আওয়ামী লীগ মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত: রিজভী

আওয়ামী লীগের সত্তা ও স্বরূপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও ভুয়া ভোটের সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিনিয়ত বলছেন- ‘এত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বাংলাদেশে আগে কখনো হয়নি। বিএনপি নেতারা পরাজিত হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।’ আসলে আওয়ামী লীগের সত্ত্বা ও স্বরূপ বরাবরই মিথ্যা দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কিত নির্বাচনে পরিণত হয়েছে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আগের রাতে ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, কৃত্রিম লাইন তৈরি করে ভোটাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে না দেয়া, মহাজোট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেয়া, ভোটের ফলাফল সরকারদলীয় প্রার্থীদের পক্ষে ঘোষণ করা, নির্বাচনের আগে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হয় কারাগারে নয়তো এলাকাছাড়া করা, বিরোধী প্রতীক প্রদর্শনে বাধা- এসবই হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভুয়া ভোটে এমপি-মন্ত্রী হয়ে এখন বিতর্কিত ও কলঙ্কিত নির্বাচনকে জায়েজ করতে আওয়ামী লীগ নেতারা বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। এ নির্বাচনে আসলে বাংলাদেশের জনগণকে প্রতারিত ও পরাজিত করা হয়েছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের আলোচনাকে ভিন্নখাতে ঘুরিয়ে দিতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন। তিনি বলেন, প্রতিদিন দেখছি- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারা দেশে ছোটাছুটি করছেন। ওবায়দুল কাদেরের দৌড়াদৌড়ি কেবল ফটোসেশনেই সীমাবদ্ধ। প্রতিদিন সড়কে লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে পড়ছে সড়কে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে নিহত হচ্ছে প্রায় ২০ জন মানুষ। দুঃশাসনের কবলে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে সড়ক ব্যবস্থা। রাজধানীতে একদিকে তীব্র যানজট, অন্যদিকে পরিবহন নৈরাজ্যে অতিষ্ঠ মানুষ। বিএনপির এ নেতা বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় সরকারের লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। সড়ক ও পরিবহনমন্ত্রী প্রতিদিন বিরোধী দলকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছেন। মনে হচ্ছে তাকে এ বিষয়ে উপদেষ্টা করা হয়েছে। তিনি গণপরিবহনে নৈরাজ্য ও অকালে হাজার হাজার প্রাণ ঝরে যাওয়া রোধ করতে ব্যর্থতার জবাব দেবেন কি?
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে তিনি গণতন্ত্রের সমাধির ওপর কোন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চান? আসলে শেখ হাসিনার মুখে সুশাসনের অর্থ হলো দেশব্যাপী মৃত্যুর দোলাচলে এক মরণ-হরণের অভিযান, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া। বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা এবং বাংলাদেশের সব বিরোধী দল ও মতকে একত্রে ধ্বংস করে দেয়া। কারণ তিনি নাটকীয় ভঙ্গিতে যা বলেন, তার উল্টোটাই বাস্তবায়ন করেন। পৃথিবীতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করার রেকর্ড একমাত্র শেখ হাসিনারই। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা সাড়ম্বরে এখন ভালো ভালো উদ্যোগের কথা বলে মানুষের মন থেকে তার অপকীর্তি মুছতে পারবেন না। সময় থাকতে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। নইলে সরকারের বিপজ্জনক অবতরণ হবে। তাই দ্রুত নিজে পদত্যাগ করে দেশে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে দিন। এ সময় রিজভী বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ অসংখ্য নেতাকর্মীর  বিরুদ্ধে সোমবার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবিলম্বে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের প্রচার সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা আসার পথে ফেনীর লালপুল এলাকা থেকে সোমবার র‌্যাব-৭ এর সদস্যরা তুলে নিয়ে গেছে। কিন্তু তাকে কোথায় রাখা হয়েছে কিংবা তাকে আটকের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আমি এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটাকে জনসমক্ষে হাজির করার জোর দাবি জানাচ্ছি। সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নাজমুল হক নান্নু, শাহিদা রফিক, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।