বাংলারজমিন

গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ড্রেনেজ সমস্যায় ধুঁকছে কিশোরগঞ্জ বিসিক

আশরাফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ থেকে

১৭ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

সরকারি উদ্যোগে ১৯৮৭ সালে কিশোরগঞ্জ বিসিক প্রতিষ্ঠা হলেও এখনো পায়নি পূর্ণাঙ্গ রূপ। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া এলাকায় প্রায় ২০ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত বিসিক শিল্প নগরীটিতে রয়েছে ১৫০টি প্লট। যার মধ্যে ১০টি প্লট এখনো খালিই রয়ে গেছে। বরাদ্দ দেয়া মোট ৬৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে মাত্র ২৯টি ইউনিট। এগুলোও গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি ও ড্রেনেজ সমস্যার কারণে এখন ধুঁকছে। ফলে সাহস পাচ্ছেন না নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা। বিসিক সূত্রে জানা গেছে, মোট ৬৪টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে ২৯টি ইউনিট উৎপাদনে থাকলেও বাকি ৩৫টি ইউনিট এখনো উৎপাদনে যেতে পারেনি। এসবের মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরুই হয়নি ৯টি ইউনিটের। এছাড়া বন্ধ বা রূগ্ন অবস্থায় রয়েছে ৬টি ইউনিট। এছাড়া নির্মাণাধীন রয়েছে ৭টি, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও উৎপাদনে যায়নি ১১টি এবং মামলা রয়েছে দুইটির। সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, শুধুমাত্র জোরালো উদ্যোগের অভাবে আলোর মুখ দেখছে না কিশোরগঞ্জ বিসিক। অথচ একটু সুনজর দিলেই ঘুঁচবে অন্ধকার, দেখবে আলোর মুখ। প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃৃষ্টি হবে। দরকার শুধু সরকারি পদক্ষেপের।
বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সভাপতি ও এম এম খান ফুডসের স্বত্ত্বাধিকারী আজমল খান জানান, কিশোরগঞ্জে শিল্প উদ্যোক্তার অভাব নেই, অভাব হলো পরিবেশের। কিশোরগঞ্জের বিসিক শিল্পনগরীকে গতিশীল করলে উদ্যোক্তারা সাহস পাবে। তারা বিনিয়োগ করতে সাহস পাবে। কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
আজমল খান বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে আমরা অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এখানে গ্যাস সংযোগের জটিলতার কারণে উৎপাদন খরচ বেশি হয়। ড্রেনেজ এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকার কারণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সুবিধাও পাচ্ছি না।
মেসার্স ইস্টবেঙ্গল ল্যাবরেটরীজের স্বত্ত্বাধিকারী এ কে এম সালেক জানান, গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে কারখানা চালাতে হয়। যেখানে জ্বালানি খরচ ৫ হাজার টাকা হওয়ার কথা, সেখানে গ্যাস সংযোগ না থাকার কারণে খরচ হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। আবার পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার কারণে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎও পাওয়া যায় না।
মের্সাস ক্রীসেন্ট স্টীল ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. জাহাঙ্গীর আলম ভুঁ্‌ইয়া বলেন, বিসিক শিল্পনগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবস্থা শোচনীয়। নেই কোন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুবিধা। এছাড়া সীমানা প্রাচীর না থাকায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়, স্বস্তি পাই না। প্রায় প্রতিদিনই মাদকাসক্তরা এখানে এসে আড্ডা জমায়। এ কারণে শিল্পনগরী এলাকায় একটি পুলিশ বক্স খুবই প্রয়োজন।
কিশোরগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান বেলাল জানান, বিসিকের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। নতুন গ্যাস সংযোগ জটিলতার কারণে অনেক উদ্যোক্তারাই উৎপাদনে যেতে পারছে না। সরকার যদি কিশোরগঞ্জ বিসিকের দিকে সুনজর দেয় তাহলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। কিশোরগঞ্জ তথা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে এই বিসিক।
কিশোরগঞ্জ বিসিকের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ শিল্পনগরীটির বিভিন্ন সমস্যা এবং রুগ্ন দশার কথা স্বীকার করে বলেন, এখানে সবচেয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা গ্যাসের। শিল্পনগরীটিকে গতিশীল করতে হলে অচিরেই গ্যাস সংযোগের প্রয়োজন। তারা এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও জানান। কিশোরগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মো. কামরুল আহসান জানান, বিসিককে গতিশীল করা দরকার। বর্তমান সরকার বিসিককে গতিশীল করার জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।
ইউনিটগুলো কেন উৎপাদনে যাচ্ছে না এ প্রশ্নে মো. কামরুল আহসান বলেন, “গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সমস্যার কারণে শিল্প উদ্যোক্তরা উৎপাদনে যেতে পারছে না। বরাদ্দের অভাবে শিল্পনগরীর অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তবে গত বছরের নভেম্বর মাসে কিশোরগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী পরিদর্শনকালে ঢাকা বিসিকের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ পরিচালক জীবন কুমার চৌধুরী, শিল্প নগরী ও সমন্বয় শাখার উপ মহাব্যবস্থাপক বসির আহমেদ, ঢাকা বিসিকের আঞ্চলিক পরিচালক আহসান হাকিম কিশোরগঞ্জ বিসিকের সমস্যাদি জানতে চেয়েছিলেন তখন অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ড্রেনেজ সিস্টেম নষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যাদি উপস্থাপন করা হয়। উনারা বিষয়গুলো শোনার পর সমস্যাদি খুব শীঘ্রই সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্ত করে যান।”
তিনি আরও জানান, প্রতি অর্থবছরে তিন দিনব্যাপী করে তিনটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা করা হয় নতুন শিল্প উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে। বিনীত ঋণ কর্মসূচীর মাধ্যমে সর্ব্বোচ এক লক্ষ টাকা করে ঋণ দেয়াও হয়ে থাকে।
খালি প্লট সম্পর্কে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা এস. এম. আসলাম কবির জানান, চেম্বার অব কমার্স এবং শিল্পনগরীর উদ্যোক্তাদেরকে নিয়ে শিল্পনগরীতে অব্যবহৃত প্লট এবং নির্মাণাধীন শিল্প ইউনিটের নির্মাণ কাজ নীতিমালা অনুযায়ী সম্পন্ন করে উৎপাদন শুরু করার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া ইতিমধ্যে উদ্যোক্তাদেরকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেয়া হয়েছে। উদ্যোক্তারা চিঠির উত্তর দিয়েছেন। আগামী প্লট বরাদ্দ সভায় বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status