প্রথম পাতা

ধর্ষিতার কান্না বললেন, আমি বিচার চাই

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী বয়স তার ১৯। চেহারায় কিশোরী বয়সের ছাপ স্পষ্ট। দাঁড়িয়ে আছেন স্বামী ও শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে। মুখে নীল মাস্ক। দুঃখের প্রতীক নীল রংটি দিয়েই ঢেকে রেখেছেন মুখ। চোখে ভয় স্পষ্ট। দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না বেশি সময়। খানিক বাদে বসে পড়লেন মেঝেতে। ১৯ বছরের মেয়েটির বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গায়। বিয়ে হয়েছে সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়নে। তার স্বামীর রয়েছে একটি সেলুন। এই সেলুনই তাদের আয়ের একমাত্র উৎস। তার স্বামী স্থানীয় বাসিন্দা রায়হানের কাছ থেকে টাকা ধার করে একটি মোবাইল ফোন কিনেছিলেন।

সেই টাকা সময়মতো পরিশোধ করতে না পারায় ক্ষিপ্ত হয় রায়হান। গত ১১ই জানুয়ারি বাড়ি ফিরছিলেন তারা। এই সময় রাত ৮টার দিকে পথ রোধ করে রায়হান ও আরেক স্থানীয় বাসিন্দা আলামিন। নিয়ে যায় নির্জন স্থানে। এরপর মেয়েটির জীবনে নেমে আসে দুঃস্বপ্ন। তার স্বামীকে আটকে রেখে পাঁচজন ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। সে রাতেই পরিবারটি বিচারের আশায় ছুটে যায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে। সেদিনই সাভার থানায় একটি মামলা করেন। মামলা নং ৪৪। পরদিন চিকিৎসার জন্য আসেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি)। ১২ই জানুয়ারি থেকে ১৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত চিকিৎসা নেন এখানে। একদিন পরেই গতকাল শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে ফের আসেন হাসপাতালে।

কিন্তুশুধুমাত্র চিকিৎসাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় তাদের। হাসপাতালে পুনরায় ভর্তির কথা বলা হলে ওসিসি ও থানা থেকে কাগজ আনতে বলা হয়। এই অবস্থায় গতকাল তারা ফের বাড়ি ফিরতে বাধ্য হন। নির্যাতিতা মেয়েটির কথা বলতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল। তার পরেও কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, চিকিৎসা শেষে একদিনের জন্য বাড়িতে ফিরে যেন অন্যায় করে ফেলেছেন। তাকে এলাকাবাসী সব সময় আড় চোখে দেখছে। আবার নানা জনের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে যেন ক্লান্ত। অনেকে নির্মম ঘটনা নিয়ে হাসি তামাশাও করেছে। এই কথা বলতে যেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জানান, পুলিশের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয়াটা ছিল আরো বিব্রতকর। নির্যাতিতা মেয়েটি উচ্চস্বরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমি বিচার চাই। আমি বিচার চাই।

বর্তমানে মামলার দুই আসামি রায়হান ও আলামিন গ্রেপ্তার রয়েছে। বাকি তিনজন পলাতক। তার স্বামী জানান, মামলাটি মিটিয়ে নেবার জন্য তাগাদা দেয়া হচ্ছে তাকে। শুধু তাই নয় মামলা উঠিয়ে নেবার জন্য টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়। তার কাছে এসেছে নামে বেনামে বেশ কিছু ফোন। আবার গ্রেপ্তার দু’জন থানাতে আটক থাকা অবস্থাতেও তাকে হুমকি দেয় বলে জানান তিনি। সাভার থানার এসআই কৃষ্ণ রায় মামলা ও গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আটক দুইজন দুই দিনের রিমান্ডে রয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status