প্রথম পাতা

সিজিএসের সেমিনার

নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে ইসি ব্যর্থ

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন নিয়ে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব, পুলিশ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিতের মাধ্যমে প্রার্থীদের নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশন ‘ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন তারা। নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে চলে গেছে বলেও তারা মনে করেন।

গতকাল রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে একটি মানসম্মত নির্বাচনের জন্য করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর উদ্যোগে আয়োজিত সেমিনারে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জগুলো উঠে আসে। বক্তারা নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে আন্তরিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম হয়তো সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। তবে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা

রাখে না। নির্বাচন সময়ে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে এটা রাষ্ট্রের অপচয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কার্যক্রম দেখিয়েছে, এখনই বলা যায় এই নির্বাচন কমিশন টোটালি ফেইলর (ব্যর্থ)। এটা নির্বাচন হওয়ার আগেই বলা যায়। তারা নাকি কিছু দেখে না, তারা ব্লাইন্ড। মাঠে-ঘাটে কী হচ্ছে তা তারা কিছুই দেখেন না। হাফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনে আমাদের ডাকা হয়েছিলো। আমি সেখানে বলেছিলাম-প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি নির্বাচনী বক্তব্য দিয়ে আসছেন এবং ভোট দেয়ার কথা বলে আসছেন। অন্যান্য দল তো রাস্তায় বের হতেই পারে না। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে? তখন নির্বাচন কমিশন বললো- শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদের বলার কোনো ক্ষমতা নেই। হাফিজ উদ্দিন বলেন, দেশে আইনের শাসন নেই। প্রশাসন, বিচার ব্যবস্থা ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। শিশু-কিশোররা আন্দোলনে বলেছিল ‘রাষ্ট্রের মেরামত করা প্রয়োজন’ এই বক্তব্য উল্লেখ করে এম হাফিজ উদ্দিন বলেন, সত্যিই এখন রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন।

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছেন না উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এই যে মারামারি, একজন প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, এটা বিবেচ্য না তিনি কোন্‌ দলের। তবে নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব, সেটি তারা প্রয়োগ করেন নি, করবেন বলেও মনে হয় না। মোদ্দা কথা আমরা কী দেখছি, যেটা দেখছি তা ভালো দেখছি না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হবে না। কিন্তু এখন যা হচ্ছে-তাতে মনে হচ্ছে তাহলে কেউ কি সাবোটাজ করে উনার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চাচ্ছে। এই নির্বাচন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি দলের প্রার্থী শূন্য হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতে ২৪ লাখের উপরে ব্যালট পেপার বাতিল করতে হবে। যা নির্বাচন কমিশনকে আগেই দেখা উচিত ছিল।

সাবেক  রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির বলেন, যে দলই জিতুক, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নির্বাচন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে পালন করেন নি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল আরো সক্রিয়ভাবে সবকিছু করা। শুধু বললেই হবে না, যেখানেই ঘটনা ঘটুক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

নির্বাচন কমিশনের আচরণ পক্ষপাতমূলক উল্লেখ করে সাবেক সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম বলেন, খুব আশা করেছিলাম রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সহজে দমন করা যায়। এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে কাজ করে দেখাতে হবে। এ নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কি করে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে চলে গেছে। যাদের উপর দায়িত্ব সেই নির্বাচন কমিশন শুধু বিব্রত বা দুঃখিত বলে পার পেতে পারে না।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক ড. এম ইনামুল হক বলেন, সহিংসতার মাত্রা বাড়ছেই, কমছে না। আমার ভোট নিরাপদে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসতে পারবো কিনা আশঙ্কা রয়েছে। প্রতিদিন অভিযোগের কথা শুনি, কিন্তু বাস্তব উদ্যোগ দেখছি না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, যদি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তাহলে দেশের জন্য খারাপ এবং দুর্বল সরকার ভবিষ্যতের জন্য খারাপ বয়ে আনে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী বলেন, নির্বাচন গণতন্ত্রের একটি অন্যতম অংশ। বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু নির্বাচন গণতন্ত্র বিনির্মাণে কাজ করে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে ব্যর্থ হলে দেশ অন্ধকারে চলে যাবে। সুতরাং সরকার ও  নির্বাচন কমিশনের বোধোদয় হওয়া উচিত। না হলে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করবে না।

অনুষ্ঠানে ব্যবসায়ী আবদুল হক বলেন, দেশে একটা তামাশার নির্বাচন হচ্ছে। দেশে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। সিজিএস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, ফেমা সভাপতি মুনিরা খান, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস-এর নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মনজুর হাসান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status