এক্সক্লুসিভ

ক্যানসার প্রতিরোধে ‘রঙিন ভুট্টা’

মো. আলাউদ্দিন কবির, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে

২২ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:০৭ পূর্বাহ্ন

বিশ্বের সফল জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক, কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা ড. আবেদ চৌধুরী উদ্ভাবন করেছেন ‘রঙিন ভুট্টা’। ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করবে এই ভুট্টা। ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টার পুষ্টিমান খুবই বেশি। এটিকে নিউ নিউট্রেশন বলা যেতে পারে। ভুট্টায় কেরোটিন থাকার কারণে মূলত এর রং হলুদ হয়। তাই তিনি রঙিন ভুট্টার ক্লোন উদ্ভাবন করেন। একত্রে সব রঙের ভুট্টাসহ আলাদা আলাদা রঙের ভুট্টা উদ্ভাবন করেন। রোববার কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের আয়োজনে উপজেলা পরিষদ সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় উপজেলার সফল কৃষক, সাংবাদিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্মুখে নতুন উদ্ভাবনী ‘রঙিন ভুট্টা’ নিয়ে বিস্তর কথা বলেন। রঙিন ভুট্টা ক্যানসার প্রতিরোধক বলে জানান ড. আবেদ চৌধুরী। বিশেষ করে শিশুদের কাছে এই ভুট্টা ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাবে। শিশুরা ভুট্টা খেলে তাদের দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পূরণ হবে। ড. আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা সারা বছরে ৪ বার চাষ করা যায়। আবার খরিফ-১ ও খরিফ-২ মৌসুমেও ভুট্টা চাষ করা যায়। হাইব্রিড ভুট্টা একটি পদ্ধতির মাধ্যমে বেরিয়ে আসতে পারে। বেরিয়ে আসা ভুট্টা ফলন হবে হাইব্রিডের সমান। ফলে ভুট্টাচাষে কৃষকদের আরো উৎসাহী করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। ড. আবেদ চৌধুরী কুলাউড়া উপজেলার ভুট্টাচাষীসহ সফল কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে ভুট্টার বীজ বিতরণ করেন। প্রত্যেকটি বাড়ির আশেপাশে এবং পতিত জায়গায় ভুট্টা চাষের আহ্বান জানান। তিনি আরো বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিদেশে ছিলাম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেবা দিয়েছি। এবার সেই সেবা নিজের দেশকে তথা কুলাউড়াকে দিতে চাই। বিশেষ করে কুলাউড়ার কৃষি বিভাগকে এগিয়ে নিতে আলাদা সময় দেবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন।
ড. আবেদ চৌধুরী কৃষি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের দেশে বিজ্ঞানের কারণে কৃষির উৎপাদন বেড়েছে, জমির কারণে নয়। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো যেভাবে জমির উপরিভাগ (পলি) অংশ ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে, মিল ফ্যাক্টরি করে ধানী জমিকে ধ্বংস এবং নগরায়ন করা হচ্ছে তাতে কৃষি বিভাগ আগামীতে হুমকির    পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
মুখে পড়বে। কৃষিকে নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে, সেই সঙ্গে নতুন জাতের উদ্ভাবন করতে হবে। তিনি সব ধরনের গবেষণা দেশ ও দেশের বাইরে করেন। বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)- এর সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজ করার অনুমতি পেয়েছেন।
নরমাল ভুট্টার সঙ্গে জিনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরনের রং তৈরি করে এই ভুট্টাকে কালার করা হয়েছে। জেনিটিক্যালি মডিফাইড করে এ ধরনের ভুট্টা তৈরি করা হয়। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বলেন, এটা বৈজ্ঞানিক বিষয়, বিজ্ঞানী ছাড়া এটা কেউ বুঝবে না। আমরা চাইলে যেকোনো ফসলকে যেকোনো রং দিতে পারি অথবা যেকোনো ফসলের রং তৈরি করা সম্ভব।  
মতবিনিময় সভায় কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আ স ম কামরুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও কৃষি অফিসার জগলুল হায়দারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন শিকাগোর অনারারি কনস্যুল জেনারেল মুনির চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিটি লিডার শামছুল ইসলাম, প্রবীণ সাংবাদিক সুশীল সেনগুপ্ত, কুলাউড়া ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম শামীম, সিনিয়র সাংবাদিক এম শাকিল রশীদ চৌধুরী, প্রেস ক্লাব কুলাউড়ার সভাপতি আজিজুল ইসলাম, উপজেলার শ্রেষ্ঠ চাষী আব্দুল জব্বার প্রমুখ। উল্লেখ্য, আবেদ চৌধুরী একজন বাঙালি জিন বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানলেখক এবং কবি। তিনি বাংলাদেশ এবং অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং ক্যানবেরা শহরে বসবাস করেন। তিনি ১৯৫৬ সালের ১লা  ফেব্রুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের কানিহাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। আবেদ চৌধুরী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে, যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন স্টেট ইনস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি এবং ওয়াশিংটন  স্টেটের ফ্রেড হাচিনসন ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউটে। ১৯৮৩ সালে পিএইচডি গবেষণাকালে তিনি  রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তিনি অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিনবিশিষ্ট মিউটেন্ট ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়। তার এই আবিষ্কার এপোমিক্সিস-এর সূচনা করেছে যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়। তিনি দেশীয় নতুন উদ্ভাবন হাফিজা-১, জালালিয়া, তানহা ও ডুম- এ চার জাতের ধানের উদ্ভাবন করে বেশি ফলন পেয়েছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট হেলথ, ম্যাসাচুসেট্‌?স ইনস্টিটিউট অফ  টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত গবেষকদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অনেক পেশাদারী জার্নালে তার  লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া তিনি সহজবোধ্য ভাষায় বাংলা ও ইংরেজিতে অনেক নিবন্ধ লিখেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status