প্রথম পাতা

একটি কালো গাড়ি ফলো করছে: বগুড়ায় কনকচাঁপা

‘অবরুদ্ধ’ এলাকাছাড়া পাঁচ প্রার্থী

বাংলারজমিন ডেস্ক

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনের বাকি আর মাত্র ১২ দিন। এখনো প্রচারণায় নামতেই পারেন নি ঐক্যফ্রন্টের অনেক প্রার্থী। এদের মধ্যে কেউ সরকারদলীয় বাহিনী ও ক্যাডার দ্বারা নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কাউকে নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতেই দেয়া হচ্ছে না। আবার কেউ রয়েছেন, গুমের আশঙ্কায়। কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন তারা। ঘর থেকে না বেরুতে এবং প্রচারণায় না যেতে সরকারদলীয় প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। শুধু প্রার্থী নয়, তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাতে গেলে নেতাকর্মীদেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে। কোনো কোনো জায়গায় এ অভিযোগ খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। ঝিনাইদহে-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী আবদুল মজিদ নৌকা সমর্থকদের কারণে নিজ বাসায় অবরুদ্ধ। সরকারদলীয়রা প্রচারণায় নামতে দিচ্ছে না চট্টগ্রাম-১৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজামকে। নিজের নির্বাচনী এলাকায় ঢুকতে পারছেন না সিরাজগঞ্জ-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা।

তিনি বলছেন, একটি কালো গাড়ি তাকে সব সময় অনুসরণ করছে। এ অবস্থায় এলাকা ছেড়ে তিনি বগুড়ায় অবস্থান করছেন। ভোলা-৩ আসনের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব. হাফিজ উদ্দিন আহমেদ অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। ভোলা-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম অভিযোগ করেছেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা তার বাসা ঘিরে তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। ‘গৃহবন্দি’ অবস্থায় রয়েছেন চাঁদপুর-২ আসনের প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিন। এছাড়া সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের প্রচারণায় বাধা দেয়ার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তার চলছে। এরমধ্যে যশোরে বিএনপি প্রার্থীর বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুরসহ ৩১টি নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ফেনী-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী আকবরের গাড়িবহরে হামলা, মারধর, গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন আহত ১৫ জন। মামলা হয়েছে সখীপুরে ৫৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। এ উপজেলার কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়া সৈয়দপুরে ১ জন, পাবনায় ১০ জন, তারাকান্দায় ২ জন, মহাদেবপুরে ২ জন, রংপুরে ২ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, ঝিনাইদহ-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুুল মজিদ নিজ বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি নৌকা সমর্থকদের হামলা ও হুমকির কারণে মাঠে নামতে পারছেন না। ফলে গণসংযোগ তো দূরের কথা, নির্বাচনী পোস্টার, ব্যানার ও হ্যান্ডবিল পর্যন্ত তিনি পাঠাতে পারছেন না কোনো এলাকায়। যারাই তার বাসায় আসছেন, তারাই মারধরের শিকার হচ্ছেন। মজিদ অভিযোগ করেন, যে মুহূর্তে গোটা জাতি বিজয় দিবস পালন করছে। সেই মুহূর্তে আমি নিজ বাসায় বন্দি। কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আমি শহর, ইউনিয়ন, পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে যেতে পারছি না। আমার গণসংযোগের খবর পেয়েই নৌকার সমর্থকরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকছে।

এ অবস্থায় গ্রাম থেকে আমার শহরের বাসায় নেতাকর্মীরা পোস্টার, ব্যানার ও হ্যান্ডবিল নিতে আসছেন। তাদেরও মারধর করা হচ্ছে। শহরের পবহাটী গ্রামের সৃজনী মোড়, উজির আলী স্কুলের সামনে ও কলাবাগান পাড়ায় সশস্ত্র প্রহরা বসিয়েছে চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। তারা গত ৩-৪ দিনে অন্তত ১৫-২০ জন নেতাকর্মীকে মারধর করেছে। আবদুল মজিদ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তা ও জেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগপত্রে এসব কথা উল্লেখ করেছেন। এদিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনে কালীগঞ্জ উপজেলার চাপরাইল বাজারে বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ গণসংযোগ শেষে ফেরার পর বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রোববার রাতে এই হামলায় ৫ জন আহত হন। প্রতিপক্ষরা চাপরাইল বাজারের গোস্ত ব্যবসায়ী ফুল মিয়ার ৭০ হাজার টাকা লুট করে। তার দোকানে আগুন ধরিয়ে দেয়। গোমরাইল বাজারের নাজমুলকে মারধর করে বলে ফিরোজ এক লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন। তবে কালীগঞ্জ থানার ওসি ইউনুস আলী এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

লালমোহন (ভোলা) প্রতিনিধি জানান, মানুষ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারবে না বলে আশঙ্কা করেছেন ভোলা-৩ আসনের বিএনপির প্রার্থী মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ (অব.) বীরবিক্রম। গতকাল সন্ধ্যায় লালমোহনের বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে হাফিজ জানান, তিনি অবরুদ্ধ, প্রচারে বের হতে পারছেন না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী ছাড়া এই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন বসিয়ে দেয়া হয়েছে সরকারদলীয় পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করে দেয়ার জন্য। তবুও জনগণ যদি ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে ধানের শীষ জয়লাভ করবে। ভোলা-৩ আসনে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ২শ’ সন্ত্রাসী বিভিন্ন এলাকা থেকে নিয়ে এসেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় আসতে বাধা দেয়া নিয়ে হাফিজ বলেন, আমি গত ১২ তারিখে লঞ্চে উঠবো, ব্যাগ নিয়ে রওয়ানা হয়েছি। গুলিস্তান এসে শুনলাম লঞ্চ ভাঙচুর করে নদীর মাঝে নিয়ে গেছে।

২ দিন পর আবার পুলিশ প্রটোকলে এলাকায় আসলাম। আমাকে ৪০ হাজার নেতাকর্মী, সমর্থক লঞ্চঘাট থেকে অভ্যর্থনা জানায়। আমাকে আনার জন্য গাড়িটিও ভেঙে দিয়েছে। উল্টো পুলিশ গাড়ির ড্রাইভারসহ আমার দুই ভাতিজাকে থানায় নিয়ে যায়। এলাকায় আসার পর কর্মীরা বাড়ি ফেরার সময় পথের মধ্যে কোপানো হয়।
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে জানান, চট্টগ্রাম-১৩ (কর্ণফুলী-আনোয়ারা) আসনে বিএনপি প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজামকে প্রচারণায় নামতে দিচ্ছে না নৌকার সমর্থকরা। নেতাকর্মীদের দিয়ে একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তার লোকজনকে। প্রচারণা শুরুর ৬ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও মাঠে না নামা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজামের একান্ত সহকারী আখতার নবী এই অভিযোগ করেন। আখতার নবী বলেন, সরওয়ার জামাল নিজাম আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। তার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণা না চালাতে তাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের অনুসারী নেতাকর্মীরা। ফলে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন। যোগাযোগ করছেন ভোটারদের সঙ্গে। তবে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে আনোয়ারা-কর্ণফুলীতে যে পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে তাতে এ আসনের ভোটাররা অন্য কোনো প্রার্থীকে গ্রহণ করবে না। বিএনপির প্রার্থী সরওয়ার জামাল নিজাম তা বুঝতে পেরেছেন। গত ১০ বছরে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাই নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় নামতে ভয় পাচ্ছেন তিনি। তাকে কেউ হুমকি-ধমকি দিচ্ছে না, বরং মাঠে আমরা খুঁজছি তাকে।
স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, ‘একটি কালোগাড়ি সব সময় ফলো করছে। আমাকে গুম করা হবে। এমনকি মেরেও ফেলতে পারে’। এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেন সিরাজগঞ্জ-১ আসনের বিএনপি প্রার্থী সংগীত তারকা শিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় প্রাণের ভয়ে ঢুকতে না পেরে বগুড়ায় এসে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সোমবার দুপুরে তিনি বগুড়ার একটি হোটেলে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের কাজ পরিচালনার জন্য আমার এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছি। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সেই বাড়ির মালিককে হুমকি দেয়া হচ্ছে। বলা হয়েছে, যদি তাকে রাখা হয়, তাহলে ওই বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হবে। ১০ই ডিসেম্বর থেকে সব প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করলেও তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে এখন পর্যন্ত মাঠে নামতে পারেননি। এমনকি তিনিসহ নেতা কর্মীদের জীবননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তার এলাকার আত্মীয়স্বজন ও কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে যেন কেউ তাকে থাকতে না দেয় এবং গণসংযোগে বের না হয়। তারপরও ১৬ই ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে ঢাকা থেকে নির্বাচনী এলাকা কাজীপুর যেতে চাইলে তার গাড়িকে কালো রঙের একটি জিপ ফলো করে। সিরাজগঞ্জে ঢোকার মুখে তিনি তার গাড়িটি থামিয়ে দিলে অনুসরণকারী জিপটিও তার গাড়ির কাছে এসে থামে। ফলে তিনি তার ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়িটি ঘুরিয়ে অন্যদিকে নিয়ে যান। তার সঙ্গে থাকা কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোহাম্মদ নাসিমের কর্মীরা বিএনপি কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে ধানের শীষের পক্ষে মাঠে না নামার জন্য। তাদের বলা হচ্ছে দল যেটাই করো নৌকায় ভোট দিতে হবে। কাজিপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সেলিম রেজা বলেন, আমরা নির্বাচনে প্রচারের জন্য তৃণমূলের কর্মীদের নিয়ে একটা মিটিং করি। সেই মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা সরাসরি তাদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না।
মতলব উত্তর (চাঁদপুর) প্রতিনিধি জানান, চাঁদপুর-২ (মতলব উত্তর-দক্ষিণ আসনের বিএনপি প্রার্থী ড. জালাল উদ্দিন বলেছেন, ‘আমি গৃহবন্দি’। গতকাল দুপরে মতলব উত্তর উপজেলার ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়নের লুধুয়ায় তার নিজ বাড়িতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এহসানুল হক ফটিক ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু। সংবাদ সম্মেলনে ড. জালাল উদ্দিন বলেন, ১৪ই ডিসেম্বর বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত করার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে এলে আমার নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলা হয়। এতে কমপক্ষে ৩০ নেতাকর্মী আহত হন। পুলিশ ১১ জনকে আটক করে। বর্তমানে পুলিশি নিরাপত্তার নামে আমি নিজ বাড়িতেই গৃহবন্দি। আমার বাড়ির চারদিকে পুলিশ, দলীয় কোনো নেতাকর্মীকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। পুলিশি আতঙ্কের কারণে নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলেন, পুলিশ যদি আমাকে এই বন্দিদশা থেকে বের হতে না দেয়, তবে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিতে বাধ্য হবো। এক্ষেত্রে সকল দায়-দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status