অনলাইন

গণতন্ত্রের স্বার্থে সংসদে এসে কথা বলা উচিত বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার

১২ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৭:১৬ পূর্বাহ্ন

গণতন্ত্রের স্বার্থে বিএনপিকে সংসদে এসে কথা বলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ এবং কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের যৌথ সভার সূচনা বক্তব্যে আজ তিনি একথা বলেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির সূচনা বক্তব্যের পরে সভা শুরু হয়। সভায় বেশিরভাগ নেতাই উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ২০১৮ সালের ৬ জুলাই গণভবনে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির আগমন উপলক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা দুপুর থেকেই জিরোপয়েন্টে রাস্তার পাশে অবস্থান নেয়। এর আগে সকাল থেকে ওই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্তক অবস্থানে ছিল। যৌথসভায় রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হয়েছে বলে জানান দলটির নেতারা। তারা বলেন, বিশেষ করে ২১শে ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও আগষ্টসহ বিভিন্ন দিবসে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলকে আরও শক্তিশালী ও দলের কার্যক্রমকে বেগবান করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি যতাসময়ে দলের কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নিতে বলেছেন।

যৌথসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে, আমি অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি তখনই কিন্তু এদেশের মানুষ প্রথম উপলব্ধি করে সরকার জনগণের সেবক হতে পারে,সরকার জনগণের জন্য কাজ করতে পারে। আর সরকার কাজ করলে জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়, এটা তখনই আমরা প্রমাণ করতে পারলাম। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটা স্বর্ণযুগ ছিল দাবি করে তিনি আরও বলেন, কিন্তু ষড়যন্ত্র কখনো থেমে যায় না। ২০০১ সালে চক্রান্ত করে আমাদেরকে ক্ষমতায় আসতে দেয়া হয়নি। আমরা ভোট বেশী পেলাম কিন্তু সরকার গঠন করতে পারলাম না।

২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের জীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা ছিল, সেটা আমরা সকলেই জানি। সেটা নিয়ে আর আমার বেশী বলার প্রয়োজন নেই। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোটগভাবে জয়ী হওয়ার প্রেক্ষাপট তুলে সরকার গঠন করার কথা তুলে ধরেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে কিন্তু ভোটের হার এখন ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে অনেক বেশী ভোট পড়েছিল। আমরা সরকার গঠন করার পর থেকে লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে তুলবো এবং দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে স্বাধীনতার সুফলটা পৌঁছাতে পারে, সেইভাবে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি বলেই মানুষের এই উপলব্ধিটা এসে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে তারা ভাল থাকে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়। তাদের দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হতে হয় না। তারা শান্তিতে থাকতে পারে। তাদের অর্থনৈতিক উন্নতি হয়, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারে। এরপর ২০১৩ থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকানোর নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করার সমালোচনা করেন তিনি। এ বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এটা দেশের মানুষ কখনো মেনে নিতে পারেনি। ২০১৪ সালে আবার আমরা সরকার গঠন করি।

আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা একটানা দশ বছর হাতে সময় পেয়েছিলাম, যার ফলে বাংলাদেশ সারাবিশে^ একটা উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় আমরা জনগণের সেবক হিসাবে কাজ করতে পেরেছি তার ফলে ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনে যারা দ্বিধাদ্বন্ধে ছিল? কি করবে? তারাও কিন্তু সকলে এগিয়ে এসেছিল আমাদের এই নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার জন্য। বিশেষ করে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়ার জন্য। এখানে ছাত্র-শিক্ষক-কৃষক-শ্রমিক কামার কুমার জেলে তাঁতী মেহনতি মানুষ থেকে ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে প্রত্যেকের মাঝে একটি আকাঙ্খা ছিল যে, আওয়ামী লীগ আসলে তারা ভাল থাকবে, আওয়ামী লীগ আসলে দেশটা ভাল চলবে। আওয়ামী লীগ আসলে দেশের উন্নতি হবে। এই উপলব্ধিটা তাদের মাঝে ব্যাপকভাবে দানা বেঁধে যায়। তাই টানা তৃতীয় মেয়াদে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিতে দেশের সকল স্তরের মানুষের সমর্থনের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ এবং ভোটারদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, এবারের নির্বাচনে সব থেকে লক্ষ্যণীয় বিষয় ছিল, মানুষের মধ্যে একটা স্বতস্ফুর্ততা এবং ভোট দেবার জন্য আগ্রহ। বিশেষ করে এদেশের তরুণ সমাজ, যারা প্রথম ভোটার এবং নারী সমাজের। এবারের নির্বাচনটা অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে হলেও কিছু কিছু জায়গায় বিএনপি জামায়াত জোট মিলে কোথাও ব্যালট বাক্স ছিনতাই করতে গেছে। কোথাও তারা নির্বাচনকে বানচাল করার চেষ্টা করেছেন এবং তাদের এই অপকর্মের কারণে বেশ কিছু প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরা অনেক আছেন। আমার কাছে সমস্ত ঘটনাগুলি লিপিবদ্ধ করা আছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন,আপনারা মাঠে ঘাটে দেখেছেন, টেলিভিশনে দেখেছেন কিভাবে তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছিল। কোনমতে নির্বাচনটা যেন বানচাল করা যায় কিন্তু তা তারা পারে নাই। এখন বিএনপি নির্বাচনে হেরেছে, এই দোষটা তারা কাকে দেবে? দোষ দিলে তাদের নিজেদেরকে দিতে হয়। কারণ একটি রাজনৈতিক দলের যদি নেতৃত্ব না থাকে, মাথাই না থাকে তাহলে সেই রাজনৈতিক দল কিভাবে নির্বাচনে জয়ের কথা চিন্তা করতে পারে।

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াসহ তারেক রহমানের বিভিন্ন দুর্নীতি অপকর্মের কথা তুলেন ধরেন শেখ হাসিনা। এবিষয়ে তিনি বলেন, একটি রাজনৈতিক দল পলাতক আসামীকে দিয়ে রাজনীতি করতে গেলে সেখানে কি রেজাল্ট হয় সেটাই তারা পেয়েছে। তাও হতো না, যদি তারা নির্বাচনে যে প্রার্থী দিয়েছে, সেই প্রার্থী নিয়ে মনোনয়ন বাণিজ্যটা না করতো। তাহলে আরও ভাল ফল তারা করতে পারত। মনোনয়ন বাণিজ্য নিয়ে বিএনপির মধ্যে বিশৃংখলার কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন,তার থেকে তো মানুষ জানতেই পেরেছে এদের চরিত্রটা কি? এদের চরিত্র শোধরায়নি। তাই বাংলার জনগণ প্রত্যাখান করেছে। তারপরও যে কয়টা সীটে তারা জিতেছে, গণতন্ত্রের স্বার্থে, তাদের পার্লামেন্টে আসা প্রয়োজন।

কারণ আমরা এইটুকু বলতে পারি যে,আমরা যখন সরকারে এসেছি, আমরা দেশের জন্য কাজ করেছি। জনগণের জন্য কাজ করেছি। আমরা কিন্তু কাউকে কোন হয়রানি করতে যাইনি। বিএনপি-জামায়াত জোট শাসনামল এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে দেয়া মামলার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রত্যেকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এসেছি। আমরা অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এসেছি। জনগণের বিশ^াস-আস্থাটা যে কারণে আমাদের উপরে এসেছে। আমরা রাষ্ট্র পরিচালনা করি জনগণের কল্যাণে, জনগণের স্বার্থে। আর জনগণ আজকে তারা উপলব্ধি করতে পারে এবং আমাদের উন্নয়নের যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি আমরা সবসময় লক্ষ্য করি, গ্রামের মানুষ তৃণমূরের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। তার একটু সুন্দর জীবন পাবে। তারা একটু উন্নত জীবন পাবে। প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের জীবনমান উন্নত হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রতিটি কর্মসূচি নিয়েছি।

বক্তব্যের শুরুতে প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আত্মার মাগফেরাত কামনা করে শোক প্রকাশ করেন। বক্তব্য শেষে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দলের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। আওয়ামী লীগ সভাপতির আসনের দুই পাশে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, এইচ টি ইমাম, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউলল্লাহ, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status