বিশ্বজমিন
শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সঙ্কট সহজেই কাটছে না
মিসবাহুল হক
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা ২০১৫ সালের নির্বাচনে যখন অবিস্মরণীয় জয় পান, তখন বলেছিলেন, নির্বাচনে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের কাছে পরাজিত হলে তাকে ৬ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলা হতো। এর প্রায় চার বছর পর সেই রাজাপাকসেকেই সম্প্রতি নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ পড়ান সিরিসেনা। আর রাজাপাকসেকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য তিনি দীর্ঘদিনের মিত্র রনিল বিক্রমাসিংহকে একক ক্ষমতাবলে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। গত ২৬শে অক্টোবরের এই ঘটনা শ্রীলঙ্কাকে দীর্ঘমেয়াদে সঙ্কটে ফেলে। যার সহায়তায় সিরিসেনা প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন, সেই বিক্রমাসিংহকে সময়ের আবর্তনে সিরিসেনার কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পাওয়ার আরজি জানাতে হয়। এতে কাজ না হওয়ায় ন্যায্য অধিকারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসেন বিক্রমাসিংহের হাজার হাজার সমর্থক। তারা সিরিসেনার অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার প্রতিবাদ জানান। পরে নানা নাটকীয়তার পর সেখানে পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে, যাতে বিক্রমাসিংহর ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি) সফলভাবে সরকারের বিরুদ্ধে দু’দফা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে। এর পরেও সিরিসেনা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠেন। তিনি বিক্রমাসিংহকে দাম্ভিক ও একগুঁয়ে আখ্যা দিয়ে বলেন, তিনি শুধু ব্যাপকভাবে দুর্নীতিপরায়ণই না, বরং প্রেসিডেন্টের হত্যা প্রচেষ্টা তদন্ত করতেও প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ব্যর্থ হয়েছেন। বিক্রমাসিংহ যদি আবারো প্রধানমন্ত্রী হন, তাহলে আমি আমার অফিসে এক ঘন্টাও থাকবো না।
পরে যখন এটা পরিস্কার হয় যে, সরকার গঠন করার মতো সমর্থন নতুন নিয়োগ পাওয়া রাজাপাকসের নেই, তখন সিরিসেনা ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ডিক্রি জারি করেন। এতে আবারো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এ সংক্রান্ত একটি রিটের প্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সিরিসেনার ওই ডিক্রির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েন সিরিসেনা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুনরায় চালু হওয়া পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহর দল দ্রুতই রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে দুই দফা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে। এর পরেও সিরিসেনা পিছু হটতে নারাজ। তিনি বলেন, আমি বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী বানাবো না, জীবনেও না।
কিন্তু গত রোববার সিরিসেনা প্রথমবারের মতো নমনীয় হন। তিনি পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে বিক্রমাসিংহকে আবারো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রেসিডেন্টকে এসব করতে বাধ্য করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। আপাতদৃষ্টিতে দীর্ঘ দুই মাস পর শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সঙ্কট কিছুটা ইতিবাচক মোড় নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক অ্যালেন কিনান বলেন, শ্রীলঙ্কায় সংবিধান ঘোষিত সরকারের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় বিজয়। কিন্তু সঙ্কটের অবসান এখনো অনেক দুরে। পরিস্কারভাবে দেশে এখনো শান্তি ফিরে আসেনি।
এর কারণ হলো- প্রধান তিন ব্যক্তি সিরিসেনা, বিক্রমাসিংহ ও রাজাপাকসের মধ্যকার বিবাদ মেটেনি। অর্থনৈতিক নীতি, সংবিধান সংশোধন, যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত জবাবদিহীতা নিয়ে তাদের মধ্যে এখনো মৌলিক মতপার্থক্য রয়েছে।
সার্বিকভাবে, দফায় দফায় সুপ্রিম কোর্টের রুল জারির কারণেই মূলত শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অচলাবস্থার আপাতত অবসান ঘটেছে। গত সপ্তাহে সুপ্রিমকোর্টের সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশনাকে অবৈধ আখ্যা দেন। এক রুল জারি করে তারা বলেন, সাড়ে চার বছর অতিবাহিত হওয়ার আগে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ভেঙে দিতে পারেন না। পরের দিন আরেকটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে ও তার মন্ত্রীসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট একের পর এক রায় দেয়ার ফলে অবশেষে গত শনিবার তিনি পদত্যাগ করেন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎখাত করার কারণে সিংহলিজদের কাছে এখনো রাজাপাকসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে টিকিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট ছিল না। শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও বিক্রমাসিংহর সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন রাজাপাকসে। অর্থাৎ রাজাপাকসে তার পূর্বের নীতি থেকে সরে আসেন নি। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাও তার কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা প্রকাশ করেন নি। বিক্রমাসিংহকে পুনর্বহাল করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে তার মতে কোন পরিবর্তন আসেনি। শুধু পার্লামেন্টের ঐতিহ্য ও গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখাতেই তিনি বিক্রমাসিংহকে পুনর্বহাল করেছেন। তিনি বলেন, যদি আমি অভিশংসিত হই, কারারুদ্ধ হই, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইতিহাস আমার পক্ষে বিবেচনা করবে। এ থেকে বোঝা যায়, বিক্রমাসিংহ ক্ষমতা ফিরে পেলেও রাজাপাকসে ও সিরিসেনার বিরোধিতা তার রাষ্ট্রপরিচালনার পথ অমসৃণ করবে।
কয়েক বছর আগেও সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল ধরে। ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে এখন তারা পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। এমন অবস্থায় তাদের আবারো একসঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করা বেশ কঠিন। এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক অসঙ্গা ওয়েলিকালা বলেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তারা আবারো একসঙ্গে কাজ করবেন এমনটি ঘটা খুবই কঠিন। বিক্রমাসিংহকে আবারো পুনর্বহাল করাকে সিরিসেনার ‘কৌশলগত পশ্চাৎপসারণ’ হিসেবে দেখছেন তিনি। বিক্রমাসিংহ প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পেলেও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব পূর্বের মতোই চলবে। ২০২০ সালে নির্ধারিত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কৌশল নিতেই থাকবেন। আর এতে দেশে শুধুই অস্থিরতা তৈরি হবে। শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার কর্মী শ্রীন সারুর বলেন, এটা খুবই বিশ্রী ব্যাপার হতে চলেছে। খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিরোধীরা সবকিছুই আটকে দেয়ার চেষ্টা করবে। দেশ পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কেননা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ইউএনপি সরকারের নেই। তারা সরকারকে অচল করে দেবে। গত সাত সপ্তাহ ধরে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইউএনপি যে সফলতা অর্জন করেছে, পরবর্তী দিনগুলোতে তা ম্লান হয়ে যাবে। যদি ইউএনপি ২০২০ সালের নির্বাচন পর্যন্ত তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায়, তাহলে দরিদ্রদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে যুদ্ধ-সংঘাতে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো সিরিসেনা বা রাজাপাকসের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই নেয়ার সক্ষমতা বিক্রমাসিংহের রয়েছে। তবে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক অ্যালেন কিনান ও এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েলিকালা বিষয়টিকে এত সহজ বলে মনে করছেন না।
(আল জাজিরা অবলম্বনে)
পরে যখন এটা পরিস্কার হয় যে, সরকার গঠন করার মতো সমর্থন নতুন নিয়োগ পাওয়া রাজাপাকসের নেই, তখন সিরিসেনা ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন। একই সঙ্গে নির্ধারিত সময়ের দুই বছর আগেই আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে ডিক্রি জারি করেন। এতে আবারো প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। এ সংক্রান্ত একটি রিটের প্রেক্ষিতে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট সিরিসেনার ওই ডিক্রির ওপর স্থগিতাদেশ দেন। এতে রীতিমতো বেকায়দায় পড়েন সিরিসেনা। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে পুনরায় চালু হওয়া পার্লামেন্টে বিক্রমাসিংহর দল দ্রুতই রাজাপাকসে সরকারের বিরুদ্ধে দুই দফা অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে। এর পরেও সিরিসেনা পিছু হটতে নারাজ। তিনি বলেন, আমি বিক্রমাসিংহকে প্রধানমন্ত্রী বানাবো না, জীবনেও না।
কিন্তু গত রোববার সিরিসেনা প্রথমবারের মতো নমনীয় হন। তিনি পূর্বের কঠোর অবস্থান থেকে সরে এসে বিক্রমাসিংহকে আবারো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। প্রেসিডেন্টকে এসব করতে বাধ্য করার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে সুপ্রিম কোর্ট। আপাতদৃষ্টিতে দীর্ঘ দুই মাস পর শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক সঙ্কট কিছুটা ইতিবাচক মোড় নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে গণতন্ত্রের বিজয় হিসেবে দেখছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক অ্যালেন কিনান বলেন, শ্রীলঙ্কায় সংবিধান ঘোষিত সরকারের ক্ষমতা ফিরে পাওয়া দেশের গণতন্ত্রের জন্য বড় বিজয়। কিন্তু সঙ্কটের অবসান এখনো অনেক দুরে। পরিস্কারভাবে দেশে এখনো শান্তি ফিরে আসেনি।
এর কারণ হলো- প্রধান তিন ব্যক্তি সিরিসেনা, বিক্রমাসিংহ ও রাজাপাকসের মধ্যকার বিবাদ মেটেনি। অর্থনৈতিক নীতি, সংবিধান সংশোধন, যুদ্ধাপরাধ ও দুর্নীতি সংক্রান্ত জবাবদিহীতা নিয়ে তাদের মধ্যে এখনো মৌলিক মতপার্থক্য রয়েছে।
সার্বিকভাবে, দফায় দফায় সুপ্রিম কোর্টের রুল জারির কারণেই মূলত শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অচলাবস্থার আপাতত অবসান ঘটেছে। গত সপ্তাহে সুপ্রিমকোর্টের সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি প্যানেল সিরিসেনার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেয়ার নির্দেশনাকে অবৈধ আখ্যা দেন। এক রুল জারি করে তারা বলেন, সাড়ে চার বছর অতিবাহিত হওয়ার আগে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত পার্লামেন্ট প্রেসিডেন্ট ভেঙে দিতে পারেন না। পরের দিন আরেকটি রায়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসে ও তার মন্ত্রীসভার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেন। রাজাপাকসের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট একের পর এক রায় দেয়ার ফলে অবশেষে গত শনিবার তিনি পদত্যাগ করেন। তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের উৎখাত করার কারণে সিংহলিজদের কাছে এখনো রাজাপাকসের জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু এই জনপ্রিয়তা তাকে প্রধানমন্ত্রীর পদে টিকিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট ছিল না। শনিবার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও বিক্রমাসিংহর সংস্কার কার্যক্রমে বাধা দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন রাজাপাকসে। অর্থাৎ রাজাপাকসে তার পূর্বের নীতি থেকে সরে আসেন নি। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাও তার কৃতকর্মের জন্য কোন অনুশোচনা প্রকাশ করেন নি। বিক্রমাসিংহকে পুনর্বহাল করার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর বিষয়ে তার মতে কোন পরিবর্তন আসেনি। শুধু পার্লামেন্টের ঐতিহ্য ও গণতন্ত্রের প্রতি সম্মান দেখাতেই তিনি বিক্রমাসিংহকে পুনর্বহাল করেছেন। তিনি বলেন, যদি আমি অভিশংসিত হই, কারারুদ্ধ হই, তাহলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ইতিহাস আমার পক্ষে বিবেচনা করবে। এ থেকে বোঝা যায়, বিক্রমাসিংহ ক্ষমতা ফিরে পেলেও রাজাপাকসে ও সিরিসেনার বিরোধিতা তার রাষ্ট্রপরিচালনার পথ অমসৃণ করবে।
কয়েক বছর আগেও সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিভিন্ন ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এর প্রেক্ষিতে তাদের মধ্যকার সম্পর্কে ফাটল ধরে। ঘনিষ্ঠ মিত্র থেকে এখন তারা পরস্পরের শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। এমন অবস্থায় তাদের আবারো একসঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করা বেশ কঠিন। এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রীলঙ্কান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক অসঙ্গা ওয়েলিকালা বলেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার পর তারা আবারো একসঙ্গে কাজ করবেন এমনটি ঘটা খুবই কঠিন। বিক্রমাসিংহকে আবারো পুনর্বহাল করাকে সিরিসেনার ‘কৌশলগত পশ্চাৎপসারণ’ হিসেবে দেখছেন তিনি। বিক্রমাসিংহ প্রধানমন্ত্রিত্ব ফিরে পেলেও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব পূর্বের মতোই চলবে। ২০২০ সালে নির্ধারিত নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কৌশল নিতেই থাকবেন। আর এতে দেশে শুধুই অস্থিরতা তৈরি হবে। শ্রীলঙ্কার মানবাধিকার কর্মী শ্রীন সারুর বলেন, এটা খুবই বিশ্রী ব্যাপার হতে চলেছে। খুবই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। বিরোধীরা সবকিছুই আটকে দেয়ার চেষ্টা করবে। দেশ পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। কেননা বিরোধীদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা ইউএনপি সরকারের নেই। তারা সরকারকে অচল করে দেবে। গত সাত সপ্তাহ ধরে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ইউএনপি যে সফলতা অর্জন করেছে, পরবর্তী দিনগুলোতে তা ম্লান হয়ে যাবে। যদি ইউএনপি ২০২০ সালের নির্বাচন পর্যন্ত তাদের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে চায়, তাহলে দরিদ্রদের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে যুদ্ধ-সংঘাতে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলো সিরিসেনা বা রাজাপাকসের সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই নেয়ার সক্ষমতা বিক্রমাসিংহের রয়েছে। তবে ক্রাইসিস গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক অ্যালেন কিনান ও এডেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওয়েলিকালা বিষয়টিকে এত সহজ বলে মনে করছেন না।
(আল জাজিরা অবলম্বনে)