বাংলারজমিন

ইবি ছাত্রীর স্বপ্নভঙ্গ

ইমরান শুভ্র, ইবি থেকে

১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৮:২৭ পূর্বাহ্ন

সম্ভাবনাময় জীবন থেকে ছিটকে গেল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্রী ফাতেমা জান্নাত শান্তা। শিক্ষকের হুমকি আর মানসিক নির্যাতনে ভারসাম্য হারিয়ে গত সাত মাস ধরে ক্যাম্পাস ছাড়া সে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন সেলে বিষয়টি বিচারাধীন থাকলেও দৃশ্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। ডাক্তারের নির্দেশ, ক্যাম্পাসে ফেরা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কারো সঙ্গে কথা বলা যাবে না। নতুবা কোনোদিন সে ভারসাম্য ফিরে পাবে না। পরিবারের কেউও চান না সে আর ফিরে আসুক ইবিতে। এতে আজীবনের জন্য তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্নের মরণ হলো। পরিবারের আক্ষেপ, আমরা তো বিচার পাব না। এখন শুধু ওর একটু সুস্থ স্বাভাবিক জীবন চাই।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ৩০শে জুন বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় কুমারের মানসিক নির্যাতন আর হুমকির শিকার হয় শান্তা। ক্যাম্পাসে এ নিয়ে এখনো মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এ বিষয়ে মানবজমিনসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। অভিযোগ আছে, ওই শিক্ষকের সঙ্গে আরেক ছাত্রীর গোপন সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিবারের দাবি, শান্তার কাছে তার কোনো প্রমাণ না থাকায় এর কোনো সুরাহা হবে না। শুধুমাত্র মুখের কথায় কোনো বিচার করতে নারাজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেল থেকে কয়েক দফায় শান্তাকে তার বাবাসহ ক্যাম্পাসে আসতে বলা হয়। তবে, ডাক্তারি পরামর্শ নিয়ে বিপাকে পড়েছে তার পরিবার। চিকিৎসকরা বলেছেন, তার মানসিক অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। বর্তমানে কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করছে। তবে, ক্যাম্পাসে ফিরলে আবারো সে মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে। যা থেকে সে সুস্থ হয়ে ওঠার সুযোগ নাও পেতে পারে। এদিকে, গত নভেম্বরে তার ২য় বর্ষের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে পরিবারকে না জানিয়ে সে নিজেই বিভাগের সভাপতিকে লিখিত দিয়েছিল। তবে, পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেনি শান্তা। বিভাগীয় সভাপতি ড. সুতাপ কুমার ঘোষ বলেন, ‘আমরা তাকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি। কিন্তু ক্যাম্পাসে না আসলে তো আমরা কিছু করতে পারি না।’ শান্তার ভাই তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘণ্টা মেপে আপুকে ওষুধ খাওয়াতে হয়। কোনোদিন অনিয়ম হলেই মাথার যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। আগের মতো আর তেমন বেশি কথা বলে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমাদের ডেকেছিল। তবে, ডাক্তার তাকে কুষ্টিয়া (বিশ্ববিদ্যালয়ে) যেতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু এমন অবস্থায় তাকে নিয়ে গেলে সমস্যা আরো বাড়বে। যদি সম্ভব হয় তবে ঢাকায় কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করানোর চেষ্টা করবো। শান্তার বাবা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি প্রাইভেট হাসপাতালেও ডাক্তার দেখাচ্ছি। এখন বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নেয়া হচ্ছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে আরো দেড় থেকে দুই বছর লাগবে বলে জানিয়েছে ডাক্তার। আশা ছিল অন্তত তার স্নাতকটা শেষ করানোর।’
নারী নির্যাতন ও যৌন নিপীড়ন প্রতিরোধ সেলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. নাসিম বানু বলেন, ‘আমরা কয়েকবার তাদের ডেকেছিলাম। তারা দুই দফায় সময় চেয়েছে। তারা ক্যাম্পাসে না আসলে তো আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status