প্রথম পাতা

ভুল থাকলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখুন: শেখ হাসিনা

উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ওয়াদা আওয়ামী লীগের

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ন

ইশতেহারে ২১  দফা অঙ্গীকার
টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার প্রত্যাশা নিয়ে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ার ওয়াদা তুলে ধরে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে গতকাল এ ইশতেহার ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। ৮০ পৃষ্ঠার ইশতেহারে জাতির কাছে ২১টি সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ।

এদিকে এক দশকে সরকার পরিচালনায় কোনো ভুল হয়ে থাকলে তা ‘ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে’ দেখতে দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা। ঘোষিত ইশতেহারে আওয়ামী লীগের ২১টি অঙ্গীকারের মধ্যে আছে আমার গ্রাম, আমার শহর-প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সমপ্রসারণ, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, তরুণ যুব সমাজকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করা এবং কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন, লিঙ্গ সমতা ও শিশু কল্যাণ, পুষ্টিসম্মত ও নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা, সন্ত্রাস-সামপ্রদায়িকতা-জঙ্গিবাদ ও মাদক নির্মূল,  মেগা প্রজেক্টগুলোর দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন সুদৃঢ় করা, দারিদ্র্য নির্মূল, সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সকলের জন্য মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা, সার্বিক উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, আধুনিক কৃষি ব্যবস্থা- লক্ষ্য যান্ত্রিকীকরণ, দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, ব্লু ইকোনমি- সমুদ্র সম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ সড়কের নিশ্চয়তা, প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণ, টেকসই উন্নয়ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

আগামী পাঁচবছরে পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের মধ্যে বুলেট ট্রেন চালু করাসহ দেশে আর একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে ইশতেহারে। ইশতেহারের সংক্ষিপ্ত সার অনুষ্ঠান পড়ে শুনিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মাত্রই ভুল হয়। কাজ করতে গিয়ে আমার বা আমার সহকর্মীদেরও ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকতে পারে। নিজের ও দলের পক্ষ থেকে আমাদের যদি কোনো ভুলভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য দেশবাসী আপনাদের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাচ্ছি। ভোটারদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমি কথা দিচ্ছি, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা আরো সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করবো। জাতির পিতার কাঙ্ক্ষিত ক্ষুধা, দারিদ্র্য, নিরক্ষরতামুক্ত অসামপ্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ ‘টেকসই বিনিয়োগ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ নিশ্চিত করতে কাজ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘কথা নয়, কাজে’ বিশ্বাস করে।

নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করতে অনুষ্ঠানের মঞ্চে এসে শেখ হাসিনা প্রথমেই স্মরণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশকে। মুক্তিযুদ্ধে  ত্রিশ লাখ শহীদ, দুই লাখ নির্যাতিত নারী, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের এবং পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট নিহত বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদেরও তিনি স্মরণ করেন। ইশতেহার ঘোষণা শেষে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করবে বাংলাদেশ।

বাঙালি জাতির এই দুই মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে রেখে, মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী আওয়ামী লীগই পারবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে দিতে, পারবে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে। গৌরবের এই সময়কালে স্বাধীনতাবিরোধী কোনো শক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলে তা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে ‘গ্লানিকর’ হবে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার প্রতীক নৌকা মার্কায় বিজয় অর্জন করবে, এ বিশ্বাস আমাদের আছে। বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত। নিজের ব্যক্তিগত কোনো ‘চাওয়া পাওয়া’ নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাবা মা আত্মীয়স্বজনকে হারিয়ে রাজনীতি করছি শুধুমাত্র জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য। এদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে ভালোভাবে বাঁচতে পারে, উন্নত জীবন পায়, তাদের জীবন সমৃদ্ধশালী হয়, ক্ষুধা দারিদ্র থেকে বঞ্চনা থেকে তারা মুক্তি পায়। তাদের জীবনটাকে উন্নত করা, এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য, একমাত্র কামনা।

জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় আওয়ামী লীগের ইশতেহার প্রকাশের অনুষ্ঠান। শুরুতেই আওয়ামী লীগের শাসনামলের উন্নয়ন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী  ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বৃহত্তম, ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল। প্রগতিশীল আন্দোলনে তারা নেতৃত্ব দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্য এই নির্বাচন ইশতেহার উপস্থাপন করছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের বিশ্বাস, বিজয়ের মাসে বিজয় হবে বিজয়ের মহাবীর বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। বিজয় আমাদের হবেই, ভিক্টরি ইজ আওয়ারস। মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও কূটনীতিক ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

লিখিত ইশতেহারে বলা হয়, আমরা বিভেদ, হানাহানি, জ্বালাও-পোড়াও, অগ্নিসন্ত্রাস, অবরোধ বিশৃঙ্খলার রাজনীতি চাই না। চাই গণতান্ত্রিক পরিবেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আমরা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি। আওয়ামী লীগ বলছে, জনগণের রায়ে আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে দেশ থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, সামপ্রদায়িকতা ও দুর্নীতি নির্মূল করে গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে সুসংহত করবে। সমাজের সকল পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব ও ক্ষমতায়নে তারা বদ্ধপরিকর।

সেবামুখী দক্ষ জনপ্রশাসন ও জনহিতৈষী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গড়ে তুলে দুর্নীতিমুক্ত সুশাসন-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের জন্য শান্তিশৃঙ্খলা ও সমৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান করারও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ইশতেহারের শেষে বলা হয়েছে, আসুন আমরা সবাই মিলে এমন এক বাংলাদেশ গড়ে তুলি যেখানে মানুষের মৌলিক সব চাহিদা পূরণ নিশ্চিত হবে, গড়ে উঠবে সহিষ্ণু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নিশ্চিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার, যার যার ধর্ম পালনে স্বাধীনতা ও সম-অধিকার, নারীর অধিকার ও সুযোগের সমতা, তরুণদের শ্রম ও মেধার সৃজনশীল বিকাশ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, সুশাসন, শহর ও গ্রামের বৈষম্য দূরীকরণ, দূষণমুক্ত পরিবেশ। গড়ে উঠবে এক অসামপ্রদায়িক প্রগতিশীল বিজ্ঞানমনস্ক উদার গণতান্ত্রিক কল্যাণ-রাষ্ট্র।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status