শেষের পাতা

ভুল ফরিদের দুই মাস কারাভোগ অবশেষে মুক্তি

জিয়া চৌধুরী

১৫ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

ইনিই প্রতারক ফরিদ হোসাইন যাকে পুলিশ খুঁজছে

একটি চেক প্রতারণার মামলায় চট্টগ্রামের বাঁশখালীর ফরিদ হোসাইনের বিরুদ্ধে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার একটি আদালত। ওই মামলায় দুই মাসের সাজা ভোগের পর ঢাকার আরেকটি আদালতের মামলায় আসামি হিসেবে ফরিদ হোসাইনকে হাজির করলে দেখা যায় তিনি মূল প্রতারক ফরিদ হোসাইন নন। কারাভোগ করা ফরিদ হোসাইন ও কারাদণ্ড ঘোষণার পর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার নাটমুড়া গ্রামের ফরিদ হোসাইন আসলে দুজন আলাদা মানুষ। ঢাকার পরিবেশ আদালতের আরেকটি মামলায় কারাভোগ করা ভুল ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করলে বিচারকের নজরে আসে বিষয়টি। ওই আদালতের বিচারক যুগ্ম ও দায়রা  
জেলা জজ মো. শওকত হোসাইন আসামিকে খালাস দিয়ে দ্রুত মুক্তি দিতে ঢাকার জেল সুপারকে নির্দেশও দিয়েছেন।

এমন নির্দেশের পর গতকাল সিএনজিচালক ফরিদ হোসাইন মুক্তি পেয়েছেন বলে কারা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
আদালত  সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগর ৭ম যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালতের চেক প্রতারণার ৮৩৯/২০১৭ নম্বর দায়রা মামলায় আসামি ছিলেন ফরিদ হোসাইন। যার স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে মামলার এজাহারে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার নাটমুড়া গ্রামের কথা উল্লেখ আছে। গত বছরের ২৫শে অক্টোবর মামলার রায়ে আসামি ফরিদকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। ৫ দিন পর ৩১শে অক্টোবর ওই মামলায় আসামির বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়। পরোয়ানা পাওয়ার পর নাটমুড়া গ্রামের সিএনজি অটোরিকশা চালক ফরিদ হোসাইনকে গ্রেপ্তার করে বাঁশখালী থানা পুলিশ। গত ৪ঠা নভেম্বর তাকে আদালতে হাজির করলে কারাগারে পাঠায় আদালত। মহানগর দায়রা জজ আদালতে চেক প্রতারণার এই মামলায় দুই মাস কারাভোগের পর সিএনজিচালক ফরিদ হোসাইনকে ২০১৫ সালের আরেকটি চেক প্রতারণার মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে ঢাকার পরিবেশ আদালতে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। যার দায়রা মামলা নম্বর ৮৫২৮/২০১৫।

এই মামলায় ২০১৭ সালের ৫ই মে প্রতারক ফরিদ হোসাইনকে ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার অর্থদণ্ড দেন আদালত। তবে, এই মামলায় বাঁশখালীর সিএনজিচালক ফরিদকে গ্রেপ্তার দেখাতে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে গত ১লা জানুয়ারি তাকে তলব করেন বিচারক মো. শওকত হোসাইন। জিজ্ঞাসাবাদে আদালত পর্যবেক্ষণ করেন পুলিশের হাতে আটক সিএনজিচালক ফরিদ ও প্রতারক ফরিদ আসলে এক ব্যক্তি নন। মূলত, ভুল করে সিএনজিচালক ফরিদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং বিনা অপরাধে তাকে দুই মাসের কারাভোগ করতে হয়। এদিন, আটক থাকা ফরিদ হোসেনকে মামলা থেকে খালাস দেন আদালত। এবং ঘটনার বিষয়ে ব্যাখা চেয়ে বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী উপ-পরিদর্শক আবদুল মুনাফকে আদালতে তলব করা হয়। গত ১৩ই জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার বিষয়ে ব্যাখা দেয় বাঁশখালী থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তা। নাম ও পিতার নামে মিল থাকায় এবং আসামি নিজেকে নির্দোষ দাবি না করায় সিএনজিচালক ফরিদ হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে এ সময় জানান তারা। তবে, ঘটনার সুরাহা করতে এবং মূল প্রতারক ফরিদকে ২৩শে জানুয়ারির মধ্যে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার ওসি মো. কামাল হোসেন মুঠোফোনে মানবজমিনকে বলেন, আসামির নিজের নাম, পিতা ও গ্রামের নামে মিল থাকায় এমনটা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় সিএনজিচালক ফরিদ হোসাইন নিশ্চুপ ছিলেন বলেও দাবি করেন বাঁশখালী থানার ওসি।

এদিকে, মূল প্রতারক ফরিদ হোসাইনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরো আটটি চেক প্রতারণার মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। ভুল করে আটক করা ফরিদকে এসব মামলাও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছিল। তবে, ফরিদ হোসাইন কারাগারে থাকার সময় এই আটটি মামলায় তার পক্ষে জামিন নেয়া হয়। মূল প্রতারক ফরিদ হোসাইন নিজেকে আড়ালে রেখে এসব মামলা থেকে নিষ্কৃতি পেতে আইনজীবীর সহায়তায় এসব মামলায় জামিন নিয়ে রেখেছেন বলেও সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে, মূল প্রতারক ফরিদ হোসাইনকে দ্রুত গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাঁশখালী থানার ওসি। তিনি বলেন, খুব শিগগিরই আসল আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status