দেশ বিদেশ

বাবার আসনটি উদ্ধার করা হলো না রিতার

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জ-৩ আসনে ধানের শীষ নেই। কাঁদছে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। তাদের প্রিয় নেতা বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতার প্রার্থিতা বাতিলের খবরে এই কান্না। সোমবার উচ্চ আদালতের সর্বশেষ রায়ের অপেক্ষার দিকে তাকিয়েছিলেন মানিকগঞ্জের বিএনপির সকল স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। দুপুরে রায়ে আফরোজা খান রিতার প্রার্থিতা বাতিলের খবরে নেতাকর্মীদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। বিএনপির ঘাঁটিতে ধানের শীষ নেই- এটা তারা মানতে পারছেন না।
সাবেক মন্ত্রী ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মরহুম হারুনার রশিদ খান মুন্নুকন্যা বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতাকে জেলার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানিকগঞ্জ-৩ (সাটুরিয়া-সদর) আসন থেকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। ২০০১ সালে এই আসন থেকে তার বাবা হারুনার রশিদ খান মুন্নু বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তবে ২০০৮ সালে আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের দখলে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাবার সেই হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে মেয়ে আফরোজা খান রিতার ওপর দায়িত্ব দেয় বিএনপি। বাবার মতো যার জনপ্রিয়তা রয়েছে মানিকগঞ্জ জেলাজুড়েই। বিএনপির দুঃসময়ের কাণ্ডারি হিসেবে এখন পর্যন্ত জেলা বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে তার বাবা  হারুনার রশিদ খান মুন্নু যেমন দলের হেভিওয়েট ও জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন ঠিক এবারের নির্বাচনে আফরোজা খান রিতাও বিএনপির  হেভিওয়েট ও জনপ্রিয় প্রার্থী বলেই যত টেনশন ছিল আওয়ামী লীগের। তাই আফরোজা খান রিতাকে আইনের মারপ্যাঁচে ফেলে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের বিজয়ের পথ সুনিশ্চিত করলো বলেই বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ। আফরোজা খান রিতার ইচ্ছে ছিল তার বাবার হারানো এই আসনটি পুনরুদ্ধার করে বিএনপির চেয়ারপারসনের হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু তা আর হলো না। মানিকগঞ্জে জেলা নারী নেত্রী ফরহানা ইয়াসমিন আতিকা বলেন, আফরোজা খান রিতা হচ্ছেন আমাদের মানিকগঞ্জের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী। তাকে এভাবে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়াটাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না, খুব কষ্ট হচ্ছে। আসলে আমরা সরকারের রোষানলের শিকার। যাদের দ্বারা সরকার ভীত তাদেরই বাদ করে দিচ্ছেন। আর মানিকগঞ্জ-৩ আসনটিতে আমাদের প্রার্থী আফরোজা খান রিতার জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। ভোটের মাঠে কোনোভাবেই তাকে কেউ ঠেকাতে পারতো না ভেবেই তার বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র । জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জামিলুর রশিদ খান বলেন, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ে জেলা রিটার্নিং অফিসার আফরোজা খান রিতাকে বৈধতা দিয়েছেন। তারপরও সোনালী ব্যাংক এবং স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন নির্বাচন কমিশনে  অভিযোগ করলেও নির্বাচন কমিশন তা খারিজ করে দেয়। এরপর আমরা প্রতীক পেয়ে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছিলাম। মাঠ গুছিয়ে ফেলেছি। সেই মুহূর্তে এমন সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মানতে পারছি না। আসলে আইনের মারপ্যাঁচে আমাদের প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আইনের শাসন থাকলে এটা হতো না। আর যদি বাতিলই হতো তাহলে নির্বাচন কমিশনই বাতিল করে দিতে পারতো। আসলে আওয়ামী লীগ চায় একতরফা নির্বাচন। সেদিকেই তারা যাচ্ছে। বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা ও জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মোখসেদুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আইনি মারপ্যাঁচে আমাদের জনপ্রিয় প্রার্থী আফরোজা খান রিতার প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেল। এ কারণে আমরা অর্থাৎ বিএনপি অত্যন্ত মর্মাহত। কারণ, রিতা এখানে প্রার্থী থাকলে বিএনপির বিজয় কেউ ঠেকাতে পারতো না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জ জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌসের সম্মেলন কক্ষে মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইয়ের দিন আফরোজা খান রিতার বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ করে সোনালী ব্যাংক। কিন্তু রিতার আইনজীবী এ বিষয়ে হাইকোর্টের একটি স্থগিতাদেশের রায়ের কপি জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে তুলে দিলে আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্রটি বৈধ ঘোষণা করা হয়। পরে এই বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সোনালী ব্যাংক ও মানিকগঞ্জ-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন রিট করলেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করায় নির্বাচনে তার আর বাধা থাকে না। এরপর সে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেন।
জেলা রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কমিশন আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করলেও এর বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংক আবারো রিট করে। রিটের শুনানি নিয়ে ১২ই ডিসেম্বর বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পরে বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খান রিতা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। আপিলের শুনানির দিন ধার্য ছিল সোমবার (১৭ই ডিসেম্বর)। কিন্তু আফরোজা খান রিতার আবেদনের ওপর কোনো আদেশ না দিয়ে স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিম কোর্ট। যার কারণে আফরোজা খান রিতা আর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারছেন না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status