শেষের পাতা

হাসি ফিরলো শাহনাজের

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

এক মাস আগেই মোবাইল অ্যাপভিত্তিক বাহন সার্ভিস উবারে অ্যাকাউন্ট খুলে স্কুটি চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেছিলেন শাহনাজ আক্তার। রাজধানীর মিরপুরে দুই কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় বৃদ্ধ অসুস্থ মা, ছোট বোন এবং দুই মেয়ে নিয়ে বসবাস তার। বড় মেয়ে নবম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। সম্প্রতি ছোট বোনের চাকরির সুবাদে কিছুটা স্বস্তি আসে শাহনাজের। তবুও মা ও দুই মেয়ের ভরণপোষণ চালাতেই শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাত্রী  নিয়ে ছুটে চলার পথ বেছে নিয়েছেন। সেটা হয়তো অনেকেরই অজানা ছিল। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে উবারের পেজে সংগ্রামী শাহনাজকে নিয়ে একটি লেখা ভাইরাল হলে জানা হয় শাহনাজকে।

গত মঙ্গলবার জীবনের সঙ্গে লড়াই করা এই নারীর একমাত্র হাতিয়ার স্কুটিটি চুরি হয়ে যায়। ভেঙে পড়েন শাহনাজ। ভেবেছিলেন এগিয়ে যাওয়ার যাত্রা এখানেই থেমে গেছে। হয়তো দুই মেয়ের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যাবে। বাইক হারিয়ে দিশাহারা শাহনাজ আইনের আশ্রয় চাইতে ছুটে যান থানায়। তবে নিরাশ করেনি তেজগাঁও থানা পুলিশ। তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই অভিযান চালিয়ে স্কুটিটি উদ্ধার করা হয়। স্কুটি ফিরে পেয়ে বেজায় খুশি শাহনাজ। আবারো হাসি ফিরলো তার মুখে। গতকাল দুপুরে ডিএমপির তেজগাঁও জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের কার্যালয়ে স্কুটির চাবি হাতে পেয়ে শাহনাজের সেই হাসিমাখা মুখ দেখা গেছে।

মঙ্গলবার বিকালে স্কুটি চুরি হওয়ার পর থেকে সঙ্গে থাকা হেলমেটটি মাথায় পরেই ছিলেন এই সংগ্রামী নারী। সংবাদ সম্মেলন শেষে শাহনাজ বলেন, হেলমেট যতক্ষণ আমার মাথায় ছিল, মনে হয়েছে বাইকটি (স্কুটি) আমার কাছে আছে। হেলমেটকেই আমার বাইক মনে হয়েছে। তাই হেলমেট মাথা থেকে খুলিনি। এখন আমি আমার রিজিক ফেরত পেয়েছি। স্কুটি পেয়ে সেটি ওড়না দিয়ে মুছতে শুরু করেন শাহনাজ। স্কুটি উদ্ধারের জন্য তেজগাঁও বিভাগের পুলিশ সদস্য ও সহযোগিতার জন্য সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান তিনি। শাহনাজ বলেন, আমার ভাবনার বাইরে ছিল বাংলাদেশের পুলিশ চাইলে এতকিছু করতে পারে। একটা অসম্ভবকে তারা সম্ভব করেছে। আমি প্রতিদিন রাতে ইন্ডিয়ান চ্যানেলে ক্রাইম পেট্রোল দেখি। সেখানে এরকম দেখানো হয়। তিনি বলেন, বাইকটি চুরি হওয়ার পর আমার মাও আমাকে বকা দিয়েছে। তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছেন, কেন আমি চাবি দিলাম তাকে? আমাকে সবাই অন্য কোনো পেশা খুঁজতেও বলছিল। কিন্তু আমি এটা করতেই পছন্দ করি। কারণ, আমার দুই সন্তানকে বাসায় দেখার কেউ নেই।

সন্তানদের বাবাও আমি, মাও আমি। আমি সন্তানদের কষ্ট দিতে চাই না। এই বাইক চালিয়ে আমি আমার সন্তানদের  রিজিকের ব্যবস্থা করি। ওদের স্কুলের খরচ চালাই। প্রতিদিন সকালে ওদের টিফিনের খরচ বাবদ একশ’ টাকা রেডি রাখতে হয়। আমি থানায় গিয়ে পুলিশকে বলেছি, এই গাড়িটাই আমার রিজিক, আমার গাড়ি আমাকে এনে দিন। শাহনাজ এই বাইক চালানো সংশ্লিষ্ট একটি চাকরি চেয়ে বলেন, আমি এই কাজটি করতেই পছন্দ করি। আমাকে কেউ এরকম একটি চাকরি দিলে ভালো হয়। আমি হাত পেতে টাকা নিতে পছন্দ করি না। আমাকে অনেকে টাকা দিয়ে সাহায্য করবেন বলেছেন। আমি তাও  নেইনি। এটা আমার নীতিতে নেই।

গত দুইদিন ধরে রাইড শেয়ার করতে পারেন নি শাহনাজ। বিষয়টি পুলিশের বিবেচনায় ছিল। তাই ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের পক্ষ থেকে শাহনাজের দুই সন্তানের জন্য ১০ হাজার টাকা দেন ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার। তিনি বলেন, আমরা আসামি জুবায়দুল ইসলাম জনিকে আদালতে পাঠিয়েছি। তার রিমান্ড চাইবো। রিমান্ড পেলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

শাহনাজ তার স্কুটির পেছনে শেরেবাংলা নগর থানার এক নারী পুলিশ সদস্যকে বসিয়ে চালিয়ে ডিসি’র অফিস থেকে বের হয়ে যান। মঙ্গলবার বিকালে চালানোর নাম করে শাহনাজের স্কুটিটি ছিনতাই করে জুবায়দুল ইসলাম জনি নামের এক যুবক। রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানাধীন মানিক মিয়া এভিনিউতে রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এদিন রাতেই শাহনাজ শেরেবাংলা নগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় মামলা হয়।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ১০ই জানুয়ারি মিরপুরের শ্যামলী এলাকায় জনির সঙ্গে শাহনাজের পরিচয়। এ সময়  জনি নিজেকে আরেক অ্যাপভিত্তিক যাত্রী সেবা প্রতিষ্ঠান পাঠাও-এর চালক বলে পরিচয় দেয়। সে শাহনাজকে চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারবে বলে জানায়। তার কথায় আশ্বস্ত হলে সে ১৫ই জানুয়ারি দুপুর ১২টার সময় শাহনাজকে খামারবাড়ি এলাকায় আসতে বলে। তার কথামতো স্কুটি নিয়ে যথাসময়ে সেখানে এলে হঠাৎ সে শাহনাজের স্কুটিতে উঠে বসে। এরপর তার অনুরোধে বিমানবন্দর এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে ফের মানিক মিয়া এভিনিউয়ের রাজধানী উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে আসে তারা। এরপর একটি টং দোকানে জনির সঙ্গে চা পান করেন শাহনাজ। এ সময়  জনি স্কুটি চালানোর ইচ্ছা প্রকাশ করলে শাহনাজ তাকে অনুমতি দেন। এরপর চালানোর নামে কৌশলে জনি স্কুটিটি ছিনতাই করে পালিয়ে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status