বাংলারজমিন

এ বছরও হচ্ছে না ফসল রক্ষা বাঁধ

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি

১৯ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:১০ পূর্বাহ্ন

এ বছরও হচ্ছে না দোয়ারাবাজার উপজেলার পাহাড়ি নদী চিলাইয়ের ফসল রক্ষা বাঁধ। চলতি বছরে চিলাই নদীর ডান তীরের উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের গোজাউড়া গ্রাম হতে সুন্দরপশী পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করায় অরক্ষিতই থেকে যাচ্ছে হাওর। ফলে অতীতের ন্যায় এবারও কপাল পুড়বে গোজাউড়া হাওর পাড়ের কৃষকদের। প্রতিবছর সামান্য বৃষ্টিপাত হলেই পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়ে ওই হাওরের হাজার হাজার হেক্টর বোরো ও আমন ফসলহানি ঘটে। গত বছর আগাম বন্যা ও পাহাড়ি ঢলে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও এ বছর ফসল রক্ষা বাঁধ না হওয়ায় প্রায় সাড়ে চার হাজার হেক্টর বোরো-আমন ফসলহানির শঙ্কায় রয়েছে এখানকার হাজার হাজার কৃষক। স্থানীয় কৃষকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিলাই নদীর গোজাউড়া হতে সুন্দরপশী পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণে লিখিত আবেদন করার পর এখানে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে ফসল রক্ষা বাঁধে উপজেলায় দুই কোটি ১১ লাখ ৬ হাজার টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মোট ২৩টি প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে ২০টি প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যা হতে চলতি বছরে বোরো ফসল রক্ষায় বিভিন্ন হাওরে সংশ্লিষ্ট পিআইসি গণ ইতিমধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্ন হলে প্রাণ বাঁচবে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষকদের।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর এ উপজেলায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের নামে অপ্রয়োজনীয় অনেক বেড়িবাঁধের প্রকল্প গ্রহণ করে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে এবং বাঁধের প্রয়োজনীয়তা খতিয়ে দেখে এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাতিলও করা হয়েছে। অথচ এ বছরও সোনালী ফসলের মাঠ হিসেবে খ্যাত উপজেলার গোজাউড়া হাওরের ফসল রক্ষায় চিলাই নদীর ডান তীরের বেড়িবাঁধ নির্মাণে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। শেষমেশ এখানে ফসল রক্ষা বাঁধ না হলে হুমকির মুখে পড়বে গোজাউড়া হাওর সহ বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ।
উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের বরকতনগর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম, জমসেদ আলী জানান, চলতি বছরে গোজাউড়া হাওরের ফসল রক্ষায় চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ না হওয়ায় কপাল পুড়বে এখানকার হাজার হাজার কৃষকের। পাহাড়ি ঢলে অকাল বন্যায় ফসলহানি ঘটে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষয়তির সম্মুখীন হব আমরা।
গোজাউড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান মনাই বলেন, ফসল রক্ষা বাঁধ না হওয়ায় হুমকির মুখে রয়েছে এখন আমাদের গোজাউড়া হাওর। অকাল বন্যায় আমাদের একমাত্র সম্বল বোরো ফসল বিনষ্ট হলে আমাদের বাঁচার উপায় থাকবে না।
ইউপি সদস্য আলতাব হোসেন বলেন, অতীতে ওই হাওরের ফসল রক্ষায় এখানে বেড়িবাঁধ দেয়া হলেও গত বছর এবং চলতি বছরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আর এ কারণে হাওরপাড়ের কৃষকরা এখন আতঙ্কে রয়েছে।
এ ছাড়া মহব্বতপুর, শিমুলতলা, কাওয়াঘর, রাজনগর গ্রামের অসংখ্য কৃষক আহাজারি করে বলেছেন, চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ না হলে গোজাউড়া হাওরের হাজার হাজার কৃষকের জীবন জীবিকার শেষ সম্বল বোরো ফসলহানি ঘটবে। আর আমাদের গোলায় সোনালী ফসল না উঠাতে পারলে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।
সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাস্টার বলেন, চিলাই নদীর ডান তীরের গোজাউড়া হতে সুন্দরপশী গ্রাম পর্যন্ত ফসল রক্ষা বাঁধ না দিলে অকাল বন্যায় হতে কোনোভাবেই হাওরের সোনালী ফসল রক্ষা করা যাবে না। আমি এখানকার কৃষকদের পক্ষে এখানে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন করেছি। দ্রুত প্রকল্প গ্রহণ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেড়িবাঁধ নির্মিত না হলে বৃষ্টি হলেই পাহাড়ি ঢল নেমে কৃষকদের বোরো ফসল বিনষ্ট হয়ে যাবে।
পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম জানান স্থানীয় কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে চিলাই নদীর ডান তীরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে।  
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, চিলাই নদীর ডান তীরে গোজাউড়া হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে কৃষকদের পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করা হয়েছে। সরজমিন পরিদর্শন করেছি। এখানে  বাঁধের প্রয়োজনীয়তা আছে। প্রকল্প গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।       
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status