন আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির তরফে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল বলেও দাবি করেছেন সুজা।

কীভাবে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ব্যবহার করা ইভিএমের তথ্য বদলে দেয়া যায়, তা হাতে-কলমে করে দেখিয়েছেন এই তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ। তার দাবি, ব্লু টুথ প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএমের তথ্য বদলানো সম্ভব নয়। কিন্তু গ্রাফাইট দিয়ে তৈরি ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ইভিএমের তথ্যভাণ্ডার বা ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই ট্রান্সমিটার ব্যবহার করা হয়েছিল। ভারতের নির্বাচনী কমিশনাররা দাবি করেছেন, কোনো তার (ওয়্যার) ছাড়া ইভিএমের ডেটাবেস-এ পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব নয়। কিন্তু সৈয়দ সুজার দাবি, প্রায় সাত হার্টজের নিম্ন কমপাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করে ইভিএম ডেটাবেস-এ ঢুকে পড়া সম্ভব। একমাত্র বিশেষ সামরিক প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এই নিম্ন কমপাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন সৈয়দ সুজা। বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের কাছে এই যন্ত্র ছিল বলে দাবি সুজার। সারা দেশের ৯টি জায়গা থেকে এই নিম্ন কমপাঙ্কের তরঙ্গ পাঠিয়ে বদলে দেয়া হয়েছিল ইভিএমের সমস্ত তথ্য। যারা এই কাজ করেছিলেন, তারা নিজেরাও জানতেন না যে তাদের কাজে বদলে যাচ্ছে সমস্ত নির্বাচনী ডেটাবেস।

তবে তার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে বিজেপি। এই অভিযোগকে কংগ্রেসের ভয়ঙ্কর হ্যাকিং প্রদর্শনী বলে আখ্যা দিয়েছে দলটি। ভারতের নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, নির্বাচনে যে ধরনের ইভিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে, এগুলো হ্যাক করা সম্ভব না। সৈয়দ সুজার এমন দাবির কারণে তাদের সেই অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সৈয়দ সুজার বক্তব্যকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আখ্যা দিয়ে নির্বাচন কমিশন এই দাবিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। এক বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন বলেছে, ‘আমরা জানতে পেরেছি, লন্ডনে বলা হয়েছে আমাদের ব্যবহার করা ইভিএমে কারচুপি করা যায়। এই বক্তব্য উস্কানিমূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আমাদের ইভিএম বানায় ভারত ইলেকট্রনিকস লিমিটেড এবং ইলেকট্রনিক করপোরেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড। এ জন্য ২০১০ সালেই বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করেছি আমরা। আমাদের বিরুদ্ধে এই মন্তব্য করার জন্য আইনি ব্যবস্থা নেয়া যায় কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ইভিএম দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর টুইট করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিরোধী দলগুলোর তরফে নির্বাচন কমিশনের কাছে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৬শে মে মোদি সরকারের পঞ্চায়েত এবং গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন গোপীনাথ মুণ্ডে। এক সপ্তাহ পরেই, ৩রা জুন নয়াদিল্লির কাছে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তার। সৈয়দ সুজার দাবি, এটি দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিত খুন। ইভিএমে কারচুপির ঘটনা ফাঁস করার কথা ভাবছিলেন গোপীনাথ। সেই কারণেই সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status