প্রথম পাতা

‘ইতিবাচক ধারায়’ ফিরলে ছাত্রদলকে সহাবস্থানের সুযোগ দেবে ছাত্রলীগ

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

২২ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে    পৃষ্ঠা ৮ কলাম ৪
পরিবেশ সংসদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় চার ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এসময় তিনি পরিবেশ সংসদের সদস্য ছাত্র সংগঠনগুলো কর্তৃক উত্থাপিত মতামত গ্রহণ করেন। সেগুলো সিন্ডিকেটে তুলে যৌক্তিক হলে মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনের ভিসি কার্যালয় সংলগ্ন আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল রুমে সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ভিসির সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রাব্বানীসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষগণ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে ছাত্র সংগঠনগুলোর পক্ষে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের দুই গ্রুপ, জাসদ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র আন্দোলনসহ ১৪টি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকগণও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব সংগঠন হলের বাইরে ফ্যাকাল্টিতে ভোটকেন্দ্র স্থাপন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য ভোটকেন্দ্রে সিসি টিভি স্থাপন, ক্ষমতার ভারসাম্য, সহাবস্থান ও প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বয়স শিথিলের দাবি করে। অন্যদিকে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন ছাড়া সভায় উপস্থিত থাকা অন্য নেতারাও প্রার্থিতার ক্ষেত্রে বয়স শিথিল করে ৩০ বছর করার দাবি করেন। অন্যদিকে সাদ্দাম হোসাইন যারা কেবল নিয়মিত ছাত্র তাদেরই নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। এছাড়া ছাত্রলীগ হলে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি করে। এদিকে সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সভায় গঠনতন্ত্র ও আচরণবিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা সিন্ডিকেট সভায় উঠবে।

সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এসময় তিনি আগামী মার্চে নির্বাচন প্রদানের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আমরা একটা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে তফসিল দেয়া হবে। আমরা এবং আমাদের সিন্ডিকেট সদস্যরা একটা বিষয়ে একমত যে, যারা ভোট দিতে পারবে তারা যেন প্রার্থী হতে পারে। আচরণবিধির বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সে বিষয়টি দেখবেন। জানা গেছে, সভায় যারা দ্বিতীয়বারের মতো মাস্টার্স করছে, যারা ডাকসু এবং হল সংসদের ফি দেয়, এদেরকে ভোটার করার দাবি জানান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। তিনি সান্ধ্যকালীন ছাত্রদেরও ভোটার করার দাবি জানান। এসময় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হলেও চাকরির বয়সের (৩০) সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ভোটার করা হোক। আর সেখানেই এর বিরোধিতা করে কেবল নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নির্বাচনের পক্ষে মত দেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক। আলোচনাসভা শেষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম হল কেন্দ্রিক তাই ভোটকেন্দ্র হলের মধ্যে করা হোক।

ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে কিন্তু ছাত্রদলকে ইতিবাচক ধারায় আসতে হবে। তাহলে তারা সহাবস্থান করতে পারবেন। বয়স নিয়ে তিনি বলেন, যে কেউ প্রার্থী হতে পারে। তবে তাদের বয়সসীমা ৩০ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রদল অন্তর্কোন্দলের কারণে ক্যাম্পাস ছেড়েছে। তাদের মধ্যে যারা নিয়মিত শিক্ষার্থী তারা প্রভোস্টের মাধ্যমে হলে থাকলে আমাদের সমস্যা নেই। ডাকসু নির্বাচনে নিয়মের বাইরে দুর্নীতি করে এখানে কোনো কিছু হওয়া সম্ভব নয়। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের পক্ষে থেকে মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হলগুলোতে সহাবস্থানের দাবি করা হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে যারা ডাকসুর ফি প্রদান করে তাদের সবাইকে সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থানান্তরের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্য করার দাবি জানানো হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। তার পাশে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে আসলে ছাত্রলীগ নেতারা আমাদের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন সময় মারধর করে। এসময় তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। তিনি ডাকসুর সভাপতির (ভিসি) ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীয় করার দাবিও জানান।

এসময় ছাত্রদল নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যাবে বলে ঘোষণা দেন আকরাম হোসাইন। ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী বলেন, ভোটকেন্দ্র ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবনে আনার জন্য প্রশাসনের কাছে অধিকাংশ ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছেন। আমরাও একই দাবি জানিয়েছি। একই সঙ্গে যারা ডাকসু ও হল সংসদের জন্য ফি দেন, তাদেরকে ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানানো হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি। যাতে সবার জন্য সহাবস্থান থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আচরণবিধি কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি যারা এই দুই কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই একটা দলের। আমরা চাই সব সংগঠনের নেতাদের পরামর্শ নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা হোক।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status