শেষের পাতা

বিভিন্ন স্থানে প্রচারণায় বাধা, হামলা

আফরোজা আব্বাসের প্রচারণায় ফের হামলা

স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলারজমিন ডেস্ক

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৩১ পূর্বাহ্ন

বিরোধী পক্ষের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় বাধা, তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা অব্যাহত রয়েছে। চলছে গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশের তল্লাশি অভিযান। ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলেও থেমে নেই সরকার সমর্থকদের হামলা। এসব ঘটনায়  নির্বাচন কমিশনে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলেও প্রতিকার মিলছে না। গতকালও রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে নির্বাচনী কার্যালয়। কোথাও কোথাও সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকা-৯ আসনের বিএনপি প্রার্থী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের গণসংযোগে ফের হামলা চালানোকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। হামলা হয়েছে ঢাকা-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদের গণসংযোগে। এ ছাড়া ফেনীর পরশুরামে ধানের শীষের প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে হাজী মুজিবের পুত্রের গাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে অব্যাহত হামলা-মামলা ও হুমকির ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে ইসিতে চিঠি দিয়েছে বিএনপির এই প্রার্থী। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে রাতে আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। ময়মনসিংহ-২ আসন ধানের শীষের প্রচারে বাধা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার মুরাদনগরে বিএনপি কর্মীদের ওপর হামলা ও অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুরে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীসহ ৪ জন, হবিগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের ৭ নেতাকর্মী, এবং খুলনায় আরো ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ফের আফরোজা আব্বাসের ওপর হামলা: ঢাকা-৯ আসনের বিএনপি’র প্রার্থী আফরোজা আব্বাসের গণসংযোগে ফের হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে দক্ষিণ গোড়ানের বাগানবাড়ি রোডে এ ঘটনা ঘটে। হামলার একপর্যায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুললে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। পুলিশের উপস্থিতিতেই এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সোয়া ১১টার দিকে খিলগাঁও রেলগেট অতিক্রম করে আফরোজা আব্বাস তিলপাপাড়ায় পৌঁছালে নৌকার স্লোগান দিয়ে তার পিছু নেয় ১৫ থেকে ২০ জন যুবক। বিএনপি কর্মীরা অভিযোগ করেন, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে। তারা আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে দক্ষিণ গোড়ান এলাকা পর্যন্ত আফরোজা আব্বাসের গণসংযোগের পিছু যায়। আফরোজা আব্বাস  বেশ কয়েকবার কর্মীদের শান্ত থাকতে অনুরোধ করেন। উস্কানিতে পা না দিতে বলেন তিনি। কিন্তু দক্ষিণ গোড়ান এলাকায় হঠাৎ করেই পেছন থেকে আফরোজা আব্বাস ও তার কর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে যুবকরা।

এ সময় শতাধিক যুবক হামলাকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়। তখন আফরোজা আব্বাসের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষের ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের দু’জন নেতা ও বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। সংঘর্ষের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা গণসংযোগ বন্ধ করে ফিরে যান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা খিলগাঁও চৌরাস্তার অবস্থান নেয়। জানা যায়, ঢাকা-৯ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আফরোজা আব্বাস গতকাল সকালে শাহজাহানপুরের বাসা থেকে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগে বের হন। সংঘর্ষের বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, সংঘর্ষের আগে থেকেই পুলিশ সেখানে ছিলো। অল্প সময়ে সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে প্রার্থীকে নিরাপদে পৌঁছে দিয়েছে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বলে জানান তিনি।

এদিকে, ঢাকা ৪ সংসদীয় আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আলহাজ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদের গণসংযোগে হামলা হয়েছে। গতকাল জুরাইনের নতুন রাস্তা এলাকার ঘুণ্ডিঘর এলাকায় এ হামলা হয়। এতে সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রার্থী নিজে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রচারপত্র বিলি করছিলেন সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ। এ সময় হঠাৎ করেই লুঙ্গি পরা কিছু যুবক লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে বিএনপির বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ সময় সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদের বহরের দু’টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ আসলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ অভিযোগ করেন, শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ৫১নং ওয়ার্ড কমিশনার কাজী হাবিবুর রহমান হাবুর লোকজন এই হামলা চালিয়েছে। এতে বিএনপির অন্তত ১০ কর্মী আহত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন মো. সাগর দেওয়ান ফারহান, হাজী আনোয়ার সরদার, মিজান ভাণ্ডারি, মামুন, বিল্লাল হোসেন, মো. রিপন মিয়া, মুন্না, মো. কামরুল হাসান, মো. রাসেল। এর আগে দয়াগঞ্জ পাড় এলাকা থেকে সকালে দিনের প্রচারণা শুরু করেন আলহাজ সালাহ্‌উদ্দিন আহমেদ।

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে বিএনপি প্রার্থী কেএম মুজিবুল হকের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে নৌকার সমর্থকরা। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়াও গত ২ দিনে উপজেলার পৃথক কয়েকটি স্থানে একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ বিএনপি কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। আহতদের কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিএনপি’র প্রার্থী কেএম মুজিবুল হক সাংবাদিকদের জানান, গতকাল উপজেলার টনকী বাজারে নৌকার সমর্থকদের হামলায় বিএনপির ৬-৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। বাইরা গ্রামে হামলায় আহত বিএনপির ৫ নেতাকর্মী। এ ছাড়াও নৌকার সমর্থকরা হাটাস বাজারে বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করেছে। এর আগে শ্রীকাইল গ্রামের বিএনপি নেতা মনিরুল হক জজ মিয়ার বাড়িতে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে।

এ ছাড়াও নৌকা সমর্থকদের হামলায় পূর্ব ধরই গ্রামের রামকৃষ্ণ সাহা, রতন সাহা, কাজিয়াতল গ্রামের অ্যাডভোকেট ইউসুফ, চৌমহনী এলাকায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালামের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। মুজিবুল হক অভিযোগ করেন, পুলিশের নিকট নিরাপত্তা চেয়েও আমরা নিরাপত্তা পাচ্ছি না।

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর থেকে জানান, জামায়াতের নেতা দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নূরে আলম সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের দাবি, নুরে আলম সিদ্দিকী নাশকতা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। অন্যদিকে তার পরিবার বলছে, দিনাজপুর-৬ আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলামের কাজ করছিলেন মো. নুরে আলম সিদ্দিকী। চেয়ারম্যানের ছেলে মো. গোলাম আজম বলেন, গতকাল সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে আমার বাবা উপজেলা চেয়ারম্যান নূরে আলম সিদ্দিকীকে শিমর গ্রামের নিজ বাসা থেকে সাদা পোশাকে লোকজন কালো মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যায়। অন্যদিকে একইদিন খানসামা উপজেলা বিএনপি নেতা রবিউল আলম তুহিনকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার করেছে খানসামা থানা পুলিশ। বেলা ১২টার দিকে উপজেলার পাকেরহাট থেকে গ্রেপ্তার করে খানসামা থানা পুলিশ। এ ছাড়া সোমবার রাত ১টায় নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউপির হিলিরডাঙ্গা গ্রাম হতে ধানের শীষের নির্বাচনী কর্মী মো. আবদুল আউয়াল মাস্টার ও পল্লী চিকিৎসক ডা. আতিয়ার রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন দিনাজপুর-৬ আসনের প্রার্থী মো. আনোয়ারুল ইসলাম।
স্টাফ রিপোর্টার, হবিগঞ্জ থেকে জানান, হবিগঞ্জে বিএনপি ও জামায়াতের ৭ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা ও সদর থানা পুলিশ। সোমবার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

যুবদল নেতা হারুন মিয়া, শ্রমিকদল নেতা লালনশাহ ও এনাম আহমেদকে হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকা থেকে পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় পরোয়ানা থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়। অপরদিকে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে চুনারুঘাট গাজীপুর ইউপি জামায়াতের প্রচার সম্পাদক সালেক মিয়া ও বাহুবলের বিএনপি নেতা ইউপি সদস্য হান্নান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি মো. সহিদুর রহমান জানান, তাদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ ও পুলিশ অ্যাসল্ট মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের লোকজন প্রতিদিনই বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। তাদের হামলায় এ পর্যন্ত ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্র কমিটির সচিব ও সাবেক কাউন্সিলরসহ এ পর্যন্ত ১২ জন নেতাকে কোনো মামলা ছাড়াই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ অবস্থায় এলাকায় নির্বাচনের ন্যূনতম পরিবেশ নেই। গতকাল দুপুর ১২টায় মহানগর বিএনপি কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। পরে তিনি এসব বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। সংবাদ সম্মেলনে গত কয়েকদিনে খুলনা-৩ আসনের তিন থানায় বিএনপির যে সকল নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, হামলায় যারা আহত হয়েছেন এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করা হয়েছে তার একটি তালিকা দেন বিএনপির ওই প্রার্থী।

লিখিত বক্তব্যে বিএনপি প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদিন চরম বৈরী ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন গণসংযোগে ধানের শীষের পক্ষে জনতার ঢল দেখে একদিকে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করছে ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে তিন থানায় বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। তিনি অভিযোগ করেন, সন্ত্রাসীরা আমাদের দলের মহিলা নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে, ভয়ভীতি  দেখাচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন এ বিষয়ে নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমাদের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করা হচ্ছে। প্রচারণা চালানোর সময় পোস্টার, লিফলেট সন্ত্রাসীরা নিয়ে যাচ্ছে এবং ছিঁড়ে ফেলছে। বিএনপির ওই প্রার্থী বলেন, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে বহুবার অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

ফেনী প্রতিনিধি জানান, ফেনী-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী মুন্সি রফিকুল আলম মজনুর প্রচার মাইকসহ সিএনজি অটোরিকশা ভাঙচুর করেছে দুুুুর্বৃত্তরা। এ সময় অটোরিকশা চালকসহ তিনজনকে পিটিয়ে আহত করেছে। গতকাল বিকালে এ ঘটনা ঘটে। পরশুরাম পৌর ছাত্রদলের সভাপতি নুরুল আবসার কমল জানান, বিকালে ধানের শীষের প্রচার মাইক সুবার বাজারের পশ্চিম পাশে পৌঁছলে কয়েকজন যুবক সিএনজি ও মাইক ভাঙচুর করে। এ সময় বিএনপি কর্মী নুরুন আজম হৃদয়, আবদুল মমিন ও সিএনজি ড্রাইভার সোহেলকে পিটিয়ে আহত করে। আহতদের পরশুরাম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় ফেনী-৩ আসনে সোনাগাজী উপজেলা বগাদান ইউনিয়নের তাকিয়া বাজারে গণসংযোগে গেলে ধানের শীষের প্রার্থী আকবর হোসেনের গাড়িবহরে হামলা করে সরকার দলীয়রা। এ সময় তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। একইসঙ্গে ভাঙচুর করা হয় তিনটি মাইক্রোবাস। আকবর হোসেন জানান, গণসংযোগের অংশ হিসেবে তারা ওই এলাকায় গেলে সরকার দলীয় নেতারা তার বহরে অতর্কিত হামলা করে। তাদের হামলায় দাগনভূঁইয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক ছুট্টু, বিএনপি নেতা দুলাল, আবদুল করিম, শ্রমিকদল নেতা শাহ আলমসহ অন্তত ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। একইদিন ফেনী-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ওরফে ভিপি জয়নালের প্রচার মাইক ভাঙচুর করা হয়। ফেনী সদর উপজেলার রাণীরহাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি জানান, মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনে বিএনপি প্রার্থী মুজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে হাজী মুজিবের পুত্র মুঈদ আশিক চিশতীর গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার বিকাল সোয়া ৫টার দিকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ আসার পথে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান এলাকায় একদল যুবক মুঈদ আশিক চিশতীর গাড়িতে হামলা চালায়। শ্রীমঙ্গল উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম সিদ্দীকি বলেন, তিনি গাড়িযোগে কমলগঞ্জের দিকে যাওয়ার পথে একটি সাদা প্রাইভেটকার তার গাড়িটিকে অতিক্রম করে ব্যারিকেড দেয়। এ সময় সাদা প্রাইভেট কার হতে ২-৩ জন যুবক লাঠি হাতে বেরিয়ে এসে চিশতীর ব্যবহৃত গাড়িটিতে আঘাত করতে থাকে। চিশতীর গাড়িচালক অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে কমলগঞ্জে পৌঁছান।

হাজী মুজিব বলেন, একদিকে প্রশাসনের গণগ্রেপ্তার, অপরদিকে হামলা ও হুমকি-ধামকি। এভাবে চলতে থাকলে কীভাবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে? কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনার কথা আমি শুনিনি। এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি।

নিরাপত্তা চেয়ে ইসিতে চিঠি: এদিকে নিজের ও কর্মী-সমর্থকদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে চিঠি পাঠিয়েছেন মুজিবুর রহমান চৌধুরী হাজী মুজিব। সোমবার সকালে পাঠানো এই চিঠিতে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচার চালাতে গিয়ে আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তার নির্বাচনী বিভিন্ন সভায় হামলা ও ভাঙচুর করা হচ্ছে, নেতাকর্মীদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে। তার নির্বাচনী সভার আশপাশে দা, লাঠি, লোহার রড ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে।

ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার মধ্যরাতে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের মাটিকাটা বাসস্ট্যান্ডের পার্টি অফিসে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবদুল মতিন সরকার এ হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করেছেন। তবে, ভূঞাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা হামলার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, আতঙ্কে আামাদের লোকজন ঠিকমতো প্রচারণাই চালাতে পারছে না। আর হামলা চালানোর সাহস পাবে কোথা থেকে। আমি হলফ করে বলতে পারি বিএনপির কোনো নেতাকর্মী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নেই। এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, ওই এলাকার চেয়ারম্যান আবদুল মতিন সরকার বিষয়টি জানালে রাতেই পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তদন্ত করে এ ঘটনার জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি।

ফুলপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহ-২ (ফুলপুর-তারাকান্দা) আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা, নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে। এ অভিযোগে গতকাল দুপুরে ফুলপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শাহ্‌ শহীদ সারোয়ার। বিএনপি প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রচারণার প্রথম মিছিলেই আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা চালিয়ে আমাদের অসংখ্য নেতাকর্মীকে আহত করেছে। উল্টো আমাদেরই ১২শ’ অজ্ঞাত ও ২৯০ জনের নাম উল্লেখ করে ফুলপুর থানায় একটি মিথ্যা মামলা করেছে। অপরদিকে, তারাকান্দায় আমাদের অফিস ভাঙচুর করে উল্টো আমাদেরই ৭৫ জনের নামে মিথ্যা মামলা করেছে। পুলিশ এ পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তারসহ বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে নির্বাচনী এলাকায় অসংখ্য নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। যা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশকে বিঘ্নিত করেছে। অথচ আমাদের সত্য মামলা নেয়া হচ্ছে না। দুইদিন আগে তারাকান্দার ঢাকুয়ায় আমার প্রচারণা সভায় পুলিশ হানা দিয়েছে। মাঝিয়ালিতে অফিস ভাঙচুরসহ প্রচারণার মাইক ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status