শেষের পাতা

এমপিদের শপথের বৈধতা রিটের আদেশ আজ

স্টাফ রিপোর্টার

১৭ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:০৯ পূর্বাহ্ন

একাদশ জাতীয় সংসদের এমপিদের শপথের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানি শেষ হয়েছে। আজ আদেশ দেবেন হাইকোর্ট। শুনানিতে রিট আবেদনের পক্ষে দশম সংসদের মেয়াদ অবসানের আগেই নবনির্বাচিত সংসদ   
সদস্যদের (এমপি) শপথ গ্রহণে সংবিধান লঙ্ঘনের যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে। ওদিকে রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তি দেখিয়ে বলেছে রিট আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ পক্ষ নন। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রিট আবেদনটি করা হয়নি বিধায় এটি চলতে পারে না।
দুইপক্ষের শুনানি শেষে গতকাল বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ আদেশের এ দিন রেখেছেন।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।  
বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে রিটের শুনানির জন্য দাঁড়ান আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তার কাছে শুরুতে হাইকোর্ট জানতে চান রিট আবেদনকারীর পরিচয় কি? তিনি কি এখানে আছেন? জবাবে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, তিনি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তবে আদালতে উপস্থিত নেই।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, রিট আবেদনটির সঙ্গে সাংবিধানিক ব্যাখ্যার প্রশ্ন রয়েছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদের দফা ৩ এবং ১৪৮ অনুচ্ছেদের দফা ৩ সম্পর্কিত। ১২৩ (৩) দফা থেকে পড়ে তিনি বলেন, এই অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বাধা রয়েছে সংসদের মেয়াদ অবসান না হওয়া পর্যন্ত নবনির্বাচিতরা শপথ নিবেন না। এর সঙ্গে ১৪৮(৩) অনুচ্ছেদের সংযুক্তি রয়েছে। গত ৩ জানুয়ারি এমপিরা শপথ নিয়েছেন। এটা সংবিধানের এই দুটি অনুচ্ছেদের উল্লিখিত দফার লঙ্ঘন।
আদালত বলেন, আপনি বলতে চাইছেন, শপথের ফলে ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার লঙ্ঘন হয়েছে।

মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দশম সংসদের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় নবনির্বাচিত এমপিদের শপথ গ্রহণের সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে। সংসদের মেয়াদ গণনা হবে দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন থেকে পাঁচ বছর। সে হিসেবে ২৯ জানুয়ারি মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হবে।
তিনি গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ থেকে নির্বাচিতদের প্রজ্ঞাপন প্রকাশের বিষয়টি তুলে ধরলে আদালত বলেন, প্রজ্ঞাপন প্রকাশে কোথোও কোনো বাধা দেখছি না।
এরপর ব্যারিস্টার সাকিব মাহবুব রিট পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন, তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি এখনো দশম  সংসদ ভেঙ্গে দেননি। ওই সংসদ এখনো বিদ্যমান। একটি সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই নবনির্বাচিতরা শপথ নিয়েছেন। এতে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে।
আদালত বলেন, যা ঘটেছে তা ইতিমধ্যে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।  

এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, প্রধান নর্বাচন কমিশনার (সিইসি) পদটি সাংবিধানিক পদ। তিনি সংবিধান মেনে চলা ও রক্ষার শপথ নিয়েছেন। সেটা না করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে সংবিধান থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে তিনি সংবিধান অনুসরণ করেননি। ২৭ বা ২৮ জানুয়ারি প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করা হলে সংবিধান লঙ্ঘন হতো না। যা সাংবিধানিক পদের ব্যক্তির কাছে অপ্রত্যাশিত।
এ পর্যায়ে মাহবুবে আলমের বক্তব্য জানতে চান আদালত। তিনি বলেন, সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে রিট আবেদনটি দায়ের হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হলে তিনি সংক্ষুব্ধ হবেন। এ রিটের সঙ্গে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্নের সম্পর্ক নেই। আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ নন।
আদালত বলেন, রিটে দশম সংসদ থাকা অবস্থায় একাদশ সংসদের নির্বাচিতদের শপথের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে একটি সংসদ থাকা অবস্থায় আরেকটি সংসদের শপথ হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, একটি সংসদ রয়েছে। এখানে সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রয়োজন নেই। প্রশ্ন হলো রিট আবেদনকারী কিভাবে সংক্ষুব্ধ হলেন?

তখন এজলাসে উপস্থিত আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এ রিট আবেদনটি কোন ধরনের রিট। এটি জনস্বার্থের মামলা নয়। আবার রিট অব কো ওয়ারেন্টো নয়।
এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, নবনির্বাচিত এমপি ও মন্ত্রিসভা শপথ নিয়েছেন। এ রিট চলতে পারে না। কারণ রিট আবেদনকারী সাবেক এমপিও নন আবার এমপি প্রার্থীও ছিলেন না।
এরপর রিট আবেদনটি কোন ধরনের এখতিয়ারে পড়বে তা নিয়ে আলোচনা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এমপির পদ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রিট অব কো ওয়ারেন্টো হবে। কিন্তু সেটা উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু রিট আবেদনটি ঘোষণামূলক হয়েছে।

এরপর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, নির্বাচনের পর  ৩০ দিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন ও শপথ নিতে হবে। এমপিদের শপথ ও মন্ত্রিসভার গঠনের পর সংসদের যাত্রা শুরু হয়ে গেছে। তিনি সংসদের কার্যপ্রণালী থেকে পড়ে বলেন, সংসদের কার্যক্রম শুরু হলে এটা নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যায় না।
তখন আদালত বলেন, ভাগ্য ইতিমধ্যে নির্ধারিত হয়ে গেছে।

এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকন আবার দাঁড়িয়ে বলেন, এটা সাংবিধানিক সমস্যা। আমরা শপথ চ্যালেঞ্জ করেছি।
আদালত বলেন, রিট আবেদনকারী সংক্ষুব্ধ কিভাবে হয়েছেন? কারণ তিনি নির্বাচনে প্রার্থীও হননি।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে কারা সংক্ষুব্ধ হবেন তার বিস্তারিত বলেছেন আপিল বিভাগ। রিটে আবেদনকারী বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে পক্ষ হয়েছেন। তিনি মনে করেন রাষ্ট্র সংবিধান অনুযায়ী চলা উচিত। এখানে সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে কিনা সেটাই গুরত্বপূর্ণ। সাংবিধানিক আদালত হিসেবে হাইকোর্টের এ প্রশ্ন খতিয়ে দেখতে হবে। এরপর আদালত কাল আদেশের দিন ধার্য করেন।

দশম জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই সংসদ সদস্যদের (এমপি) শপথ নেয়া অসাংবিধানিক ও বেআইনি দাবি করে গত সোমবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। রিট আবেদনকারী হলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. তাহেরুল ইসলাম (তৌহিদ)। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য।

রিট আবেদনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এমপিদের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ, শপথের আহ্বান জানানো এবং শপথের প্রজ্ঞাপন কেন অসাংবিধানিক এবং আইনগত কৃর্তত্ববহির্ভূত হবে না তার কারণ জানাতে রুল জারির এবং রুল বিচারাধীন থাকা পর্যন্ত সংসদ অধিবেশন ডাকা থেকে বিরত থাকতে এবং সংসদ সদস্য পদের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। বিবাদী করা হয়েছে স্পিকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সংসদ সচিবকে।
এর আগে গত ৮ই জানুয়ারি একাদশ সংসদের এমপিদের শপথ গ্রহণের প্রজ্ঞাপন বাতিল বা প্রত্যাহার চেয়ে লিগ্যাল নোটিশ দেন রিট আবেদনকারী। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এমপিদের শপথের প্রজ্ঞাপন বাতিল বা প্রত্যাহার না হওয়ায় রিট আবেদনটি দায়ের করা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status