বিশ্বজমিন

ভারতে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলের কড়া সমালোচনায় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়

মানবজমিন ডেস্ক

১৫ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১২:০৯ অপরাহ্ন

ভারতে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল, ২০১৬ (বা নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিল)-এর কড়া সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রথম সারির কিছু নাগরিক। তারা আশঙ্কা করেছেন, ভারত সরকারের এমন উদ্যোগে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো বা পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশের মতো ইসলামিক দেশে পরিণত হওয়ার পথ করে দেবে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চল জুড়ে যেমন ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এ বিল নিয়ে, তারই যেন প্রতিধ্বনি উঠেছে তাদের সমালোচনায়। এ বিষয়ে কথা বলেছেন বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় উন্নয়ন বিষয়ক অর্থনীতিবিদ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূত ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্ত, ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ফার্স্টপোস্ট।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, (ভারতের) এই আইনি এ্যকশন আমাদের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যদি এই আইন সংশোধনের একটি উদ্দেশ্য হয় প্রতিবেশী দেশগুলোতে সংখ্যালঘুদের আইনগত নিরাপত্তা দেয়া, তাহলে এর ঠিক উল্টোটা ঘটতে পারে। প্রকৃতপক্ষে, এর ফলে সংশ্লিষ্ট দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান আরো দুর্বল হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জেনেভা ও ভিয়েনায় জাতিসংঘের অফিসেও বাংলাদেশের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ভারতের নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলকে দু’দিকে ধারসম্পন্ন তরবারির সঙ্গে তুলনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং বিশেষ করে হিন্দুরা তাদের মূল মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন বাংলাদেশে। এখন আইনগত এই ব্যবস্থা নেয়া হলে তাদের বিরুদ্ধে যে বৈষম্য আছে তার বিরুদ্ধে লড়াইকে আরো খর্ব করবে এবং দেশের ভিতরে তাদের দীর্ঘ মেয়াদী যে ভবিষ্যত আছে তা হাল্কা করে দেবে। এ ছাড়াই এই আইনগত ব্যবস্থাকে একশ্রেণির মানুষ, যারা স্বার্থ হাসিল করতে চায়, তারা বাংলাদেশ থেকে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ভারতে তাড়িয়ে দেয়ার অজুহাত হিসেবে নিতে পারে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে ৬টি ধর্মীয় সংখ্যালঘু, যারা নির্যাতনের অভিযোগে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন তাদেরকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিল। এর অধীনে এই তিনটি দেশের হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পারসি ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। ভারত সরকার তাদের  নাগরিকত্ব দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে এই অজুহাতে যে, তারা ওই তিনটি দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হাতে নির্যাতনের শিকার।
সরকারের এমন উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাসগুপ্তও। তার সংগঠন হলো বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শীর্ষ স্থানীয়। রানা দাসগুপ্ত বলেছেন, যদি নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন বিলটি ভারতের পার্লামেন্ট পাস করে তাহলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী শক্তি সংখ্যালঘুদের তাড়িয়ে দিতে উৎসাহিত হবে। তারা কোনো ক্ষতিপূরণ ছাড়াই এসব সম্প্রদায়ের জমি ও সহায় সম্পত্তি গ্রাস করবে। এ ছাড়া এই বিলটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে বিপদে ফেলবে এবং বাংলাদেশকে পাকিস্তান বা পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশের মতো ইসলামিক দেশে পরিণত করবে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনসংখ্যা ছিল শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ। ১৯৭০ সালে এই হার কমে দাঁড়ায় প্রায় ২০ ভাগে। বাংলাদেশ জনসংখ্যা পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, সংখ্যালঘুদের শতকরা হার ২০১১ সালে নেমে এসেছে শতকরা প্রায় ১০ ভাগে। রানা দাসগুপ্ত বলেন, এই ব্যুরো এক বছর আগে বলেছে যে, গত ৫ বছরে হিন্দু জনসংখ্যা বেড়েছে শতকরা প্রায় ২ ভাগ। এই হিসাবে বাংলাদেশে এখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় শতকরা প্রায় ১১.৭ ভাগ।
ঐক্য ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ঐক্য ন্যাপ) প্রেসিডেন্ট পঙ্কজ ভট্টাচার্ড বলেছেন, লোকসভায় এই বিল পাস হলে তা বৈষম্যমুলক  ও বিভক্তির রাজনীতিকে উস্কে দেবে, যা ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে যায়। এ বিলের একটি মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশে। এর ফলে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনকে উস্কে দেয়ার একটি ঝুঁকি তৈরি হবে। এ ছাড়া এ বিলের ফলে ভারতের মুসলিমদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। এরই মধ্যে আসামে এ ধরণের ব্যাপক প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status