বাংলারজমিন

দামের শঙ্কা নিয়েই বোরো চাষে কৃষক

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

 পরপর দু’বছর ধান চাষ করে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষকের। আগামীতেও ন্যায্য দাম পাওয়ার শঙ্কা তাদের মনে। তবুও কৃষকরা একধরনের হতাশা বুকে নিয়েই পুরোদমে বোরোর মাঠে আবাদে নেমে পড়েছেন। তীব্র শীত ও কনকনে হিমেল ঠাণ্ডা বাতাস উপেক্ষা করে দিনরাত জমিতে সেচ দেয়া, জমি তৈরি, বীজ ওঠানোসহ বোরো চাষ সংক্রান্ত নানা কাজে ব্যস্ত তারা। মাঠের ব্যস্ততা দেখে ও তাদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, চলতি বোরো মৌসুমে আবাদের মধ্য দিয়ে তারা বিগত সময়ের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান। বিগত বছরের বোরো ফসলে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় হাইল হাওরের ফসলি জমি ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছিল। একইভাবে বিগত আমন ফসলেও অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু এলাকার ফসলি জমি বিনষ্ট হয়ে পড়ে। এত ক্ষতির পরও ওই আমন ফসলের বছর ধরে ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় অনেক কৃষক অন্য ফসলের দিকে ঝুঁকছেন। ধানের দাম না পাওয়ায় বোরো চাষে তেমন আগ্রহ নেই এই উপজেলার কৃষকের। গত মৌসুমে বোরো চাষের খরচ না ওঠায় এবার এখানকার কৃষকরা এ ফসল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তারা বোরো চাষের পরিবর্তে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। গত বছর বোরো ফসল হয়নি বললেই চলে। ধান কৃষকের ঘরে উঠাতেই পারেনি এবং বাজারে দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হয় তাদের। আশিদ্রোন গ্রামের কৃষক শাকির আহমেদ জানালেন, ‘এক কেয়ার (৩০ শতাংশ) জমিতে ১৬-১৭ মণ পেয়েছি। এর মধ্যে ১০ মণ ধান স্বর্ণমুসুরী ৪৫০ দরে সাড়ে চার হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ এক কেয়ার জমিতে ফসল ফলাতে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা খরচ হয়। এ কারণে এবার রোপা আমন ঘরে তোলার পর লোকসান পুষিয়ে নিতে উপজেলার ডেঙ্গারবন, লাখাইছড়া, তেলিআব্দা, খাসগাঁও, ভূজপুর, পাত্রিকুল, রাজপাড়া, মাইজদিহি, ভাগলপুর, মনারগাঁও, বৌলাশীর, গর্ন্ধবপুর গ্রামে গম, আলু, সরিষা, বিটি বেগুন ছাড়াও বিভিন্ন ফসল চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। এ অঞ্চলের অনেক জমিতেই এখনও এসব ফসল থাকায় বোরো চাষ শুরু করা হয়নি। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার তারা ব্রি ধান-২৮, বিআর ১ থেকে ২৬, মিনিকেট, জিরাশাইল ছাড়াও ২০ থেকে ৩০ ধরনের হাইব্রিড জাতের ধান চাষের জন্য বীজ রোপণ করেছেন। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত এসব জাতের ধানের চারা রোপণ কাজ চলবে। কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০২০ সনের মৌসুমে বোরো ধানের আবাদ হাওরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৬১৭ হেক্টর, হাওর বহির্ভূত বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬০৫২ হেক্টর, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৩৮,২০৭ টন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত হাইল হাওরে অর্জিত বোরো আবাদ হয়েছে হাইব্রিড ৭ হেক্টর, উফশী ৩ হাজার ৩১০ হেক্টর। হাওরর বাইরে বোরো আবাদ হাইব্রিড ১৫ হেক্টর ও উফশী ৪৫০ হেক্টর ফসলি জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে। কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত বছর ২০১৮-২০১৯ সনের হাওরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬৯৭ হেক্টর, হাওরের বাইরে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৮৯৮ হেক্টর। ওই বছরে হাওরে অর্জিত বোরো আবাদ ছিল ৩,৪৪৭ হেক্টর, হাওর বর্হিভূত বোরো আবাদ হয়েছিল ৬৩৫৫ হেক্টর। উৎপাদন ছিল ৩৬,৪৪১ টন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status