প্রথম পাতা

৮ আসনে প্রার্থী নেই বিএনপির, তবে...

তৃতীয় বেঞ্চে খালেদা জিয়ার রিট খারিজ

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

তিনটি আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেতে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। তার আগে অনাস্থার আবেদনও খারিজ করেন একই আদালত। অনাস্থা আবেদন খারিজ করায় খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেন। পরে আদালত নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলমের যুক্তি শুনে রিট আবেদন সরাসরি খারিজের আদেশ দেন।  

গতকাল বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের একক তৃতীয় বেঞ্চ এ খারিজ আদেশ দেন।
আদেশে আদালত বলেন, রিট আবেদনকারী (খালেদা জিয়া) দুটি দুর্নীতির মামলায় দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। কিন্তু তার আপিল গ্রহণ হয়নি বিধায় দণ্ড বহাল রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশন তার মনোনয়ন বাতিল করেছেন। তার রিট আবেদনের কোনো আইনি ন্যায্যতা ও সারবত্তা পাওয়া যায়নি বলে রিট আবেদন তিনটি সরাসরি খারিজ করা হলো।’

আদেশের পর নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, তৃতীয় বেঞ্চের রায়ই চূড়ান্ত। আর যেহেতু রিটটি সরাসরি খারিজ করেছেন তৃতীয় বিচারক, তাই খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।

শুনানির ধার্য দিনে সকালে আদালতের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা লিখিত আবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত তাদের এই অনাস্থা আবেদন খারিজের আদেশ দিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেতে খালেদা জিয়ার করা রিটের ওপর শুনানি শুরু করতে বলেন।

এক পর্যায়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘আমরা এই কোর্টের ওপর অনাস্থা জানিয়েছি। আমাদের অনাস্থা আবেদন খারিজ হয়েছে। এ আদেশের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাবো। এরপরেও রিটের শুনানি করতে বলছেন কেন?’

এরপর আদালত খালেদা জিয়ার রিট আবেদনে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী মাহবুবে আলমকে শুনানি করতে বলেন। মাহবুবে আলম শুনানি শুরু করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এম বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার রাগীব রউফ চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, এ এইচ এম কামরুজ্জামান, সালমা সুলতানা সোমাসহ আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে বের হয়ে যান।

এরপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের বক্তব্য শুনে আদালত তিনটি রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেন।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, লিখিত অনাস্থা জানানোর পর আদালত তা খারিজ করে দিয়েছেন। এরপর আমরা বললাম যেহেতু আমরা আপনার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছি, আমরা এখানে শুনানি করবো না আমরা এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবো। তিনি আমাদের সময় দেননি, আমাদের শুনানি করতে বলেন। এই পর্যায়ে সিনিয়র আইনজীবীসহ আমরা সবাই আদালত বর্জন করে বেরিয়ে আসি। হাইকোর্ট রুলস অনুযায়ী হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা যায়। একথা জানানোর পরও তিনি আমাদের শুনানি করতে বলেন। এরপর আমরা বললাম আপনার প্রতি আমাদের আস্থা নেই। এরপর আদালত আমাদের আবেদনের ওপর অ্যাটর্নি জেনারেলকে শুনানি করতে বলেন। এ পর্যায়ে আমরা আদালত বর্জন করে বেরিয়ে আসি।  
৮ আসনে প্রার্থী নেই

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আটটি আসনে বিএনপি’র প্রার্থীদের মনোনয়ন আটকে গেছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের কারণে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। এ আসনগুলোতে বিএনপি’র কোনো প্রার্থী নেই। তবে সাতটি আসনে ২০ দলীয় জোট বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী রয়েছেন। জোটের বাইরে তারা প্রার্থী হয়েছিলেন। এই সাত আসনে বিএনপি এখন কী কৌশল নেয় সেদিকে তাকিয়ে আছেন এসব আসনের ভোটাররা। দলীয় প্রার্থী না থাকলে অন্য দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হতে পারে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।

বিএনপি’র প্রার্থী না থাকা আসনগুলো হলো ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ), ঢাকা-২০ (ধামরাই), মানিকগঞ্জ-৩ (মানিকগঞ্জ-সাটুরিয়া), বগুড়া-৩ (আদমদিঘী-দুপচাঁচিয়া), বগুড়া-৭ (গাবতলী-শাজাহানপুর), সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর), জামালপুর-১ (বকশীগঞ্জ-দেওয়ানগঞ্জ),  চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ)।

গতকাল প্রার্থিতা হারিয়েছেন সিলেট-২ আসনের তাহসিনা রুশদীর লুনা। তিনি নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী। জামালপুর-১ আসনের এম. রশীদুজ্জামান মিল্লাতের প্রার্থিতাও আটকে গেছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ তাদের মনোনয়ন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশে ‘নো অর্ডার’ করেছেন। ফলে তারা আর প্রার্থী হতে পারছেন না।

আগেরদিন আপিল বিভাগের আদেশে প্রার্থিতা হারান মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আফরোজা খান রিতা, ঢাকা-২০ আসনের ধানের শীষের তমিজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়া-৩ আসনের আবদুল মুহিত তালুকদার ও চাঁদপুর-৪ আসনের আবদুল হান্নান। ঢাকা-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাক ও বগুড়া-৭ আসনে মোরশেদ মিলটনের মনোনয়ন স্থগিত করেন হাইকোর্ট।

এরমধ্যে মানিকগঞ্জ-৩ আসনে গণফোরামের মফিজুল ইসলাম খান কামাল, সিলেট-২ আসনে খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী, জামালপুর-১ আসনে গণফোরামের সিরাজুল হক, ঢাকা-২০ আসনে জেএসডি’র এমএ মান্নান ও বগুড়া-৭ আসনে জেএসডি’র রিয়াজুল মোর্শেদ প্রার্থী আছেন। তারা দলীয়ভাবে প্রার্থী হয়েছিলেন। বগুড়া-৩ আসনে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের কোনো প্রার্থী নেই। এ আসনে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম তালুকদার, ইসলামী আন্দোলনের শাহজাহান আলী তালুকদার, জাসদের নজরুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির লিয়াকত আলী, বিএনএফ’র আবদুল কাদের জিলানী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন, আবদুল মজিদ, নজরুল ইসলাম প্রার্থী হিসেবে আছেন।

সিলেট-২ আসনে নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত স্থগিতের হাইকোর্টের আদেশে আপিল বিভাগ কোনো আদেশ দেননি। ফলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে।

তাহসিনা রুশদীর লুনার প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহহিয়া চৌধুরী নির্বাচন কমিশনের বৈধতার চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করলে গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ মনোনয়ন স্থগিতের আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করেন তাহসিনা রুশদীর লুনা। গত সোমবার চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। গতকাল আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন।

জামালপুর-১ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. রশীদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়ন বৈধ বলে নির্বাচন কমিশনের দেয়া সিদ্ধান্ত গত বৃহস্পতিবার স্থগিত করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এ স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে আপিল বিভাগেও। আপিল বিভাগ এ বিষয়ে নো অর্ডার আদেশ দিয়েছেন। ফলে তার প্রার্থিতা আটকে গেল।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ রশীদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়ন স্থগিতের আদেশ দেন। সাবেক তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদের করা রিট আবেদনে এ স্থগিতাদেশ দেয়া হয়। দুর্নীতির মামলায় সাতবছরের সাজা বহাল থাকার পরেও এম. রশীদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়ন বৈধ হওয়ায় এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন আবুল কালাম আজাদ।

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতার করা আবেদনে গত সোমবার ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতি বেঞ্চ। ফলে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ বহাল থাকে। এতে করে তার প্রার্থিতা স্থগিতই থাকে।

ঢাকা-২০ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তমিজ উদ্দিন আহমেদ মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত স্থগিতের হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগে। চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করলেও ওই স্থগিতাদেশ গত সোমবার তুলে নেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ। ফলে তমিজ উদ্দিন আহমেদ আর প্রার্থী হতে পারছেন না। তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেনজীর আহমেদ।

গত সোমবার ঢাকা-১ আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাকের মনোনয়নপত্র স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ওই আসনে বিকল্পধারার জালাল উদ্দিনের (কুলা প্রতীক) করা রিট আবেদনের শুনানি শেষে ওইদিন বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

রিট আবেদনে বলা হয় উপজেলা চেয়ারম্যানের পদত্যাগ গৃহীত হওয়ার আগেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করলেও পরে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেন। নির্বাচন কমিশনের এ সিদ্ধান্ত হাইকোর্ট স্থগিত করে দেয়।

বগুড়া-৩ আসনের আবদুল মুহিত তালুকদারের প্রার্থিতা স্থগিতের চেম্বার জজ আদালতের আদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগে। আবদুল মুহিত তালুকদার আদমদিঘী উপজেলার পরিষদের চেয়ারম্যান। চেয়ারম্যান পদে থেকে তিনি মনোনয়ন নেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থায় তার মনোনয়ন গ্রহণ করতে গত ৯ই ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। নির্বাচন কমিশনের আবেদনে হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করে দেন চেম্বার জজ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আপিল বিভাগ চেম্বার জজ আদালতের আদেশ বহাল রেখে লিভ টু আপিল করতে বলেছেন দুই প্রার্থীকে।

বগুড়া-৭ আসনে বিএনপি মনোনীত মোরশেদ মিলটনের মনোনয়নও স্থগিত হয় হাইকোর্টে। এ আদেশের বিরুদ্ধে তিনি এখনো চেম্বার জজ আদালতে যাননি।

চাঁদপুর-৪ আসনে বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নানের প্রার্থিতা স্থগিত হয় ঋণ খেলাপির অভিযোগে। প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ খেলাপি থাকায় তার মনোনয়ন স্থগিতের আদেশ আপিল বিভাগেও বহাল থাকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status