বাংলারজমিন

শমসেরনগরে রেলওয়ের জমিতে ফিশারি ও বাসাবাড়ি স্থাপনের অভিযোগ

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে

১২ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

শমশেরনগর স্টেশন এলাকার রেলওয়ের জমিতে গড়ে তুলা হচ্ছে পাকা দালানকোঠা। কৃষিজমি লিজ নিয়ে সেখানে পাকা দালানকোঠা নির্মাণ করার পাশাপাশি কলোনি গড়ে তোলা হচ্ছে। এখন সেখানে চলছে মাছচাষের জন্য ফিসারি তৈরিতে মাটি কেটে বাঁধ নির্মাণের কাজ। রেলওয়ে কৃষিজমি লিজের শর্তাবলী অমান্য করে এসব করছেন স্থানীয় শমসেরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লিজ গ্রহীতা আব্দুল মছব্বির। শুধু আব্দুল মছব্বির নয়, তার মতো অনেকেই লিজের শর্ত অমান্য করে অবৈধ স্থাপনা করছেন। রেলওয়ের কোটি কোটি টাকার ভূসম্পত্তি দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হলেও রহস্যজনক কারণে নীরব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। রেললাইনের পাশের কৃষিজমির মাটি কেটে ফিশারি স্থাপনের ফলে রেলপথের মাটি ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় এ লিখিত অভিযোগটি করেন সিলেট-আখাউড়া সেকশনের কুলাউড়া অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম। অভিযোগে বলা হয়েছে, শমশেরনগর রেলওয়ের জমিকৃষি লিজ নিয়ে এলাকার সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মছব্বির দীর্ঘদিন ধরে কলোনি ও বাসাবাড়ি স্থাপন করে অন্যত্র বিক্রয় করছেন। লিজের শর্তাবলী ভঙ্গ করে কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অনুমতি ছাড়াই লিজ গ্রহীতা আব্দুল মছব্বির একের পর এক অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে রেলপথ সংলগ্ন কৃষিজমিতে তিনি ফিশারি করার জন্য কার্যক্রম শুরু করেন। খবর পেয়ে সম্প্রতি রেলওয়ে কর্মকর্তা সরেজমিনে এসে তা দেখতে পেয়ে এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য তাকে বলা হয়। কিন্তু কোনো বাধা নিষেধ মানছিলেন না প্রভাবশালী লিজ গ্রহীতা আব্দুল মছব্বির। তিনি জমি লিজের শর্তাবলী অমান্য করেই করছিলেন বসতি স্থাপন আর ফিশারি করার কাজ। অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করেই কৃষি লিজ নেয়া জমিতে কমার্শিয়ালভাবে কলোনি স্থাপন, ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বিক্রি এবং মাটি কেটে ফিশারি করার কাজ করছেন প্রভাবশালী এ লিজ গ্রহীতা। রেললাইনের পাশে অবৈধভাবে কৃষিজমির মাটি কেটে ফিশারি করার ফলে বর্ষা মৌসুমে রেলপথের মাটি ধসে ট্রেন দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর পেয়ে বুধবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেট রেলপথের কুলাউড়া অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম। তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে লিজ গ্রহীতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে (জিআরপি) থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, রেললাইন সংলগ্ন কৃষিজমিতে কমার্শিয়ালভাবে বসতি স্থাপন, পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বিক্রি এবং মাটিকাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু লিজ গ্রহীতা আব্দুল মছব্বির লিজের শর্তাবলী অমান্য করে কৃষিলিজ নেয়া জমিতে অবৈধভাবে কমার্শিয়াল বসতি স্থাপন, পাকা ঘরবাড়ি নির্মাণ ও বিক্রি এবং মাটি কেটে ফিশারি করছেন। কৃষিজমির মাটি কেটে ফিশারি করার ফলে বর্ষা মৌসুমে রেলপথের মাটি ধসে ট্রেন দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া লিজের জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তুলা কলোনির পানি নিষ্কাশনে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মওসুমে জলাবদ্ধতায় মাটি ডেবে যেতে পারে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে শ্রীমঙ্গল জিআরপি থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে লিজ গ্রহীতা আব্দুল মছব্বির সাংবাদিকদের বলেন, ওই জমিতে কোনো ফিশারি স্থাপন করা হচ্ছে না। সেখানে সবজি চাষের জন্য কাজ করা হচ্ছে। লিজ নেয়া কৃষিজমির কোথাও তিনি কোনো কলোনি স্থাপন এবং লিজকৃত জমি বিক্রি করেননি বলে জানান আব্দুল মছব্বির। তবে সরেজমিনে দেখা যায়, শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এবং এর আশপাশের কৃষিজমি ভরাট করে কলোনি স্থাপন করা হয়েছে। টিনসেটের পাকা দালানের ওই কলোনিগুলোর আশপাশে ছোট ছোট অসংখ্য দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হয়েছে। শমসেরনগর রেলওয়ে স্টেশনের চতুর্পাশে রেলওয়ের জমিতেও গড়ে উঠেছে অবৈধ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। অভিযোগ রয়েছে রেলওয়ে অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও কলোনি স্থাপনের রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে স্থানীয় একটি চক্র। ওই চক্রটি রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে পরিত্যক্ত লাল গুদামঘরটিও তাদের দখলে নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছে। গুদামের পার্শ্ববর্তী রেলওয়ে জমিতে গড়ে তুলেছে পাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। স্টেশনের আশপাশজুড়ে কর্তৃপক্ষের কোনোরূপ অনুমতি ছাড়াই স্থানীয় প্রভাবশালীরা জমি দখল ও একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হলেও তাদের অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে থানার সাব ইন্সপেক্টর মো. ইসমাইল অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।॥


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status