বিশ্বজমিন

পুলিশের কাছে জিম্মি সিয়েরালিওনের যৌনকর্মীরা

মানবজমিন ডেস্ক

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৫:৫৮ পূর্বাহ্ন

মারিয়াতুর মা যখন মারা যান তখন তার বয়স ১৫ বছর। এরপর সে সিয়েরালিওনের ফ্রিটাউন শহরে রাস্তায় থাকতে শুরু করে। সেখান থেকেই সে একদিন পুরোপুরি যৌনকর্মী হয়ে ওঠে। এর কিছুদিনের মধ্যে ঘুষ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তাকে প্রায় ৬ মাস জেলে কাটাতে হয়।

এখন মারিয়াতুর বয়স ২২ বছর। সে তার এই কষ্টকর অধ্যায়ের শেষ দেখতে চায়। সরকারের কাছে তার চাওয়া, সিয়েরালিওনের যৌনকর্মীদের যেন প্রয়োজনীয় সমর্থন দেয়া হয়। তাদেরকে কলঙ্কিত মনে করে সিয়েরালিওনের অধিবাসীরা। একইসঙ্গে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো দ্বারাও নির্যাতনে শিকার হন যৌনকর্মীরা। আন্তর্জাতিক যৌনকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধ দিবসে গার্ডিয়ানের তৈরি এক প্রামাণ্যচিত্রতে এসব কথা বলেন মারিয়াতু। সেখানে বেশ কয়েকজন যৌনকর্মীর সাক্ষাৎকার তুলে ধরা হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ১২ বছর বয়সী যৌনকর্মীও ছিল। সেখানে, সিয়েরালিওনের পুলিশ কিভাবে যৌনকর্মীদেরকে টাকা ও যৌন চাহিদা পূরণের জন্য ব্যবহার করে সেসব উঠে এসেছে। ফ্রিটাউনে প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫ থেকে ১৫ জন যৌনকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জেল এড়াতে ঘুষ প্রদান করতে বাধ্য হয়।

তবে যৌনকর্মীদের আরো নানা ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ফরেনসিক টেকনিশিয়ান সিন্নেহ কামারা জানিয়েছেন, প্রতি মাসে তিনি ১০ জনেরও বেশ যৌনকর্মীকে সমাহিত করেন। তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৩ থেকে ২৬ এর মধ্যে। এইচআইভি, ব্রঙ্কাইটিস থেকে শুরু করে সামান্য ঠান্ডা ও নিউমোনিয়াতেও তারা মারা যায়। শুধু তাদের স্বাধীনতা নয়, জীবনও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

মারিয়াতুর বয়স যখন ১৫ বছর তখন প্রথমবারের মত পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ তার কাছে ত্রিশ হাজার লিওন (৩ হাজার টাকা) দাবি করে। এটি তার পুরো মাসের আয়ের সমান। তার কাছে টাকা না থাকায় তাকে ৬ আটক করা হয় এবং পরে তাকে মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়। সে এখন একজন দর্জি হতে চায়। সিয়েরালিওনে মারিয়াতুর মত আরো প্রায় ২৬ হাজার যৌনকর্মী রয়েছে। যারা শুধু দারিদ্রতার জন্য এ পেশায় আসতে বাধ্য হয়েছে। মারিয়াতু এখন একেকজনের কাছ থেকে এক ডলার ( ৮৫ টাকা) করে পেয়ে থাকে। এভাবে সে এক রাতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ ডলার আয় করে থাকে। ১৭ বছর বয়সে তাকে আবারো পুলিশ আটক করে। আদালতে হাজির করার পূর্বে সে প্রায় ২ সপ্তাহ কারাগারে আটক থাকে। মারিয়াতু জানায়, অসংখ্যবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং যৌনকর্মের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে প্রত্যেকবারই তাদেরকে ঘুষ প্রদানের মাধ্যমে ছারা পেতে চেয়েছে। গার্ডিয়ানকে সে জানায়, প্রয়োজনে আমি জেলে যাব কিন্তু পুলিশের সঙ্গে এক রাত কাটাতে পারব না।

সিয়েরা লিওনে পতিতাবৃত্তি অবৈধ। কিন্তু সিয়েরালিওন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল জানিয়েছেন, সে তার চাকরি জীবনে কখনো কোনো নারীকে পতিতাবৃত্তির অপরাধে গ্রেপ্তার হতে দেখেননি। সবসময়ই তাদেরকে অন্য অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। এমনকি কোনো ক্ষেত্রেই এর সঙ্গে যুক্ত পুরুষটিকে গ্রেপ্তার করা হয় না। এ বিষয়ে সিয়েরালিওন পুলিশের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে, তারা কোনো কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status