শেষের পাতা

আসলে কতটা বেড়েছে মজুরি?

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১১ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

 পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ৮ হাজার টাকা নিম্নতম মজুরি ঘোষণা করে গত ২৫শে নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে শ্রম মন্ত্রণালয়। যা চলতি জানুয়ারি থেকে নতুন কাঠামো অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। কিন্তু নতুন এই মজুরি 
কাঠামোতে শ্রমিকের একটি বড় অংশের মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বাড়েনি। গত ৫ বছরে শ্রমিকের মূল মজুরি ৫ শতাংশে হারে বৃদ্ধির বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি। ফলে নতুন শ্রমিকের মোট মজুরি বা সর্বনিম্ন গ্রেডে ২ হাজার ৭০০ টাকা বৃদ্ধি পেলেও দক্ষ বা পুরনোদের তার অর্ধেকও বাড়েনি। কোনো কোনো গ্রেডে মজুরি কমেছে। এ ছাড়া ওভারটাইম ও উৎসব ভাতাও বাড়বে না। ৫ বছর পর নতুন মজুরি কাঠামোতে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ার কারণেই শ্রমিকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, এবার ভাতা বৃদ্ধি করে মূল মজুরি কমানো হয়েছে। নিম্নতম মজুরি ৮ হাজার টাকা নিয়ে সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে গ্রেডে। গ্রেডে যে হারে মজুরি বাড়ানোর দরকার ছিল, সেটি  হয়নি। সে জন্য শ্রমিকরা খুশি হতে পারেন নি।

মজুরি কাঠামোর গ্রেড পর্যালোচনায় দেখা গেছে, পোশাক খাতের মজুরি কাঠামোর মোট ৭টি গ্রেডের চারটিতে (৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর গ্রেড) মূল মজুরি বেড়েছে। তবে ৩ নং গ্রেডে মূল মজুরি না বেড়ে ৪০ টাকা কমেছে। ২ নং গ্রেডে কমেছে ৪১২ ও ১ নং গ্রেডে ৪০৫ টাকা। নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ মূলত ৩, ৪ ও ৫ নং গ্রেডের শ্রমিকদের। এর মধ্যে ৩ নম্বর গ্রেডের শ্রমিকদের অসন্তোষ মূল মজুরি কমে যাওয়ায়। আর ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের শ্রমিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করছেন মূল মজুরি তুলনামূলক কম বাড়ায়।  
প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি হওয়ায় ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডের পুরনো অনেক শ্রমিক ঘোষিত নতুন মজুরি কাঠামোর সমপরিমাণ মূল মজুরি এখনই পাচ্ছেন। প্রায় প্রতিটি কারখানায় এই তিন গ্রেডেই সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করেন।

গ্রেড প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদেই বেশি শ্রমিক কাজ করেন। নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে কার্যকর হওয়া আগের মজুরি কাঠামোতে গ্রেডটির মূল মজুরি ছিল ৩ হাজার ৮০০ টাকা। তবে প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় এই গ্রেডে কর্মরত পুরনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে ২০১৮ সালেই ৪ হাজার ৬১৭ টাকা হয়েছে। এবার নতুন কাঠামো ছাড়াই ইনক্রিমেন্ট হলে সেই মজুরি ৪ হাজার ৮৪৮ টাকা হতো। অর্থাৎ নতুন কাঠামোতে গ্রেডটিতে থাকা পুরনো শ্রমিকদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৮২ টাকা। একইভাবে হিসাব করলে দেখা গেছে, ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি বেড়েছে ১৬৮ টাকা। তবে ৩ নম্বর গ্রেডে উল্টো মূল মজুরি কমে গেছে ৪০ টাকার মতো।

জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, তিন বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালে নিম্নতম মজুরি বোর্ড হয়েছিল। এবার হয়েছে পাঁচ বছর পর। সেই হিসাবে শ্রমিকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী মজুরি বাড়েনি। ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডেই সমস্যা আছে। এই গ্রেডগুলোর মজুরি পুনর্বিবেচনা করা দরকার। সরকার, মালিক ও শ্রমিক, তিন পক্ষ বসে পুরো বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ তার।
এদিকে বিজিএমইএ’র দেয়া বেতন কাঠামো পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নতুন মজুরি কাঠামোতে নিম্নতম বা সপ্তম গ্রেডে মজুরি বেড়েছে ৫১ শতাংশ। পোশাক কারখানায় ৩, ৪ ও ৫ নম্বর গ্রেডে বেশি শ্রমিক কাজ করেন। গ্রেড তিনটিতে মজুরি যথাক্রমে ৪১, ৪৪ ও ৪৬.৫৫ শতাংশ বেড়েছে। গত ২০১৩ সালের মজুরি কাঠামোতে এই তিন গ্রেডে মজুরি বেড়েছিল ৬১ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।

আগের মজুরি কাঠামোতে ৩ নম্বর গ্রেড বা সিনিয়র অপারেটর পদের মূল মজুরি ছিল ৪ হাজার ৭৫ টাকা। প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট হওয়ায় গ্রেডটিতে কর্মরত পুরনো শ্রমিকের মূল মজুরি বেড়ে চলতি বছর ৫ হাজার ২০৪ টাকা হতো। অথচ নতুন কাঠামোতে এই গ্রেডের মূল মজুরি করা হয়েছে ৫ হাজার ১৬০ টাকা। অর্থাৎ নতুন কাঠামোতে মজুরি কমে গেছে ৪০ টাকা। একইভাবে ৪ নম্বর গ্রেড বা অপারেটর পদের মূল মজুরি বেড়েছে মাত্র ৭৯ টাকা ও ৫ নম্বর গ্রেডের বেড়েছে মাত্র ১৬৪ টাকা।

শ্রমিক নেতারা মনে করেন, উপরের গ্রেডে মূল মজুরি বৃদ্ধি না পাওয়ায় শ্রমিকদের ওভারটাইমের অর্থ বাড়বে না। এমনকি উৎসব ভাতাও বাড়বে না। সবদিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন দক্ষ শ্রমিকরা।
বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রত্যেক শ্রমিকের মোট মজুরি ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা বেড়েছে। মজুরি যথেষ্ট বেড়েছে। অন্যবারের চেয়ে এবারই সবচেয়ে বেশি মজুরি বেড়েছে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, শ্রমিক নেতারা মনে করছেন, মজুরি কাঠামোর কোনো কোনো গ্রেডে কিছু অসংগতি আছে। মালিকপক্ষ সেটা মনে করছে না। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধান হবে। আমি শতভাগ বিশ্বাস করি, আগামী এক মাসের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে। কিন্তু কোনোভাবেই এ ধরনের সাংঘর্ষিক কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status