প্রথম পাতা

মোমেন-মুক্তাদিরের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ

সিলেট-১ আসনে জমে উঠেছে লড়াই

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন

মর্যাদার আসন সিলেট-১ এ কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি ড. একে আবদুল মোমেন ও খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। কেউ কারও চেয়ে কম নয়। দু’জনই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। শঙ্কায় আছেন দু’জনই। হারলেই অনেক ক্ষতি, না হারলে অনেক প্রাপ্তি। ফলে দু’জনই দিনে দিনে পাল্টাচ্ছেন নির্বাচনী কৌশল। পাশাপাশি নিজ নিজ দল ও জোট এই দুই প্রার্থীর পক্ষেও মাঠে সর্বশক্তি নিয়োগ করে নামছে।

রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি এ আসনে দু’জনের কাছে রয়েছে পারিবারিক লড়াই। বড় ভাই অর্থমন্ত্রী ড. আবুল মাল আবদুল মুহিতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এখন ড. মোমেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হারলে এই আসনে দীর্ঘ দেড় যুগের কর্তৃত্ব হারাবে তার পরিবার। এই আশঙ্কায় ড. মোমেন আরো গতি বাড়াচ্ছেন ভোটের মাঠে। ছুটছেন ভোটারের দ্বারে-দ্বারে। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গণসংযোগ চালিয়েও যাচ্ছেন। মুক্তাদিরের কাছেও এ নির্বাচনটি পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষার লড়াই। তার পিতা খন্দকার আবদুল মালিক তিন বারের এমপি ছিলেন এই আসনের। পিতার মৃত্যুর বহু বছর পর এসে রাজনীতিতে নেমে আবারো বিএনপির কর্তৃত্ব এসেছে তাদের পরিবারে। এবার পিতার আসনেই তিনি হয়েছেন প্রার্থী। ফলে মুক্তাদিরের কাছে এ নির্বাচন অনেকটা আবেগ কাজ করছে।

সিলেট-১ আসনটি সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ আসন। এ আসন হচ্ছে বিভাগীয় হেডকোয়ার্টার। পাশাপাশি প্রবাসীদের কারণে বহির্বিশ্বেও এ আসনের সুনাম রয়েছে।

এবারের নির্বাচনে ড. একে আবদুল মোমেনের পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে সক্রিয়। পাশাপাশি পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও তার সঙ্গে একাত্ম হয়েছেন। সিলেটের ক্রীড়া পরিবারসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা তার পক্ষে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তারা প্রায় প্রতিদিন নগরীর বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ নেতা, বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান, মাসুক উদ্দিন আহমদ, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আসাদ উদ্দিন আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, আজাদুর রহমান আজাদসহ নেতারা প্রায় প্রতিদিনই চালাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারণা। তবে এখনো সক্রিয় হননি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তার বলয়ের নেতাদেরও মাঠে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রচারণার সব পরিকল্পনা সাজিয়ে দিয়েছেন। শেষ মুহূর্তে তিনিও মাঠে সক্রিয় হবেন।

সবার শেষে সিলেটে প্রচারণায় নামেন বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। নিজ দল ও জোটের ভেতরে লড়াইয়ে জেতার পর তিনি সিলেট-১ আসনে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হয়েছেন। শুরুতেই নিজ দলে চ্যালেঞ্জের মুখে ছিলেন খন্দকার মুক্তাদির। সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির বর্তমান কমিটির নেতারা তাকে নিয়ে সক্রিয় হলেও বিরোধী ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিলেটে এসে তাদের দূরত্ব কমিয়ে দেয়ার পর এখন আরিফুল হক চৌধুরী মাঠে সক্রিয় হয়েছেন। পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও কাজ চালাচ্ছেন। তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারের কাছে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলার সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেকসহ সিনিয়র নেতারা। তবে এখনো সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে সক্রিয় হয়নি জামায়াতে ইসলামী। ২০শে ডিসেম্বরের পর জামায়াত সিলেটে তাদের প্রচারণায় নামবে বলে দলের নেতারা জানিয়েছেন। তবে ২৩ দলীয় জোটের অন্যান্য শরিক দলের নেতারা মুক্তাদিরের পক্ষে মাঠে ভোট প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। সিলেট সদর আসনে আগে থেকেই সুসংহত অবস্থান ছিল খন্দকার মুক্তাদিরের। সিটিতে রয়েছে তার নীরব ভোটার। এই নীরব ভোটের উপর ভরসা রেখে বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় ঘরে তোলেছিলেন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী।

এদিকে- নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে সিলেটের ভোটের মাঠে ড. মোমেন ও মুক্তাদিরের লড়াই আরো জমে উঠেছে। এখন চলছে পাল্টাপাল্টি। গতকাল নগরীর তোপখানা কাজিরবাজার এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে ড. মোমেন অভিযোগ করেন, ‘তার নির্বাচনী পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া বিরামহীনভাবে মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্বাচনী পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটানো হচ্ছে।’ তবে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, ‘বাস্তবতা বড় কঠিন। বিএনপির নেতাকর্মীরা বাড়ি নেই। প্রচারণায় নামতে পারছেন না। পুলিশ লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। ভোটের মাঠে প্রশাসন দিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমন কঠিন বাস্তবতায় আমরা নির্বাচন করছি। এবং শেষ পর্যন্ত তিনি ভোটের মাঠে থাকবেন বলেও জানান।’

ড. মোমেন ও মুক্তাদিরের  সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের  প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
সিলেট-১ আসনের মহাজোট মনোনীত প্রার্থী, সাবেক কূটনীতিক ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে বাংলাদেশস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল। মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় খন্দকার মুক্তাদিরের সঙ্গে তার বাসায় ও বিকাল ৫টায় ড. মোমেনের বাসভবন নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সে যান প্রতিনিধি দল।

এ সময় তারা দুইজনের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। ডেপুটি পলিটিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কাউন্সিলর ড. এস পিটারসনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের প্রতিনিধিদল সিলেটে অবস্থানকালে নির্বাচনের সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স) কাজী রুম্মান দস্তগীর। ড. মোমেন জানান, যুক্তরাষ্ট্র হাইকমিশনের প্রতিনিধিদল তার কাছে জানতে চেয়েছে আসন্ন নির্বাচনে তার কেমন প্রস্তুতি রয়েছে। নির্বাচনী প্রচারে জনগণের কাছে কী কী বিষয়ে তিনি গুরুত্ব দিচ্ছেন। এ ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে তারা কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সে বিষয়েও তারা জানতে চায়। প্রতিনিধিদল এসময় সিলেটের ঐতিহাসিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেছে, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর তারা একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। সিলেটের নির্বাচনী পরিবেশের প্রশংসা করে তারা বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে প্রার্থীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

সিলেটের এই পরিবেশ বাংলাদেশের সব জায়গায় বিরাজমান থাকলে নির্বাচন আরো উৎসবমুখর হবে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় পাশে রয়েছে। বিকাল ৩টায় খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তারা এসব বিষয় জানতে চান। খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এ সময় তাদের জানান, নির্বাচনে বিরোধী জোটকে দমনপীড়ন করা হচ্ছে। এতে করে তার নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে ঘুমাতে পারছে না। তিনি বলেন, দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। বিশেষ করে প্রশাসন পক্ষাবলম্বন করছে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status