খেলা

অচেনা আলিসে ঢাকার জয়

ইশতিয়াক পারভেজ

১২ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:৪৬ পূর্বাহ্ন

ম্যাচের খেলোয়াড় তালিকা হাতে পাওয়ার পর থেকেই শুরু আলোচনা। ঢাকা ডায়নামাইটসের একাদশে কে এই আলিস আল ইসলাম। দেশি নাকি বিদেশি? কিন্তু কে জানতো ম্যাচ শেষে নায়ক হয়ে এই অচেনা ক্রিকেটারই সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে আসবেন। তাও বিপিএলে নিজের অভিষেক ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে দলকে জিতিয়ে। গতকাল শেষ ওভারে টান টান উত্তেজনা ছড়িয়ে ২ রানের জয় পায় সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। জয়ের কাছে পৌছে হার দেখে মাশরাফি বিন মুতর্জার রংপুর রাইডার্স। দেশের দুই মহতারকার লড়াই দেখতে সকাল থেকেই ছিল মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের চারপাশে উপচে পড়া ভিড়। টিকিট না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন প্রায় ১৫-২০ হাজার দর্শক। আর যারা গ্যালারিতে ছিলেন তারা সৌভ্যবান যে এমন একটি ম্যাচ দেখার সুযোগ হয়েছে, যা মাশরাফির কাছেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এমনকি যার কাছে তাদের পরাজয় সেই বোলারকেই চিনতেন না রংপুরের অধিনায়ক ও অনেক খেলোয়াড়। ম্যাচ শেষে মাশরাফি বলেন, ‘এই হারে আমাদেরই দোষ বেশি, কারণ প্রথমে ফিল্ডিং করে অনেক বেশি রান দিয়েছি আমাদের ভুলে। নয়তো ওদের এত রান হওয়ার কথা নয়। আমাদের হারের কারণ দু’জন সেট ব্যাটসম্যান রুশো ও মিঠুনের আউট। আর সেই সঙ্গে নতুন ছেলেটা (আলিস) যে বল করেছে তার জন্যও প্রশংসা ওর প্রাপ্য।’

টসে জিতে ঢাকাকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি ভুল করেননি তার প্রমাণ শুরুতেই ছিল। ঢাকা মাত্র ৩৩ রানে হারায় ৩ উইকেট। সেখান থেকে রংপুরের বোলাররা যেন খেই হারিয়ে ফেলে। সেই সঙ্গে যোগ হয় বাজে ফিল্ডিং। আর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন কাইরন পোলার্ড। মাত্র ২৬ বলে ৫ চার ও ৪ ছয়ে করেন ৬২ রান। তাকে অল্প অল্প করে হলেও দারুণ সঙ্গ দেন ৩৪ করা অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও ২৩ রান করা আন্দ্রে রাসেল। এছাড়াও রনি তালুকদারের ৮ বলে ১৮ রানের ইনিংসটাও ঢাকার জন্য দারুণ অবদান রাখে। শুরুর ধাক্কা সামলে শেষ পর্যন্ত ঢাকার স্কোর বোর্ডে যোগ হয় ১৮৩ রান হাতে এক উইকেট আবশিষ্ট রেখে।

তবে নাটকটা আসলে ম্যাচের প্রথম ইনিংসকেও ছাড়িয়ে গেল। ১৮৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ২৫ রানে বিদায় নেন রংপুরের দুই ওপেনার। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি দানব ক্রিস গেইলের বিদায় ছিল দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৮ রানের সময় ইনিংসের তৃতীয় ওভারে শুভাগত হোমের বল বোলারের মাথার উপর দিয়ে ছক্কার জন্য হাঁকান গেইল। লং অফে দ্বৈত নৈপুণ্যে অবিশ্বাস্য  ক্যাচ নিয়ে তাকে সাজঘরের পথ দেখান দুই ক্যারিবীয় তারকা রাসেল ও পোলার্ড। গেইলের এমন আউট নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আসলে এই ধরনের অবিশ্বাস্য ক্যাচে কারো কিছুই করার থাকে না। সেখানে ওরা যেভাবে ফিল্ডিং করেছে সেটি সেরা ছিল। কারণ ওদের যে দু’জন ফিল্ডার তারা এমন দারুণ সব ক্যাচ আইপিএল ও অন্যান্য টি-টোয়েন্টি আসরেও নিয়েছে। আসলে সেখানে গেইলের কিছুই করার  ছিল না।’

এরপরের ওভারেই রাসেলের বলে উইকেট রক্ষকের হাতে ক্যাচ দেন আরেক ওপেনার মেহেদী মারুফ। কিন্তু সেই ধাক্কা সামলে ম্যাচে জীবন ফিরিয়ে দেন রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুন। দু’জনের ব্যাটে আসে ১২১ রানের জুটি। এমনকি জয়ের পথটা একেবারেই প্রশস্ত করে তোলেন তারা। কিন্তু ৪৪ বলে ৪ ছক্কা ও ৮ চারে ৮৩ রান করা রুশোকে ফিরিয়ে ঢাকাকে ম্যাচে ফেরান আল ইসলাম। পরের ওভারে রবি বোপারাকে ফেরান সাকিব। ইনিংসের আঠারোতম ওভারের শেষ তিন বলে মিঠুন, মাশরাফি বিন মুর্তজা ও ফরহাদ রেজাকে আউট করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন আল ইসলাম। ব্যক্তিগত ৪৯ রানে আউট হওয়া মিঠুনকে দু’বার ক্যাচ ফেলে জীবন দিয়েছিলেন আল ইসলামই। বিপিএলের ইতিহাসে এটি চতুর্থ হ্যাটট্রিক।

এমন হার কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি বলেন, ‘আসলে এত কাছ থেকে হেরে যাওয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। দিন শেষে পরাজিত দল হিসেবে মাঠ ছেড়েছি আমরা। এখনও অনেকগুলো ম্যাচ বাকি আছে, পরের ম্যাচে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে হবে। ইনিংসের মাঝপথে আমরা ভালো করেছি। রুশো এবং মিঠুন দারুণ ব্যাট করেছে। জয়ের অনেক কাছ থেকে ফিরে এসেছি। সহজ জয় হাতছাড়া করেছি। বড় ভুল করেছি আমরা। আশা করছি পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবো।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status