বাংলারজমিন

দূষিত পানির কারণে...

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে

১৯ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণাঞ্চলে ইরি বোরোর মওসুম শুরু হয়েছে। শহরের দূষিত পানির কারণে খুলনার আড়ংঘাটা ও ডুমুরিয়া থানা এলাকার বিল ডাকাতিয়ায় হাজার হাজার একর জমির ইরি চাষ ব্যাহত হয়ে পড়েছে। শহর এলাকা থেকে খালে ঢুকে পড়া দূষিত পানির কারণেই ইরি চাষ করতে পারছে না কৃষকরা। এ কারণে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ইরি চাষ অনিশ্চিত হওয়ায় কৃষকরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার সিনিয়র কেমিস্ট মো. কামরুজ্জামান সরকার বলেন, গুব্দা নদী ও ডাকাতিয়া বিলের পানি সংগ্রহ করা হয় না। তবে ময়ূর নদীর পানি সংগ্রহ করা হয়। ময়ূর নদীতে যে পানি এসে পড়ে, একই রকম দূষিত পানি গুব্দা নদী ও বিল ডাকাতিয়ায় গিয়ে পড়ে। দূষিত পানি এতই বিষাক্ত- যা জলজ প্রাণী, মাছ ও ধান চাষের জন্য সম্পূর্ণ অনুপযোগী।
ময়ূর নদীর পানি পরীক্ষার ফলাফলে জানা গেছে, প্রতি লিটার পানিতে ১ দশমিক ৪ মিলি গ্রাম, আবার কোথাও ১ দশমিক ৫ মিলি গ্রাম পার লিটার ডিও (দ্রবিভূত অক্সিজেনের পরিমাণ) লেভেল। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা অনুযায়ী পানির ডিও লেভেলের মাত্রা ৪ দশমিক ৫ মিলি গ্রাম থেকে ৮ মিলি গ্রাম পর্যন্ত থাকলে জলজ প্রাণী, মাছ ও ধান চাষের উপযোগী। এর নিচে পানির মাত্রা থাকলে তাতে মাছ-ধান কোনোটাই চাষ করা যায় না। সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর খালিশপুর, রায়েরমহল, বয়রা, রেলিগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর এলাকার ড্রেনের পানি আবু নাসের হাসপাতালের পাশ দিয়েই খালে প্রবেশ করে। দেয়ানা আড়ংঘাটা লতা খামারবাড়ী ধাইগ্রাম বিলপাবলা আলাইপুর কুলটি এলাকার খাল দিয়ে গুব্দা নদীতে প্রবেশ করছে। দৌলতপুর, খানজাহান আলী থানা এলাকার পানি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে খুদিয়ার খাল হয়ে একই নদীতে প্রবেশ করছে। এ সমস্ত পানি খালে প্রবেশ করার পর মাছ মরে যাচ্ছে। আর এই পানি ইরি ধান চাষে ব্যবহার অনুপযোগী। এছাড়াও পানিতে বর্জ্য ও কাদা মাটি বেশি পরিমাণ থাকায় খাল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে এই পানির কারণে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে। এছাড়া মহেশ্বরপাশা মেইন সড়কের ড্রেন দিয়ে পানি তেলিগাতী খুঁটির ঘাট হয়ে ডাকাতিয়া বিলে গিয়ে পড়ছে। দূষিত এ পানিতে নেমে কৃষকরা ধান চাষ করতে পারছেন না। বিষাক্ত এ পানিতে নামলে হাত-পা চুলকায়। পা ফুলে যায়। মাছও মরে যায় বলে জানান কৃষক বাকি উল্লাহ। তিনি বলেন, শহর থেকে নেমে আসা এ পানি তার ইরি ধানের ক্ষেতে প্রবেশ করছে। বিল ডাকাতিয়ার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের পানি বিষাক্ত হয়ে পড়ায় এখন তেমন মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। একই কথা বললেন প্রতিবেশী অপর কৃষক আবদুুর সাত্তার খান। তিনি বলেন, গত বছর বৃষ্টি না হওয়ার কারণে প্রতিটা মাছের ঘেরে পানির পরিমাণ খুবই কম ছিল। একজন কৃষক প্রতিবিঘা জমি আট থেকে দশ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে ধান, মাছ এবং সবজি চাষ করে থাকেন। এই তিন ফসল বিক্রি করেই তাদের জমির মালিককে লিজের টাকা পরিশোধ করে খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে হয়। তাছাড়া মাছ চাষ করতে হলে প্রচুর টাকা ব্যয়ে মাছের খাবার কিনতে হয়, এই টাকা সংগ্রহ করতে বেশির ভাগ কৃষকই চড়া সুদে ঋণ গ্রহণ করে থাকে। অনাবৃষ্টির কারণে কোনো কৃষকই চিংড়িসহ কোনো মাছ বিক্রি করে অর্থ ঘরে তুলতে পারেনি। ধান এবং সবজির ওপরই এখন তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা। এই ফসল শুধুমাত্র নাব্য হারানো খালে দূষিত পানি প্রবেশ করার কারণে উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না।
৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাস্টার আবদুুস সালাম বলেন, নগরী থেকে নেমে আসা দূষিত পানি কার্ত্তিককুল বিল সংলগ্ন ড্রেন দিয়ে ডাকাতিয়া বিলের বাইপাস সড়কের ড্রেনে পড়ছে। সেখান থেকে পানি খাল-বিল ও জমিতে প্রবেশ করছে। এ দূষিত ও বিষাক্ত পানিতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এটা সত্য। তবে এখনই এ পানি পরিশোধনের কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি।
দেয়ানা এলাকার কৃষক পান্নু মোল্লা বলেন, গত বছর ৪ একর জমি থেকে ধান মাছ সবজিসহ কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারিনি, এতে ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই কথা বললেন লতা এলাকার কৃষক সমর গাইন।
বিল পাবলা এলাকার ঘের মালিক কবির মোড়ল জানান, তিনি ৪০ বিঘা জমি থেকে কোনো ফসলই ঘরে তুলতে পারেননি। খামারবাটি এলকার রমেশ বিশ্বাসও অনুরূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাদের একটাই দাবি, নগরীর দূষিত পানি প্রবেশ বন্ধ করা এবং খাল পুনঃখনন করে নাব্য ফিরিয়ে আনা।
কেসিসি’র প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল আজিজ বলেন, কেসিসি প্রাথমিক পর্যায়ে নগরীর ভাসমান বর্জ্য ড্রেন দিয়ে খাল-বিল ও নদীতে না যেতে পারে তার জন্য বড় বড় ড্রেনের মাথায় রড দিয়ে নেট  তৈরি করে তা স্থাপন করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বাকি ড্রেনের মাথায় এ নেট স্থাপন করা হবে। এর পর প্রতিটি ড্রেনের মাথায় ওয়াটার ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা করার জন্য প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা পাস হলে নগরীর দূষিত পানিও ড্রেন দিয়ে খাল-বিল ও নদীতে যেতে পারবে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status