বাংলারজমিন
লালমনিরহাটে লাগামহীন চালের মূল্য
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
১২ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৭:০৬ পূর্বাহ্ন
নতুন বছরের শুরুতেই বিনা অজুহাতে লালমনিরহাটে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে বাজারে চালের বাজার। চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রভাব পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে। চালের মূল্য বেড়ে চলায় সমস্যায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। হাট-বাজারে প্রতি কেজি চালের মূল্য ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা বেড়ে যাওয়ায় সমস্যায় হতদরিদ্র মানুষগুলো। একদিকে চালের বাজার বৃদ্ধি অন্যদিকে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি। খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ একশ্রেণির মিল মালিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মজুদ করায় বাজারে চাল না ছাড়ায় চালের বাজারে এ সমস্যার। উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। এ জেলায় গত ক’দিন ধরে লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে চালের দাম। বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ মিলাররা চাল না ছাড়ার কারণে প্রতি বস্তা চাল ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এমনকি দিনমজুর শ্রেণির মানুষের মাঝে পড়েছে এর প্রভাব। বাজারে ধানের মূল্য বৃদ্ধি ও সরকারি গোডাউনে চাল বিক্রির নানান অজুহাতে লালমনিরহাট জেলায় লফিয়ে লাফিয়ে বেড়েই চলছে চালের বাজার। ৫০ কেজি উজনের চালের গত সপ্তাহে যে চালের বস্তা ছিল ২৬০০ টাকা তা বর্তমানে লাফিয়ে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। লাগামহীনভাবে চালের বাজার বৃদ্ধির কারণে দিনমজুর শ্রেণির মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। লালমনিরহাটে চালের বড় বাজার বলে খ্যাত গোশালা বাজারে গত সপ্তাহে মিনিকেট চাল ৫০ কেজি ওজনের বস্তা ৩৮০০ টাকার পরিবর্তে বর্তমানে ৪২০০ টাকা। বিআর ২৮ চাল বস্তা ২৮০০ টাকার পরিবর্তে ৩২০০ টাকা। মিনিকেট চাল ৪২০০ টাকার পরিবর্তে ৪৪০০ টাকা। বিআর ২৯ চাল বস্তা ৩ হাজার টাকার পরিবর্তে ৩২০০ টাকা। স্বর্ণাজাতের চাল ২৮০০ টাকা বস্তার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা হয়েছে। গরিব ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষের বিআর ২৮ চাল ২৬০০ টাকা বস্তার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চালের মূল্য ৩ টাকা থেকে ৪ টাকা ও খোলা বাজারে এ চালের মূল্য কেজিপ্রতি ৫ টাকা থেকে ৭ টাকা বেড়েছে। গোশালা বাজার, সেনা মৈত্রী বাজার, কলেজ বাজার, নবাবেরহাট বাজার, নয়ারহাট, বড়বাড়ী, কুলাঘাট বাজারে গিয়ে দেখা গেছে একই চিত্র। গোশালা বাজারের চাল ব্যাবসায়ী বাসু দে জানান, মিলাররা আমাদের সঠিকভাবে চাল সরবরাহ করলে বাজারে চালের মূল্য কমে আসবে। বাজারে চাউল সরবরাহ না করার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। চাল ব্যবসায়ী বাতেন মিয়া জানান, চাল পাইকারি বাজারে ৫০ কেজি ওজনের বস্তাপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। পাইকারি ওজনের চালের মূল্য বাড়লে পাইকারি বাজারে চালের মূল্য কেজিপ্রতি ২ টাকা থেকে আড়াই টাকা বাড়লে খুচরা বাজারে বাড়ছে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা। চালের দাম লাগামহীনভাবে বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের নিম্ন শ্রেণির কম আয়ের মানুষেরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। দিনে এনে দিনে খায় এসব পরিবারের মানুষেরা হিমশিম খাচ্ছে। তিস্তা চরাঞ্চলের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নে চরাঞ্চলে কৃষক ফাতেমা বেগম জানান, চালের দাম মনে করনু নতুন বছরে কম হবে কই কম ভোটের পর কেজিপ্রতি চালের দাম বাড়িল ৫ টাকা। হামরা গরিব মানুষ চালের দাম বাড়লে কেমন করে খামো। রাজপুরের চারের কহিনুর বেগম জানান, নতুন বছরোত বাড়িল চালের দাম। সারা দিন কামাই করি যে টাকা পাই তা চাইল কিনতে শেষ হলে অন্য জিনিস কিনমো কি দিয়া। সালামত আলী জানান, হামার মজুরি বাড়ে না বাড়ে চালের দাম কষ্ট করে কামাই করে চাল কিনতেই শেষ। বাজারোত চালের মূল্য বাড়িল আর হামার কষ্টও বাড়িল। হাতিবান্ধার দিনমজুর বক্ত জানান, চাল দাম বেশি তার উপর তরিতরকারির মূল্যও বেশি কেমনে চলি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে চালের বাজার লাগামহীন তাদের বাঁচা-মরা হয়ে পড়েছে সমান। আমদানি কম ও মিলাররা বাজারে চাল ছাড়ছে কম বলে অভিযোগ করছে চাল ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি আকাশ ভালো হলে ও চাল আমদানি হলে চালের বাজার কমে আসবে। দিনমজুর পরিবারের লোকজন যা আয় করে তা দিয়ে চাল কিনতেই শেষ হয়ে পড়ে টাকা। এ ছাড়াও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য তো রয়েছে বৃদ্ধি। শীতের কারণে দিনমজুর শ্রেণির লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। তাদের কপালে জুটে না খাবার। দিন আয় করে দিন খায় এসব পরিবার এর দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। একদিন দিনমজুরির কাজ না করলে তাদের ঘরে জুটে না খাবার। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হয় অনাহারে। চড়া সুদে টাকা দিয়ে চালাচ্ছে সংসার। জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি শেখ হামিদ বাবু বাজারে চালের মূল্য বৃদ্ধির কথা স্বীকার বলেন বাজরে ধানের মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে চালের মূল্য বেড়েছে তবে কেউ মজুত করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউর আরিফ জানান, সিন্ডিকেট করে মজুত করে বাজারে চালের মূল্য বাড়ালে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চালের মূল্য সহনশীল ও সিন্ডিকেট মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি পরিবারগুলোর।